হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রত্যাশা প্রাপ্তির গল্পগুলো

১৯৭৬ সালে 'এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট' নামে প্রতিষ্ঠিত হয় উত্তরবঙ্গের একমাত্র কৃষি সম্পর্কিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর কৃষি কলেজে উন্নীত হয়ে ১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঘোষিত হয় পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) ২০ বছরে পা দিল। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য ও অগ্রগতি এবং তাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন মো. সোয়াদুজ্জামান সোয়াদ

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শুভ জন্মদিন, প্রাণের হাবিপ্রবি। ২০০০ সালে হাবিপ্রবির ১ম ব্যাচ; ২০০১ সালে ২য় ব্যাচের ভর্তি করা হয় কিন্তু ক্ষমতার পটপরিবর্তনে হাবিপ্রবির ললাটে কালো মেঘ জমে ওঠে। পরে আমাদের (১ম এবং ২য় ব্যাচের) তীব্র আন্দোলনের মুখে ২০০১ সালের জুলাই মাসে হাবিপ্রবি আইন মহান সংসদে গৃহীত হয় এবং ২০০২ সালের এপ্রিল মাসের ৮ তারিখ প্রজ্ঞাপন জারি এবং ১৬ এপ্রিল প্রফেসর ডক্টর মোশাররফ হোসাইন মিঞা স্যারকে প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগদানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ যাত্রা শুরু হয়। কৃষি বিষয়ে ১২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির মধ্য দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়, যেখানে বর্তমান বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গুণগত শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে এগিয়ে চলছে। সময়ের পরিক্রমায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯টি ব্যাচ ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে ৯টি অনুষদের অধীন ২৩টি স্নাতক ডিগি এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট অনুষদের অধীন ৩২টি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করে। এ সাফল্য আমাদের ক্যম্পাসের; সব হাবিপ্রবিয়ানদের। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সামনের দিনগুলোতে এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে এবং শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে হাবিপ্রবি। কাবিদ আহমেদ মানিক ২য় ব্যাচ, হাবিপ্রবি, দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পার হওয়ার পরও হাবিপ্রবির ঝুলিতে খুব বেশি অর্জন না হলেও যা হয়েছে তা মোটেই কম নয়। এখানে গবেষণা করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অ্যাডভান্সড অ্যানিমাল রিচার্স ফার্ম। এই ফার্মে গবেষণার জন্য রয়েছে উঠপাখি, খরগোস, বন মোরগ, টার্কি, ময়ূর, আঁচিল মুরগি। এসব প্রাণীর জেনেটিক্সসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করা হয় এখানে। 'হাজী' ও 'দানেশ' নামে দুটো উন্নত জাতের কুমড়ার আবিষ্কারক এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই গবেষক। 'টু স্টেজ গ্রাইন ড্রায়ার' নামক শস্য শুকানোর যন্ত্রের আবিষ্কারও এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই হয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এক্সট্রা কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন, হাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি এইচএসটিইউ ডিবেটিং ক্লাব, ক্যারিয়ার ক্লাব, রেডক্রিসেন্ট, দানেশ বস্নাড ব্যাংক, কালের কণ্ঠ শুভসংঘ, প্রথম আলো বন্ধুসভা, রোর্টাযাক্ট ক্লাব। সেঁজুতি সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, অর্ক ও টার্বো ক্রেটার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম পস্নাটফর্ম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এত কিছু প্রাপ্তির মধ্যেও মনে হচ্ছে কি যেন অনুপস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ গঠিত হয়নি। নেই কোনো অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম, ল্যাব সংকট, শিক্ষকের ঘাটতি, আবাসন, পরিবহন ও লাইব্রেরির আসন সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা বিদ্যমান। তবে আশার কথা হলো, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব সমস্যা নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে। এসব উদ্ভূত সমস্যা কাটিয়ে উন্নত মানের গ্র্যাজুয়েট বের করা এবং গবেষণার মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণ করাই হোক এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ব্রত, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে এটাই আমার প্রত্যাশা। মো. মাসুদ রানা এমএসইন ফিজিওলোজি সময়টা ছিল ২০১৫-এর শেষের দিকে! যখন ভর্তিযুদ্ধে প্রায় হেরেই যাচ্ছিলাম। শুধু আলস্নাহ্‌?র কাছে চাচ্ছিলাম, আলস্নাহ্‌, যেখানেই দাও ক্যাম্পাসটা যেন সুন্দর হয়। হয়তো আলস্নাহ্‌? আমার কথাটা শুনেছিলেন। সুযোগ করে দিলেন পছন্দের বিষয় নিয়ে হাবিপ্রবিতে পড়ার। ক্যাম্পাসটা খুব বড় না হলেও শিক্ষার্থীদের স্বপ্নগুলো ঠিকই আকাশছোঁয়া। সেগুলোকে ধরার আপ্রাণ চেষ্টায় অনেকেই সফল হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। খেলার মাঠ থেকে গবেষণার ক্ষেত্রে, দেশ থেকে বিদেশে আধিপত্য বিস্তার করছে শিক্ষার্থীরা। ভার্সিটি এগিয়ে চলছে সফলতার সোপান বেয়ে। শিটনির্ভর পড়াশোনার গন্ডি এড়িয়ে আসতে পারলে তা হবে আরও দুরন্ত। তবে এত সফলতার মধ্যেও অপ্রাপ্তি যেন লেগেই আছে। আবাসন সমস্যা সবার শীর্ষে। আছে সেশনজট, নেই কোনো ভাস্কর্য, হলগুলোও রিডিং রুমবিহীন। চিকিৎসাসেবাসহ গবেষণার ক্ষেত্রগুলো আরও বেশি প্রসারিত হোক, মাদকমুক্ত সুন্দর ক্যাম্পাস গড়ে উঠুক, সেই কামনায়! সব শেষে, জন্মদিনের শুভেচ্ছা নিও প্রিয় ক্যাম্পাস; জন্মদিনের শুভেচ্ছা নিও আমার দ্বিতীয় বাড়ি। সাবিরা মাফরুজ কৃষি অনুষদ লেভেল-৪ সেমিস্টার-১ সবুজ-শ্যামলে ঘেরা নিরিবিলি পরিবেশের আমাদের হাবিপ্রবির শেকড় কৃষি কলেজ হওয়ার কল্যাণে কৃষিভিত্তিক বিষয়গুলোর মান রয়েছে সবার উপরে। সেই সঙ্গে অন্যান্য অনুষদও পিছিয়ে নেই। গুণগত শিক্ষা ও সাফল্যে দুর্দান্তগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা এবং আলো ছড়াচ্ছে দেশ-বিদেশে। প্রায় ২০০ বিদেশি শিক্ষার্থীর এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা-গবেষণা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত তৎপরতায় সারা দেশে এক উজ্জ্বলতর অবস্থান ধরে রয়েছে। তবে শ্রেণিকক্ষ সংকট, শিক্ষক সংকট এবং ফলিত শাখাগুলোর জন্য ল্যাবরেটরি সংকট এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। একটা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম তীর্থভূমি। কিন্তু হাবিপ্রবি সংস্কৃতিচর্চায় একটু পিছিয়ে আছে বলেই মনে করি। এর কারণ, প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা, বাংলা কিংবা লোকসাহিত্য সম্পৃক্ত তেমন কোনো বিষয় (ইংরেজি ও সমাজবিজ্ঞান ছাড়া) খোলা হয়নি। দ্বিতীয়ত, সংস্কৃতিচর্চার উপকরণ যেমন- মুক্ত মঞ্চ, নির্ধারিত ভবন/কক্ষ নেই। অন্যদিকে আটটি আবাসিক হল থাকলেও শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে সেটা অপ্রতুল। অদূর ভবিষ্যতে ১৩৫ একর আয়তনের এ ক্যাম্পাস সুপরিকল্পিতভাবে আরও বেশি নান্দনিক ও পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস হিসেবে পরিণত হবে বলে আমরা আশাবাদী। সর্বোপরি, আগামীর হাবিপ্রবিকে শিক্ষা ও গবেষণা, সামজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান থেকে আরও বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসেবে দেখতে চাই। রাজীব আহমেদ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং লেভেল-৪ সেমিস্টার-১