দেখা হবে বন্ধু

প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অনিক আহমেদ 'বন্ধু মানে সুখ-দুঃখের এক মজবুত ভরসা, চরম বন্ধুর পথে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা। মানুষের জীবনে প্রতিটি ধাপে ধাপে শত সহস্র বন্ধুর দেখা মেলে। কেউবা স্কুল লাইফের বন্ধু, কেউবা কলেজ লাইফের, কেউবা ভার্সিটি লাইফের, কেউবা আবার কর্মজীবনের বন্ধু। এর বাইরেও অনেক বন্ধু থাকে তবে লাইফে যেসব বন্ধুদের মাধ্যমে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা মনের মধ্যে আত্মস্থ হয়, তারা হচ্ছে স্কুল লাইফের বন্ধু। এদের কখনো মন থেকে ভোলা যায় না, তবে জীবন সংগ্রামের ব্যস্ততার কারণে হয়তো নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখা হয়ে ওঠে না। কিন্তু দিনশেষে এরাই গেঁথে থাকে অন্তরে, বাস্তবে সচরাচর দেখা না মিললেও স্মৃতির পাতায় আজীবন রয়ে যায় অমলিন।' আবেগমাখা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. সামিউল বাশার। বর্তমানে পড়ালেখা যশোরে হলেও পরিচয় দিতে ভালোবাসেন নিজের এসএসসি ব্যাচ-২০১৪ তথা স্বাপ্নিক'১৪ এর একজন গর্বিত সদস্য হিসেবে। মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রাধানগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঈদের পরেরদিন অনুষ্ঠিত হয় এসএসসি ব্যাচ-২০১৪ (স্বাপ্নিক'১৪)-এর পুনর্মিলনী ও শিক্ষক সংবর্ধনা-২০১৯। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপিত এই আয়োজন ছিল দেখার মতো। আয়োজক ব্যাচের দীর্ঘ এক বছরের সামগ্রিক চিন্তা, কঠোর পরিশ্রম সফলতার মুখ দেখে এই দিনটিতে। স্কুলজীবনের হারিয়ে যাওয়া সব বন্ধুদের একসঙ্গে একটি দিনের জন্য ফিরে পাওয়ার এই আয়োজনে ব্যাচের প্রতিটা সদস্যের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। অনুষ্ঠানের আগের যাবতীয় কাজ সম্পাদনে বিভিন্ন দৌড়াদৌড়ির মধ্যে ছিল এক অকল্পনীয় আনন্দ। সবার পরিশ্রম আর প্রতীক্ষার প্রহর শেষে যখন স্বপ্নের সেই দিনটি এলো, তখন যেন সবার মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে গেল। অনুষ্ঠানের আগের দিন অর্থাৎ ঈদের দিন গভীর রাত পর্যন্ত যারা হাড়ভাঙা খাটুনির মধ্য দিয়ে গেছে, অনুষ্ঠানের দিন দেখা গেছে তারাই সবার আগে হাজির। যে দিনটার জন্য হাজারো কষ্ট, বাধা অতিক্রম করা হলো সেই দিনটার কোনো মুহূর্ত যেন মিস না হয় সেজন্যই হয়তো ক্লান্তিময়, ঘুমবিহীন রজনী শেষ হতেই কাকডাকা ভোরে প্রাণের স্কুলে স্বাপ্নিক'১৪ এর একদল স্বাপ্নিকরা হাজির। এই ভোরটা অন্যদিনের ভোরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং অন্যরকম আনন্দের যেটা উপভোগকারী ছাড়া কেউ বুঝবে না। একে একে আসতে শুরু করল ব্যাচের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব শিক্ষার্থীর বাঁধভাঙা উলস্নাসে ফেটে পড়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। ঈদের ছুটিকে বিসর্জন দিয়ে সাবেক শিক্ষার্থীদের ডাকে সাড়া দিয়ে আমন্ত্রিত সাবেক ও বর্তমান শিক্ষকমন্ডলী, সম্মানিত অতিথিরা আসার পরে শুরু হয় অনুষ্ঠান। সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে দুটি ভাগে পুরো আয়োজনকে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্বে ব্যাচের কেক কাটা, শিক্ষক সংবর্ধনা ও স্মৃতিচারণ। দুপুরের পর দ্বিতীয় পর্বে ছিল জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সবকিছু বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়। আমন্ত্রিত অতিথিরা ও শিক্ষকমন্ডলীর দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য অত্যন্ত মনোযোগসহকারে শুনতে থাকে বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। একসময় ক্লাসে এসব শিক্ষকের লেকচার শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে ওঠা প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে আজ তাদের বক্তব্য যেন বড়ই শ্রম্নতিমধুর লাগছিল। তারা যেন খুব করে চাইছিল, এক সময়ের বিরক্তিময় এসব মুখ থেকে আরও কিছু শ্রম্নতিমধুর বাণী শুনতে। কেননা এক সময়ের পরিচিত এসব মুখগুলোর দেখা যে আর সচরাচর মিলবে না। তাই তো বিদায়বেলায় প্রতিটি শিক্ষাগুরুর বক্তব্য শুনে নিজেদের অজান্তেই চোখের জল গড়িয়ে পড়ছিল। প্রতিটি শিক্ষার্থী আজ মনের গভীর থেকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে এসব শিক্ষাগুরুর কাছে তাদের সব ভুলত্রম্নটির জন্য ক্ষমার চাহনীতে তাকিয়ে ছিল। সাবেক শিক্ষার্থীদের থেকে পাওয়া সম্মান ও মূল্যায়নে আবেগাপস্নুত হয়ে উপস্থিতি সব শিক্ষকরাও যেন চোখ থেকে দুয়েক ফোঁটা জল বিসর্জন দিচ্ছিল। স্বাপ্নিক'১৪ এর পক্ষ থেকে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে ব্যাচের অন্যতম সেরা মেধাবী মুখ, বর্তমানে যশোর মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত খুশি খাতুন বলেন, 'স্কুলজীবন ত্যাগ করার পর বুঝতে পেরেছি কি ছেড়ে গেছি। এখনো প্রতিনিয়ত মনে হয় প্রাণের স্কুলে ফিরে এসে আবার ক্লাস করি, থেকে যায় সারাজীবনের জন্য। স্কুলের সব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এখানকার প্রতি ইঞ্চি মাটিকে প্রতিনিয়ত খুব মিস করি। আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে অংশগ্রহণের জন্য সম্মানিত শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতার ভাষা জানা নেই। বলতে দ্বিধা নেই, স্কুলের সময়টাই ছিল আমাদের জীবনের স্বর্ণালি সময়।' অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে স্বাপ্নিক'১৪ এর সদস্যদের মনোরঞ্জন পরিবেশনায় জমে ওঠে পুরো আয়োজন। নাচ, গান, কৌতুক, নাটক কিছুরই যেন কমতি ছিল না। স্বাপ্নিক'১৪ এর গর্বিত সদস্য মাহফুজ, হাবিব, লিমনের একক ও দ্বৈত গান, অনিন্দিতার রবীন্দ্রসংগীত ও নাচ, তরিকুলের কবিতা এবং মৃতু্যঞ্জয়, সৌরভ, অভিজিৎ, মিঠুনের নাচ সবই উপভোগ্য ছিল। দর্শকসারিতে বসে আমন্ত্রিত অতিথিরা ও শিক্ষকমন্ডলী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। উপস্থিত দর্শকের করতালি আর নাচ, গানের তালে তালে সবার মিলিত সাড়াদানে সারাক্ষণ মুখরিত ছিল আয়োজন। অনুষ্ঠানে নতুনত্ব আনতে আয়োজন করা হয়েছিল ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক পৃথক বিভিন্ন মজাদায়ক গেমসের। এর আগে ব্যাচের সব শিক্ষার্থীরা টি-শার্ট পরিধান, টি-শার্টে মার্কারের আঁকিবুঁকি, একে অন্যকে আবির মাখিয়ে দেয়ার প্রতিযোগিতায় নামে। অনেকেই বেসুরো কণ্ঠে উরাধুরা গান, নাচে ব্যস্ত ছিল। অনেক আনন্দ ও কষ্টের এই দিনটাকে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখতে পুরো আয়োজনের সব স্থিরচিত্র ধারণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাওয়া শাওনের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই সঙ্গে শুধু ব্যাচের স্বার্থে প্রচন্ড জ্বর ও গলাব্যথা নিয়েও সোহেল, মাহফুজের ছোটাছুটি; অনুষ্ঠানের পূর্বে যাবতীয় কাজ সম্পাদনে সামিউল, মলিনা, মিতু, বিকাশ, সাদিয়া, মামুন, জাকারিয়া, সৌরভ, পলক সবাই যথেষ্ট আন্তরিক ছিল। এই আয়োজনে প্রত্যক্ষভাবে না থেকেই দুজন প্রবাসী বন্ধু আব্দুর রহমান ও জিহাদ সর্বাত্মক সহযোগিতা করে গেছে। এভাবেই সবার সম্মিলিত প্রয়াসে একটি সফল আয়োজনের পরিসমাপ্তি ঘটে।