চ ট্ট গ্রা ম বি শ্ব বি দ্যা ল য়

আশার আলো ছড়াতে আলোর শাটল

সমাজসেবামূলক কাজের পাশাপাশি সংগঠনটি সমাজের নানা অন্যায় প্রতিরোধে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে থাকে। কিছুদিন আগে দেশব্যাপী ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনি যখন মহামারী আকার ধারণ করেছিল, তখন আলোর শাটলের কর্মীরা এই গুজবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য মানুষের মধ্যে প্রচারণাও চালায়

প্রকাশ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আলোর শাটলের কর্মীরা
সাইফুল ইসলাম জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে পৃথিবীর জনবহুল অনেক দেশ থেকে এগিয়ে আছি আমরা। অভাবের অভাব নেই আমাদের এই দেশে। অভাব নেই জনসংখ্যারও। জনসংখ্যার অভাব না থাকলেও আমাদের এই দেশে অভাব রয়েছে সৎ মানুষের। চোখ থাকতেও অন্ধ যারা, কান থাকতেও বধির, মুখ থাকতেও আজ বোবা হয়ে গিয়েছি আমরা। আমাদের বিবেকের মৃতুু্য ঘটছে অনেক আগেই। আমাদের বুদ্ধির লোপ পেয়েছে। আর মনুষ্যত্ব আমাদের ছেড়ে আস্তানা পেতেছে অজানা কোনো এক জাদুঘরে। যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকে অমানবিকতা, মনুষ্যত্বহীনতা, আর অবিচারে ছেঁয়ে গেছে এই সমাজটা। এত প্রতিকূলতার ভিড়ে সমাজের মানুষের মাঝে আশার আলো ছড়িয়ে দিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল সৎ, দক্ষ, দেশপ্রেমিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন কিছু তরুণ-তরুণীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে সমাজসেবামূলক সংগঠন আলোর শাটল। এইবারে রমজানের ঈদে কিছু পথশিশুর মাঝে ঈদের নতুন জামা বিতরণ করে শুরু হয় এই সংগঠনটির কার্যক্রম। কিছু উদ্যমী ও সাহসী তরুণ এই কাজ শুরু করলে বেশ সাড়া পায় তারা। এখন পর্যন্ত তাদের এই কাজের সঙ্গে একাগ্রতা পোষণ করছে প্রায় সাড়ে তিনশত সদস্য। যাদের বেশিরভাগই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বৃক্ষরোপণ, রক্তদান, কোরআন ইভেন্ট, উৎসবভিত্তিক ইভেন্ট, বন্যার্তদের সহায়তা, ঈদবস্ত্র, শীতবস্ত্র, বিতরণ এবং ২০ জন সুবিধাবঞ্চিতের দায়িত্ব গ্রহণসহ নানা ইভেন্ট কাজ করে যাচ্ছে আলোর শাটল। সর্বশেষ ৫ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজন যখন পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিল তখনই নিজস্ব অর্থায়নে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে পুরো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে প্রায় ১ হাজার গাছের চারা লাগিয়েছে সংগঠনটির কর্মীরা। ক্যাম্পাস ছাড়াও সংগঠনটি চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এতিমখানায় সাধ্য অনুযায়ী এতিমদের নানা ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে। সমাজসেবামূলক কাজের পাশাপাশি সংগঠনটি সমাজের নানা অন্যায় প্রতিরোধে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে থাকে। কিছুদিন আগে দেশব্যাপী ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনি যখন মহামারী আকার ধারণ করেছিল, তখন আলোর শাটলের কর্মীরা এই গুজবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য মানুষের মধ্যে প্রচারণাও চালায়। আলোর শাটল সম্পর্কে জানতে চাইলে সংগঠনটির উপদেষ্টা যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, এই ধরনের সমাজসেবামূলক কাজ নিঃসন্দেহে একটি মহৎ কাজ। আমরা মূলত কিছু মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আলোর শাটল নামের সংগঠনটির যাত্রা শুরু করেছি এই বছরের জুলাই মাসে। এরপর থেকে শিক্ষক এবং আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে খুব ভালো সাড়া পেয়ে আমরা বিভিন্ন সময় নানা সমাজসেবামূলক কাজের উদ্যোগ নিয়েছি এবং সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। আশা করছি, ভবিষ্যতেও আমরা এমন কাজের ধারা অব্যাহত রাখতে পারব। তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এমন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন সমাজসেবামূলক ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ দেখে মানুষ এই ধরনের কাজ করতে আরও বেশি আগ্রহী হবে। প্রতিটি শিক্ষিত মানুষ তার নিজস্ব জায়গা থেকে এমন কিছু কাজ করলে আমাদের সমাজটা আরও সুন্দর হয়ে উঠবে এবং সমাজের সব শ্রেণি, বিশেষ করে বঞ্চিত মানুষগুলোর মাঝে আশোর আলো জেগে উঠবে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে, সংগঠনটির অন্যতম উদ্যোক্তা, চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নকিব বলেন, মনুষ্যত্ব, বিবেক, মানুষের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার মানসিকতা আমরা প্রায় হারিয়ে ফেলছি। দাসত্ব আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে। তোষামোদি আর চাটুকারিতা দিয়ে উপর কর্তাকে সন্তুষ্ট করতে আমরা আজ ব্যস্ত সবাই। অসহায় মানুষের দুঃখ বুঝার মতো তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আশার আলো দেখিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মতো মনোবল সৃষ্টি করার লোকের খুবই অভাব। তাই আমরা মূলত কিছু বন্ধুরা মিলে চিন্তা করেছি আমাদের মেধাশক্তি, বুদ্ধি এবং শ্রম দিয়ে তাদের আশার আলো দেখানোর জন্য একটি সংগঠন করি। প্রথমে এটার নাম আলোর মিছিল দেই আমরা। পরে সাবার মতামতের ভিত্তিতে এর নামকরণ করি আলোর শাটল। সংগঠনের অর্থের জোগান কোথা থেকে আসে প্রশ্ন করলে নকিব জানান, তাদের সব সদসের আর্থিক সাহায্য, ডোনারদের দানই তাদের টাকার মূল উৎস। তিনি বলেন, কোনো প্রোগ্রাম হাতে নিলে আমরা সমাজের বিত্তশালী ভালো মনমানসিকতার কিছু মানুষের কাছে যাই, তারা আমাদের সবসময় সাহায্য করে এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক আছে, বিশেষ করে আমার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকরা বুদ্ধি, পরামর্শ ও আর্থিকভাবে সপোর্ট দিয়ে সবসময়ই আমাদের পাশে থাকেন। উনাদের সহযোগিতায় আমরা আমাদের কর্মসূচিগুলো সহজে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হই। এই সংগঠনের সঙ্গে সদ্য যুক্ত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাহমিদা আকতার রিমু বলেন, মানুষের জন্য কিছু করতে সবসময় ভালো লাগে। আগেও এমন অনেক সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেছি। তবে আলোর শাটলের চিন্তা ভাবনাগুলো অন্য সংগঠনের তুলনায় একটু ভিন্ন রকম মনে হয় এবং তাদের কার্যক্রম আমার খুবই ভালো লেগেছে। যতদিন ক্যাম্পাসে আছি ততদিন এই সংগঠনের সব কাজে সহযোগিতা করব এবং পড়াশোনা শেষে ক্যাম্পাস থেকে চলে যাওয়ার পরও যতটুকু সম্ভব সবসময় আলোর শাটলের পাশে থাকার চেষ্টা করব। আইন বিভাগের (২০১৫-১৬) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. মহিবুল হাসান শাওন বলেন, আলোর শাটল নামের সংগঠনটির কাজ আমার খুব ভালো লেগেছে এবং তাদের কাজ চোখে পড়ার মতো। নতুন হিসেবে একসঙ্গে ১ হাজার গাছের চারা রোপণের মতো এত বড় কর্মসূচি নিঃসন্দেহে সাহসী উদ্যোগের। আশা করি, ভবিষ্যতে এরা আরও বড় উদ্যোগ নিয়ে ভালো কাজ করতে পারবে।