পূজার লগ্নে আনন্দ ভুবনে

'স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার' গানটি শুনলে মুসলমানদের মনে যে ছবিটি ভেসে আসে তা হলো ঈদ, আর হিন্দুদের মনে ভাসে পূজার ছবি। 'পূজা মাত্র দুটি বর্ণের সমষ্টি, কিন্তু এর পরিসর হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে ব্যাপক। বিশেষ করে যারা মা-বাবা, ভাইবোন থেকে দূরে থাকে তাদের কাছে পূজা বয়ে আনে অন্যরকম এক অনুভূতি। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ালেখা করা হিন্দুসহ সব শিক্ষার্থীর মাঝে দুর্গাপূজা নিয়ে অন্যরকম আনন্দ বিরাজ করছে। সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের ভাবনা জানার চেষ্টা করেছেন মো. আশিকুর রহমান।

প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দুর্গা মায়ের জন্য অপেক্ষারত 'মা তুমি আসবে বছর ঘুরে আবার নতুন করে, তুমি মহান, তুমি সমগ্র জগতের শ্রেষ্ঠ'- মা দুর্গা বছর ঘুরে আবার দানের মহিমা নিয়ে আসতেছে আমাদের মাঝে। আমরা সবাই উৎসব মুখর আবহে মায়ের জন্য অপেক্ষারত। মা আসবে আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে নতুনভাবে জীবন চালনা করার বর দান করবে। আমার বিশেষ আরেকটি কারণে পূজা নিয়ে অধীর আগ্রহে মগ্ন। কারণ অনেকদিন পর পূজা উপলক্ষে নিজ মায়ের কোলে ফিরব। সব আপন মানুষের সঙ্গে দেখা হবে, ভাব বিনিময় হবে। যদিও বাড়ি যাওয়ার পথে যানজট তীব্র সমস্যার সৃষ্টি করে তবুও আমি পূজা নিয়ে, মা দুর্গার সান্নিধ্য এবং পরিবার, সমাজের সবার সঙ্গে উৎসব পালনের জন্য উৎসুক। পূজা ছাড়া সাধারণত বাড়ি যাওয়া হয় না। দীর্ঘদিন পর মা-বাবা ও পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা হবে, উৎসব হবে এটা ভাবতেই অনেক ভালো লাগছে। সবাইকে শারদীয়ার শুভেচ্ছা। সজীব রায় প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ। পূজা তুমি আসো বারংবার আমার ক্যাম্পাস জীবনটা বেশিরভাগ সময় কাটে বাড়ির কথা মনে করে, কিন্তু বাড়ি যাওয়া সচরাচর হয়ে ওঠে না। ঈদের ছুটিতেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে যেতে পারি না। শুধুমাত্র যাওয়া হয় পূজাতে। দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হলো হিন্দু দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত একটি উৎসব। দুর্গাপূজা সমগ্র হিন্দুসমাজেই প্রচলিত। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লাপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজা এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। শারদীয়া দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি। বাসন্তী দুর্গাপূজা মূলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এবার পূজাতে বাড়ি গিয়ে নাচ, গান, গল্প, আড্ডা সবকিছুরই পস্ন্যান আছে। মনটা বারবার খুশিতে নেচে উঠছে আর মনে সর্বদা একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে, 'পূজা আসুক বারংবার এ ধরায়'। অনিন্দিতা সাহা ফরিদপুর নার্সিং ইনস্টিটিউট। ভ্রমণের উৎস পূজা সারাবছর অপেক্ষার পর শ্রী শ্রী দুর্গা দেবীর আগমন হয়। প্রতিবছর দুর্গোৎসবের দিনগুলোয় অনেক আনন্দে-উলস্নাসে মেতে থাকি। বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন মন্দিরে পূজা দেখতে যাওয়া, নানা রকম মজাদার খাবারসহ নাচ, গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনগুলো অতিবাহিত হয়। নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া হয় পূজার উৎসবে। পড়াশোনার ক্লান্তি দূর করে মনে আসে নতুন এক সজীবতা। দুর্গাপূজা ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালসহ ভারতীয় উপমহাদেশ ও বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রে পালিত হয়ে থাকে। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হওয়ার দরুন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও ঝাড়খন্ড রাজ্যে ও বাংলাদেশে দুর্গাপূজা বিশেষ জাঁকজমকভাবে পালিত হয়। এমনকি ভারতের আসাম, বিহার, মণিপুর এবং উড়িষ্যা রাজ্যেও দুর্গাপূজা মহাসমারোহে পালিত হয়ে থাকে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে প্রবাসী বাঙালি ও স্থানীয় জনসাধারণ নিজ নিজ প্রথামাফিক শারদীয়া দুর্গাপূজা ও নবরাত্রি উৎসব পালন করে। সজল সিংহ ভাষা যোগাযোগ ও সংস্কৃতি বিভাগ পূজার আনন্দ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক শারদীয় দুর্গোৎসব হচ্ছে আমাদের হিন্দু ধর্ম অনুসারীদের সবচেয়ে বড় উৎসব। বছর ঘুরে মা দুর্গা আমাদের মাঝে আগমন করেন শান্তির বাণী নিয়ে, আবার মা দুর্গার প্রস্থান আমাদের বেদনায় সিক্ত করে তোলে। আসছে বছরের আগমনী বার্তা দিয়ে মা আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়। পূজায় সচরাচর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসি। এই একটি মাত্রই উৎসব যেখানে শত ব্যস্ততার মাঝেও বাল্যবন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ হয়। এবারের পূজাও তার ব্যতিক্রম নয়। ক্যাম্পাসের সব ব্যস্ততার অবসান ঘটিয়ে ছুটে যাব মায়ের কাছে। আনন্দ আর উলস্নাসে ভরিয়ে তুলব পৃথিবী। পূজার আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক সমানভাবে। পরিশেষে মা দুর্গা আমাদের মাঝে যে বার্তা রেখে যায়, 'জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর'। অপু মজুমদার অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ।