আড্ডার সঙ্গী পিঠা

প্রকাশ | ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
তানভীর আহমেদ পিঠা বাঙালি সংস্কৃতির এক অন্যতম উপাদান। পিঠা ছাড়া এ দেশের মানুষের খাবারের টেবিল একসময় অপূর্ণ থাকে। তখন গ্রামাঞ্চলে সারাবছরই ঘরে ঘরে পিঠা তৈরির উৎসব লেগে থাকত। সময়ের পরিক্রমায় সেটা কমে এলেও পিঠা এ দেশ থেকে হারিয়ে যায়নি। বর্তমান সময়ে সাধারণত শীত ঋতুর কথা বললে আমাদের চোখের সামনে পিঠার প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। গ্রাম বাংলার শীতের পিঠার স্মৃতি মনের মধ্যে বেশ ভালোভাবেই দোলা দিয়ে যায়। যদিও মুখরোচক এই খাদ্যদ্রব্যটির আধিক্য শীতের সময়ই বেশি থাকে তবুও বিভিন্ন বিয়ে, উৎসব ও অনুষ্ঠানে পিঠার বেশ ব্যবহার রয়েছে। বর্তমানে শহুরে ব্যস্ত, ইট-পাথরের খাঁচায় আটকে পড়া জীবনে পিঠা তৈরি বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবুও শীতের সময় এলে শহরের বিভিন্ন অলিতে-গলিতে, মোড়ে পিঠাঘর বানিয়ে শহরবাসীকে পিঠা খাওয়ার সুযোগ করে দেন গ্রামাঞ্চল থেকে উঠে আসা নিম্ন আয়ের মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা। পিঠার এই বৃত্তান্তের মধ্যে আলাদাভাবে জড়িয়ে আছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। ব্যতিক্রমধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচয় পাওয়া প্রতিষ্ঠানটিতে পিঠাকেন্দ্রিক গল্পটা একটু অন্যরকম। প্রতিষ্ঠার দুই দশকে কখনো ক্যাম্পাসে পিঠাঘরের দেখা মেলেনি। প্রতিবছর ক্যাম্পাসে নানান সময়ে ঘটা করে পিঠা উৎসব হয়েছে। কিন্তু সারাবছর শিক্ষার্থীদের জন্য পিঠার ব্যবস্থাস্বরূপ তেমন কিছুর দেখা মেলেনি। তবে সময়ের পরিক্রমায় পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করেছে। বছরখানেক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট ইয়ার্ডের পাশেই স্থাপন হয়েছে ছোট্ট একটি টিনের পিঠাঘর, যেটাকে কেন্দ্র করেই শিক্ষার্থীদের আলাদা জগৎ তৈরি হয়েছে। ক্যাম্পাসে অবসর সময় মিললেই শিক্ষার্থীরা পিঠার টানে ছুটে আসে এই স্থানটিতে। তাদের প্রতিদিনের আড্ডার খোশগল্পের এক অনন্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে এটি। ক্যাম্পাসের অন্য সব স্পট থেকে বর্তমানে পিঠাঘরেই বেশি ভিড় লেগে থাকে। সারা বছরই এখানে ক্যাম্পাস চলাকালে প্রতিদিন হরেক রকমের পিঠা তৈরি হয়। এসব পিঠার মধ্যে ভাপা পিঠা, ভেজিটেবল ঝাল পিঠা, চাপড়ি পিঠা, চাঁদ পাকন পিঠা, ফুলঝুরি পিঠা, মাংস পিঠা, চিতই পিঠা, ডিম চিতই পিঠা ইত্যাদি উলেস্নখযোগ্য। পিঠা খাওয়ার জন্য রয়েছে হরেক রকমের ভর্তার মধ্যে শুঁটকি ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা, ডাল ভর্তা, সরিষা ভর্তা ইত্যাদি। এছাড়া সময়ভেদে পাওয়া যায় বিভিন্ন মৌসুমী পিঠা। হাতের নাগালেই পিঠার এত সমারোহ শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রামবাংলার শীতের পিঠার সেই পুরনো আমেজ ফিরিয়ে এনেছে। বৃষ্টিভেজা ক্যাম্পাসে হরেক রকমের পিঠা খাওয়ায় ব্যস্ত ছিল একদল শিক্ষার্থী। তাদের একজন ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমাল সায়েন্সেস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জালাল বলেন, 'ব্যস্ত জীবনে মুখরোচক এই খাবারটি শহর তো দূরের কথা, গ্রামেই এখন সেভাবে তৈরি হয় না। শহরের যান্ত্রিক জীবনে এটা পাওয়া তো আরও কঠিন ব্যাপার। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম একটা পিঠাঘর আমাদের প্রতিদিন পিঠা খাওয়ার যে সুযোগ করে দিয়েছে, সেটা সত্যিই আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। পিঠাঘরটি শুধু মজার মজার মুখরোচক খাবারই উপহার দিচ্ছে না বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে আড্ডা ও খোশগল্পের অন্যরকম স্থান তৈরি করে দিয়েছে।' পিঠা খেতে খেতে কথা হয় পিঠাওয়ালী খালার সঙ্গে। তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা আমার সন্তানের মতোই। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যত্নসহকারে মজার মজার পিঠা বানিয়ে তাদের খাওয়াতে। ওদের পিঠা বানিয়ে খাওয়াতে খুব ভালো লাগে এবং এর মাধ্যমে আমার সংসার চলে। সবকিছু মিলিয়ে মোটামুটি ভালোই চলছে।' প্রতিদিন এখানে পিঠা খাওয়ার জন্য বিভিন্ন বিভাগের বহু শিক্ষার্থীর দেখা মেলে এবং এটা তাদের মধ্যে মেলবন্ধন সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা এই বন্ধন জীবনের সব ক্ষেত্রে বজায় থাকবে, এগিয়ে যাবে দেশ, এগিয়ে যাবে পৃথিবী, বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।