রা জ শা হী বি শ্ব বি দ্যা ল য়

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র পাঠচক্রের প্রাণবন্ত আড্ডা

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আরাফাত শাহীন সোমবার বিকালটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যপ্রেমী শিক্ষার্থীদের জন্য একটা দারুণ সময় হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ এদিন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠচক্র অনুষ্ঠিত হয়। ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে নিজস্ব চত্বরে প্রতি সোমবার বসে সাহিত্যপ্রেমীদের এক মিলনমেলা এবং জমজমাট আড্ডা। বিশেষ কোনো সমস্যা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এই নিয়মের কখনো ব্যত্যয় হয় না। তাই প্রতি সোমবার পাঠচক্র চত্বরে একটা সাজ সাজ রব পড়ে যায়। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র দেশের বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের পাঠচক্র চালিয়ে থাকে। এই তথ্যটা হয়তো অনেকেই জানেন না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নিয়মিত চলে আসছে পাঠচক্র। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলা পাঠচক্রের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠচক্র সাফল্যের দিক দিয়ে সামনের সারিতে রয়েছে। দ্বিতীয়বর্ষের প্রথমদিকে আমি পাঠচক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আজ পর্যন্ত একসঙ্গে পথ চলছি। সোমবারের বিকালের ওই সময়টুকু যে আমার কাছে কতটা ভালো লাগে তা বলে বোঝানোর সাধ্য নেই। প্রতি সপ্তাহে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে পাঠচক্রের সদস্যদের জন্য নতুন নতুন বই পাঠানো হয়। আপনারা জানেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই মানেই হলো বাছাই করা বাংলা এবং বিশ্বসাহিত্যের সেরা সেরা বই। এই সেরা বইগুলো যখন আমাদের হাতে এসে পৌঁছে তখন আমরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠি। সব সদস্যের হাতে বই পৌঁছানো এবং সেগুলো গুছিয়ে এক জায়গায় করা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ হলেও আমাদের সমন্বয়কারী নাফিস অলি হাসিমুখে এই কাজটি করে চলেছেন গত দুই বছর ধরে। বেশিরভাগ সময় তার কাজের সঙ্গী হই আমি। দুই বন্ধু মিলে পাঠচক্রের বহু কাজ সমাধা করেছি। এখানে একটা বিষয় জানা প্রয়োজন। কেন্দ্র থেকে সব সদস্যের জন্য একই বই পাঠানো হয়। আমরা সবাই পরের সপ্তাহে সেই বইটা পড়ে আসি। তারপর শুরু হয় তুমুল আলোচনা। এই আলোচনা কখনো রূপ নেয় বিতর্কে। আমরা সবাই উপভোগ করি একটা জমজমাট আড্ডা। কখনো কখনো পাঠচক্রের সদস্যরা মিলে বাংলা ভাষার ভালো কোনো সিনেমা দেখতে লেগে যাই। কিংবা ইচ্ছা হলে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসি। আমরা এটাকে আমাদের কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করে থাকি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পাঠচক্র থেকে 'বহতা' নামে একটি ম্যাগাজিন বের করে থাকি নিয়মিত। এখন পর্যন্ত বহতার ১১টা সংখ্যা বের হয়েছে। নতুন সংখ্যার জন্য কাজ চলছে। আমার সৌভাগ্য হলো, গত সংখ্যায় বহতা'র সম্পাদনা বোর্ডেও আমিও ছিলাম। এক নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে সেখানে। পাঠচক্রের সদস্যদের লেখা দিয়ে সাজানো বহতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিনগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। সদস্যদের মধ্যে সাহিত্যচেতনা জাগ্রত করার জন্য বহতা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া যে কোনো শিক্ষার্থী অতি সহজে পাঠচক্রের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য কোনো বিশেষ শর্ত নেই; শুধু একজন পাঠক হলেই চলে। আমাদের পাঠচক্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যের পাঠক তৈরিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। আমি পাঠচক্রকে হৃদয়ের গভীর থেকে ভালোবেসে ফেলেছি। তাই ছুটির দিনগুলোতে বাড়িতে বসে থাকতে একদমই মন টানে না। মনে হয়, ছুটে যাই পাঠচক্র চত্বরে। আর যতদিন ক্যাম্পাসে আছি, পাঠচক্রের এই তুমুল এবং প্রাণবন্ত আড্ডায় কাটিয়ে দিতে চাই।