সৃজনশীল শিক্ষা ও ফলাফলে দৃষ্টান্ত সাউথ পয়েন্ট কলেজ

প্রকাশ | ৩১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

য় নজরুল ইসলাম
শুধু ফলাফলনির্ভর মুখস্ত বিদ্যা নয়, সৃজনশীল শিক্ষাদানের প্রত্যয় নিয়ে ২০০২ সালে মাত্র ২০০ ছাত্রছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে এখন প্রায় ১২০০০ ছাত্রছাত্রী পড়ালেখা করছে রাজধানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে। বাংলা, ইংরেজি ভার্সন ও ইংরেজি মাধ্যমের এই প্রতিষ্ঠানটির মালিবাগ, বনানী, বারিধারা, মিরপুর, উত্তরা ও ধোলাই পাড়ে সদ্য প্রতিষ্ঠিত শাখাসহ মোট ৬টি শাখা রয়েছে। যেখানে পেস্ন গ্রম্নপ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক শিক্ষার্থীর আনুপাতিক হার মেইনটেন করাসহ সৃজনশীল আন্তরিক পাঠদান, বিশেষ করে ক্লাস শেষে তাৎক্ষণিক নিরীক্ষণ পদ্ধতিতে কে পড়া বুঝল না, কার কি দুর্বলতা রয়েছে তা শনাক্ত হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট টিউটরের শরণাপন্ন হতে হয় না। বারিধারায় ৮ বিঘা জমিতে তৈরি করা হয়েছে এর সুরম্য ক্যাম্পাস। ভবনে চলন্ত সিঁড়ি ও একাধিক বিশাল লিফট ও জেনারেটর সুবিধাসহ কি নেই! এককথায় বিরাট মাঠ, স্বাস্থ্যসম্মত ক্যান্টিন, স্পেসিয়াস অডিটোরিয়াম, হাইস্পিড ইন্টারনেট সুবিধাসহ 'ই লাইব্রেরি ও ল্যাবসমেত একটি আধুনিক পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস এটি। অনুরুপ মালিবাগেও ৬ বিঘা জমিতে তৈরি করা হচ্ছে স্থায়ী অত্যাধুনিক ক্যাম্পাস। উত্তরায়ও নেয়া হয়েছে ৭ বিঘা জমি। এভাবে সব শাখার জন্য হবে আন্তর্জাতিক মানের স্থায়ী ক্যাম্পাস। যার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। বিশিষ্ট শিল্পপতি ও উদ্যোক্তা প্রকৌশলী এমএ রশিদের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হামিদা আলীর তত্ত্বাবধানে প্রথমে অভিজাত এলাকা গুলশানে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দুই উদ্যোক্তা ও শিক্ষাবিদেরই দেশের শিক্ষা উন্নয়নে রয়েছে অসামান্য অবদান তথা স্বীকৃতি। অধ্যক্ষ হামিদা আলী বর্ণাঢ্য ৫ দশকের শিক্ষকতা জীবনে ভিকারুননিসা নূন কলেজকে শূন্য থেকে দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করেন। সর্বশেষ তিনি অত্যন্ত সীমিত সময়ের ব্যবধানে সাউথ পয়েন্টকে যে সাফল্য তথা উচ্চতায় উন্নীত করেছেন তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দৃষ্টান্তই বলতে হয়। প্রকৌশলী এমএ রশিদ বলেন, ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানে সর্বোচ্চসংখ্যক জিপিএ-৫ বা তথাকথিত গোল্ডেন জিপিএ নয়, প্রতিদিনের শ্রেণিপাঠ শিক্ষক গল্পের ছলে, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বুঝিয়ে পড়াবেন এবং তার ওপর শিক্ষার্থীরাই তাৎক্ষণিক প্রশ্ন ও উত্তর তৈরি করবে' আক্ষরিক অর্থে এটাকেই প্রকৃত শিক্ষা তথা সৃজনশীল শিক্ষা। আমাদের শিক্ষকদের এই নান্দনিক শিক্ষায়ই অভ্যস্ত করা হয়েছে। তাতে সে যে ফলাফলই করুক! এজন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ক্লাস নেয়াসহ উপযুক্ত শিক্ষক, যার সার্বিকব্যবস্থা আমরা করেছি। তিনি বলেন, আমি শুরু করেছি হামিদা আলীর মতো কালজয়ী আদর্শ শিক্ষকদের নিয়ে। যার নেতৃত্বে একঝাঁক দক্ষ শিক্ষকমন্ডলী নিপুণ হাতে গড়ে তুলছেন ১২০০০ মা-বাবা-পরিবারের স্বপ্ন সারথী-সাউথ পয়েন্টকে। ইঞ্জিনিয়ার রশিদের দর্শন অনুযায়ী সৃজনশীল শিক্ষাদানের ফলে সত্যিকার মেধাবী তৈরিসহ প্রত্যাশিত ফলাফলও লাভ করছে এই প্রতিষ্ঠান। সাউথ পয়েন্টের ইংরেজি মাধ্যম শাখার শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই 'ও' এবং 'এ' লেভেল পরীক্ষায় কান্ট্রি হাইয়েস্ট রেজাল্ট অর্জনের জন্য 'আউটস্ট্যান্ডিং ক্যামব্রিজ লার্নার অ্যাওয়ার্ড ও ডেইলি স্টার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। সর্বশেষ ২০১৯ 'ও' লেভেল পরীক্ষায়ও সাত বিষয়ের ৬টিতেই এ' ও একটিতে এ' গ্রেড এবং 'এ' লেভেল পরীক্ষায় ৫ বিষয়ের মধ্যে ৩টিতেই এ' ও ২টিতে এ' গ্রেড অর্জনসহ অভূতপূর্ব ফলাফল করে। আর এই ফলাফলের জন্য ও' এবং এ' লেভেলে যথাক্রমে ৭৯% ও ৫৭% শিক্ষার্থী ডেইলি স্টার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। এটি সম্ভব হয়েছে ক্যামব্রিজ, ইউকে পাঠ্যক্রমকে তাদের আদল ও আয়োজনে পড়ানোর কারণেই। মুখস্ত বিদ্যার সম্পূর্ণ পরিপন্থি এই সৃজনশীল শিক্ষাটাকে বাস্তবতার নিরিখে উপযুক্ত শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে যত্নসহকারে পড়ানো হয়। এখানে আছে মাল্টিমিডিয়া ও ডিজিটাল কনটেন্টে শিক্ষাদানের মতো যুগোপযোগী ব্যবস্থা। শুধু একাডেমিক ফলাফলই নয়, জাতীয় দিবসে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির প্রয়াস চলে নিরন্তর। সাউথ পয়েন্ট বনানী শাখা জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের চঅঝঈঐ (ঝপযড়ড়ষ:চধৎঃহবৎং ভড়ৎ :যব ঋঁঃঁৎব) নামক একটি প্রোগ্রামের আওতায় জার্মান ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যার অধীনে শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর বৃত্তি সুবিধায় জার্মানে উচ্চশিক্ষার সুযোগসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় জার্মান সফর করছে তাদের অর্থায়নেই। কেবল জার্মানিতেই নয়, ২০১৩-তে সাউথ পয়েন্ট বনানীর একদল শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের নাসা সফর করে। সাউথ পয়েন্টের অন্যান্য শাখার শিক্ষার্থীরাও উপযুক্ত একাডেমিক শিক্ষা তথা প্রত্যাশিত ফলাফলের পাশাপাশি সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমেও জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে অর্জন করছে অভূতপূর্ব সাফল্য। প্রতিষ্ঠানটির স্পোর্টস ক্লাব, সায়েন্স ক্লাব, ডিবেট ক্লাব ও কালচারাল ফোরাম এসব আয়োজন করে থাকে। যেমন- ২০১৮'র নভেম্বরে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত 'এশিয়ান ক্লাব কাপ থ্রোবল' প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানারআপ হয় এদের শিক্ষার্থীরা। একই বছর শ্রীলংকার কলম্বতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক জুনিয়র দাবা প্রতিযোগিতায় পঞ্চম স্থান অর্জন করে। বিজয় দিবস-২০১৮ দাবা প্রতিযোগিতায় জাতীয়পর্যায়ে দ্বিতীয় রানারআপ এবং একই বছর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে 'বিজয় দিবস কারাতে প্রতিযোগিতায় ৫টি স্বর্ণ, ৫টি রৌপ্য ও ৭টি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে সাউথ পয়েন্ট স্পোর্টস ক্লাব। সম্প্রতিও এজাতীয় বিভিন্ন অর্জন তাদের ঝুলিতে যোগ হয়েছে। সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা মাধ্যম ও ভার্সনের পাশের হার প্রতিবছরই শতভাগ। সেই সঙ্গে বছরব্যাপী বৃদ্ধি পাচ্ছে জিপিএ ফাইভ বা এ পস্নাসের সংখ্যাও। জিপিএ ফাইভের হার প্রতিবছরই ৮০ থেকে ৯০%। গত বছর গুলশান থানায় ৮৫ জন বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৫ জনই সাউথ পয়েন্টের। এর মধ্যে ট্যালেন্টপুলে পেয়েছে ১৮ জন। এ বছরও তারা ভালো করেছে। উলেস্নখ্য, ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি এবং ওই বছরেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় নবম স্থান লাভ করে। সাউথ পয়েন্টের ৬টি শাখায়ই রয়েছে অত্যন্ত যোগ্য ও দক্ষতাসম্পন্ন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষকমন্ডলীরা। বনানী শাখার অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন মো. মতিউর রহমান। যিনি ক্যাডেট কলেজসহ দেশের কিছু নামিদামি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে দীর্ঘদিন পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। মতিউর রহমান অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থিত স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় টঞঝ (টহরাবৎংরঃু ড়ভ ঞবপযহড়ষড়মু, ঝুফহবু) থেকে শিক্ষকতার ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বনানীর মতো বারিধারা, মালিবাগ, মিরপুর, উত্তরা ও ধোলাইপাড়ে রয়েছেন যথাক্রমে অধ্যক্ষ উইং কমান্ডার এএম আমজাদ হোসেন (অব.), কর্নেল মো. শামসুল আলম পিএসসি (অব.), লে. কর্নেল শেখ আমজাদ হোসেন (অব.) ও ক্যাপ্টেন গোলাম মো. সবুর (অব.), বিএন। ধোলাইপাড় শাখার অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। এখানে সর্বমোট ৯০০ মেধাবী শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ ১২০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন। সাউথ পয়েন্ট কর্তৃপক্ষ তাদের শিক্ষাকার্যক্রমকে অনলাইনেও শেয়ার করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, যাতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের লেকচার তথা পুরো ক্লাসটি শ্রেণির বাইরেও যে কোনো ডিভাইসে আবার পেতে পারে। একই সঙ্গে তারা পাঠ্যপুস্তকের ডিজিটাল কনটেন্ট তথা ভার্সন নিয়েও কাজ করছে। চলছে অনলাইন নিজস্ব একটি পস্নাটফর্ম তথা সোশ্যাল মিডিয়া তৈরির কাজ। যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজের সেরা রচনা, নিজস্ব পদ্ধতিতে সমাধান করা ম্যাথ ও পরীক্ষায় ভালো করার নিজস্ব পদ্ধতি বা কৌশল তুলে ধরবে, থাকবে নিজস্ব কৃতিত্বের সংবাদসহ সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম, স্পোর্টস ও স্কুলভিত্তিক সব কার্যক্রমের সংবাদ তথা নোটিশও।