জা হা ঙ্গী র ন গ র বি শ্ব বি দ্যা ল য়

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে

প্রকাশ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা
মো. জাহানুর ইসলাম দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত সুইজারল্যান্ডে ঘুরতে যাব। এ নিয়ে কতবার যে পরিকল্পনা করেছি তার কোনো হিসাব নেই, কিন্তু যাওয়া আর হচ্ছিল না। এক সময় তো মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করল- সুইজারল্যান্ডে আদৌ যাওয়া হবে তো! সব সন্দেহ দূর করে ১০ সেপ্টেম্বর আমরা বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মো. জাকারিয়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান সাজিদ, সম্পাদকীয় পর্ষদের সদস্য শফিউল আল শামীম, জাবি শাখার সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম খন্দকার, ঢাবি শাখার দপ্তর সম্পাদক তামান্না আক্তার ও সদস্য রিফাত মাহদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তা বেশ ফাঁকাই ছিল। মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যে আমরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছিয়ে যাই। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশের মূল ফটক ডেইরি গেটে নেমে পড়ি। সেখানে আগে থেকে অপেক্ষারত জাবি শাখার সভাপতি নুসরাত জাহান, সাধারণ সম্পাদক আবির মাহমুদ খবির, সাংগঠনিক সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন মুন্না, দপ্তর সম্পাদক মিতা কলমদার আমাদের স্বাগত জানান। সেই সময় আমাদের সঙ্গে যোগ দেন বিটিসিএলএফের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাজমুন আরা শামীমা। আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের একটু দূরে ছবি চত্বরে গিয়ে বসে পড়ি। জাবি শাখার জাকারিয়া হাবিব, সাগর হোসেন ও তরুণ কলামিস্ট মাহমুদুর রহমান মানিক আমাদের সঙ্গে যোগ দেন। সূর্য মাথার উপর থেকে সবেমাত্র ঢলতে শুরু করেছে। ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে দেখি দুইটা বাজতে আরো ১০ মিনিট বাকি। ক্ষুধার জ্বালায় পেটও তাগাদা দিচ্ছে। সবাই মিলে হাজির হই ক্যাম্পাসের বটতলা নামে খ্যাত চৌরাস্তা মোড়ে। সেখানকার ছোট ছোট খুপরি ঘরের খাবারের দোকানগুলো বাহারি রকমের ভর্তাসহ হরেক রকমের খাবারের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। পঁচিশ পদের ভর্তার পাশাপাশি মাংসের অর্ডার করি। সবাই পেট পুরে খেয়ে নিই। খাওয়া শেষ হলে হালকা রেস্ট নিয়ে হাঁটা শুরু করি সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে। পায়ে হেঁটে সুইজারল্যান্ড! সবার চোখে মুখে বিস্ময়। বিস্ময় না হয়ে উপায় নেই। তখন নিজেদের খুব ভাগ্যবানই মনে হচ্ছিল। কিছুক্ষণ বাদেই ঘোর কেটে যায়। বুঝতে পারি এটা আসলে দেশ সুইজারল্যান্ড নয়, লেকের পানিতে পদ্ম, বাহারি পদের গাছ আর ফুল এবং বড় বড় গাছগাছালিতে ভরপুর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ জায়গা- যা ক্যাম্পাসে সুইজারল্যান্ড নামে পরিচিত। মওলানা ভাসানী হলের ঠিক বিপরীতে এর অবস্থান। জায়গাটি সত্যিই অনেক সুন্দর ছিল। জাহাঙ্গীরনগরের পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে সুইজারল্যান্ডের মতো এরকম অসংখ্য জায়গা আছে- যা সবার মন কাড়ে। সুইজারল্যান্ডের প্রবেশ মুখের দিগন্তজোড়া কাশফুলের মাঠ, সাদা শুভ্র কাশফুল আমাদের কল্পনার জগতকে জাগ্রত করে, ইচ্ছা করে কাশফুলের নরম ছোঁয়া পেতে। আমরা সবাই মিলে সেখানে গ্রম্নপ ছবি তুলি। সত্যি বলতে এখানে প্রকৃতির এমন এক নিবিড় আলিঙ্গন অনুভব করি যা যে কোনো মানুষের দুঃখ কষ্ট অবসাদ নিমেষেই ভুলিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। আমরাও সবকিছু ভুলে গিয়ে আনন্দে মেতে উঠি। এখানে প্রকৃতি নিজেই নিজেকে দেখায় তার নিজের মতো করে এবং প্রত্যেকটি জায়গা তার নিজ গুণে অনন্য। সুইজারল্যান্ডের প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্য সহজেই আমাদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। মনে পড়ে গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্য- যা আমাদের হৃদয়কে নাড়া দেয়। ঢাকার বুকে এত সুন্দর একটি জায়গা থাকতে পারে ভাবতে ভাবতে নিজেরাই অবাক হয়ে যাই। সত্যি বলতে কী এসব নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিজের চোখে না দেখলে বোঝানো কঠিন। যা শুধু দেখলেই উপভোগ করা যায়।