ছুটি শেষে মুখরিত ক্যাম্পাস

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থীর জন্য জীবন মানেই ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন আর পড়াশোনার চাপে ক্লান্ত জীবন। যতক্ষণ ক্যাম্পাসে থাকে ততক্ষণ যেন দম ফেলার হুঁশ থাকে না। ক্লান্তিময় এ জীবনে যখন ঈদের মতো অত্যন্ত আনন্দের, উৎসবের, খুশির একটা মুহূর্ত আসে, সঙ্গে মোটামুটি বিরতির একটা ছুটি, তখন সেটা কতটা প্রশান্তির আর সুখের তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

তানভীর আহম্মেদ
মুখরিত ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থীর জন্য জীবন মানেই ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন আর পড়াশোনার চাপে ক্লান্ত জীবন। যতক্ষণ ক্যাম্পাসে থাকে ততক্ষণ যেন দম ফেলার হুঁশ থাকে না। ক্লান্তিময় এ জীবনে যখন ঈদের মতো অত্যন্ত আনন্দের, উৎসবের, খুশির একটা মুহূর্ত আসে, সঙ্গে মোটামুটি বিরতির একটা ছুটি, তখন সেটা কতটা প্রশান্তির আর সুখের তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ঈদের ছুটি পাওয়া মাত্রই শিক্ষার্থীরা ফিরে যায় পুরনো স্মৃতিঘেরা প্রিয়জন আর শৈশবে। শুরু হয় নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা, প্রিয়জনদের সঙ্গে মধুর সেই সুখের মুহূর্তের জন্য ছুটে চলা। একটা সময় কাঙ্ক্ষিত সেই মুহূর্তের দেখা মেলে, আবারও পুরনো সেই মুহূর্তের মতো কিছু সুন্দর মুহূর্ত আর মধুর সময় ফিরে আসে। শহরের ইট, পাথরের দেয়াল থেকে বেরিয়ে এসে গ্রামের সবুজ, শ্যামল ভূমিতে জীবনটা বড়ই উপভোগ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু সময়ের চাকায় সেটা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। একটা সময় ছুটি শেষ হয়ে যায়। সব আবেগ, অনুভূতি, মায়া বিসর্জন দিয়ে আবার ফিরে যেতে হয় বাস্তবতার সেই ব্যস্ত গন্তব্যে। বাংলাদেশের অন্যান্য ক্যাম্পাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঠিক এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে। জাতীয় শোক দিবস, সাপ্তাহিক ছুটিসহ মোট দশ দিনের বিরতি শেষে অবশেষে শিক্ষাজীবনের ব্যস্ত দিনগুলোতে ফেরত আসতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের এই ফিরে আসা ক্যাম্পাসকে করে তুলেছে এক মোহনীয় অনন্য সুন্দর স্থানে। দশদিন জনমানবশূন্য ক্যাম্পাস এতদিন পরে আবার নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা যে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণশক্তি, এখানকার শিক্ষার্থীদের প্রাণচঞ্চল পদচারণায় মুখর ক্যাম্পাস সেটা বেশ ভালোভাবেই প্রমাণ করে দেয়। ৩৪ একরের মায়াভরা সবুজ ক্যাম্পাসে হাজারো শিক্ষার্থীর ভিড় আবার ফিরিয়ে নিয়েছে সে প্রাণশক্তি। ঈদের পর প্রথম দুয়েকদিন সাধারণত পুরোদমে ক্লাস শুরু হয় না। কারণ, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের টিকেট বিড়ম্বনার কারণে আসতে একটু দেরি হয়। যার কারণে এ সময়টাতে বিভিন্ন ধরনের আড্ডা-গল্পেই মেতে থাকে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাদামতলা, ট্রান্সপোর্ট ইয়ার্ড, ক্যান্টিন, মিডিয়া কর্নার, পিঠাঘর, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ হয়ে ওঠে বিনোদনের এক জীবন্ত উৎস। ক্যাম্পাসে এসেই একে অন্যের সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময়, কোলাকুলি করা, খোঁজখবর নেয়া, ঈদের ছুটি কাটানোর গল্প শেয়ার করা ইত্যাদির মাধ্যমে ক্যাম্পাসের প্রথম দিন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের বাদামতলায় আড্ডারত ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমাল সাইন্সেস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয় জানান, 'প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করার জন্য বাড়িতে ছুটে যাই, তখন অনেক ভালো সময় কাটে কিন্তু তাদের ছেড়ে আসার সময় খুব কষ্ট হয়। তারপরও ছেড়ে আসতে হয় কিন্তু যখন ক্যাম্পাসে আসি তখন আর সেই কষ্ট থাকে না। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর ঘোরাঘুরি করে সময় কাটানোর মাধ্যমে সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। সত্যিই ক্যাম্পাস আর বন্ধুরা ভালো থাকার এক অনন্য উপাদান।' সাংবাদিক দেখে এগিয়ে এসে তারই আরেক সহপাঠী জাহিদ বলেন, 'সত্যিই বাড়ি ছেড়ে আসতে অনেক কষ্ট হয় কিন্তু ক্যাম্পাসে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটানোর আনন্দ একরকম আর ঈদে বাড়িতে পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ছুটি কাটানোর মজা আরেক রকম। একটার সঙ্গে আরেকটার তুলনা হয় না।' ট্রান্সপোর্ট ইয়ার্ডের পাশে পিঠাঘরে পিঠা খেতে খেতে আড্ডায় ব্যস্ত ছিল বিভিন্ন বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী। ঈদের শেষে ক্যাম্পাসে ফেরা নিয়ে তারা জানান, বাড়ি থেকে আসার সময় মনে হচ্ছিল এরকমভাবে আনন্দ আর উপভোগ্য সময় কাটাতে হলে আবারও লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু ক্যাম্পাসে আসার পর সেটা মনে হচ্ছে না। এখানে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা, খোশগল্প, ঘোরাঘুরি, খেলাধুলা আর প্রাণচঞ্চল ক্যাম্পাস সব খারাপলাগা ভুলিয়ে দেয়।' একে একে ক্যাম্পাসের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঘুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা হয়। তাদের সবারই একই অভিমত, ক্যাম্পাস শুধু পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকার স্থান নয় বরং পড়াশোনার পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, খেলাধুলা, ঘোরাঘুরি ক্যাম্পাসে আমাদের ভালো থাকার এক অনন্য পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। ক্যাম্পাসের এরকম প্রাণচঞ্চল পরিবেশ নিয়ে খুব উচ্ছ্বসিত।