পুনর্মিলনীর অপূর্ব স্থান ব্রহ্মপুত্র নদ

প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
য় জেলাী আক্তার কুড়িগ্রাম জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ১৬টি নদনদীর মধ্য আমরা বন্ধুবান্ধবীরা অপূর্ব স্থান হিসেবে ব্রহ্মপুত্র নদকে বেছে নিয়েছি। দূরত্ব বাড়ার সঙ্গে পালস্না দিয়ে বেড়ে যাবে বয়স। ছোট বেলার কলাপাতার ঘর, মাটির হাঁড়ি-পাতিল আর পুতুল বিয়ের গল্পগুলো একদিন মনে হবে রূপ কথার গল্প। দলবেঁধে মাঠে খেলা করার সেই গোলস্নাছুট, দাড়কোট, আর কত সব খেলা হারিয়ে যাবে। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বে সাংসারিক জীবনে। কারো বা অল্প বয়সেই মাথার চুলগুলো পেকে যাবে, কারো বা দাঁত পড়ে যাবে অল্প বয়সেই, শরীরে চামড়াটার মসৃণতা হারিয়ে ফেলবে, ভাবলেই কেমন যেন গা শিউরে ওঠে। \হসেই ছোট্টবেলায় প্রথম শ্রেণিতে অ, আ, ক, খ যাদের সঙ্গে শেখা, যাদের সঙ্গে পথ চলা সেই পুরনো বন্ধু-বান্ধবীও একদিন হারিয়ে যাবে। তারপর শুরু হবে মাধ্যমিক স্কুলে পড়শোনা, তারপর আবার বন্ধু বদল, আবার উচ্চমাধ্যমিক তারপর ইউনিভার্সিটি- এভাবে বদলাতে বদলাতে জীবনের অনেকটা সময় চলে যাবে। আর বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আনন্দ হৈ-হুলেস্নাড় করা দিনগুলো ব্যস্ততার মলাটে ঢাকা পড়ে থাকবে। যতই বয়স বাড়বে ততই বাড়বে স্মৃতির বয়স। এই সময়গুলোতে কেটে যাওয়া স্মৃতিগুলো দাগ কেটে যাবে হৃদয়ে। ঈদের ছুটি কিংবা গ্রীষ্মকালীন অথবা কলেজের যে কোনো ছুটি পেলে সবার যেন মনে পড়ে একটা পুনর্মিলনী হলে কেমন হয়? বন্ধুবান্ধবীদের মতের মিলে হয়েও যায়। এই তো সেদিনের কথা ঈদ উপলক্ষে ঘুরে এলাম ব্রহ্মপুত্র নদ। একটা চরে গিয়েছিলাম, কোন চরে যাব এ নিয়ে কথা; হঠাৎ এক বন্ধু মজা করে বলেই দিল, চল না মিনি কক্সবাজারে যাই। যারা আগে যাইনি তারা একটু চমকে গেলাম। তারপর পানির ছলাৎছলাৎ শব্দে এগিয়ে চলছে নৌকা; বিকেল ৪টার দিকে পৌঁছে গেলাম। একের পর এক সবাই নেমে পড়লাম চারদিকে পানি আর মাঝখানে বালুচর। বাহ, অন্যরকম এক অনুভূতি, হাঁটতে শুরু করলাম সবাই, বালুচরে পা যেন বালুর ভেতর তলিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল- কে যেন পেছন থেকে টেনে ধরেছে। বালুতে হাঁটার মাঝে যেন নতুন এক অভিজ্ঞতা আছে। বন্ধুর কথায় মনে হলো- আহা!! কি মিনি কক্সবাজার। যদিও কক্সবাজার নয়, তবুও আনন্দের কোনো কমতি ছিল না। ঘোরা ফেরা শেষে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। নৌকার দ্রম্নত গতিতে ছুটে চলা, আর হৃদয় জুড়ানো নদীর বিশুদ্ধ বাতাসে, পশ্চিম দিকে সূর্য ডুবে যাওয়ার কি অপরূপ দৃশ্য যেন আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছিল বহুগুণ। হয়তো বা কিছু দিন পর বয়স যখন চলিস্নশের গন্ডি পেরিয়ে যাবে, সংসারের টানাপোড়নে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে, রান্না ঘরের চুলোর আগুনের তাপে যখন ভেতরটা হাঁপিয়ে উঠছে, হয়তো তখন মনে পড়বে পুনর্মিলনীর স্থান ব্রহ্মপুত্র নদ। বন্ধুদের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম না, সেদিন ওদের মাঝেও থাকবে না তারুণ্য, থাকবে বার্ধক্যের ছাপ, হাতে থাকবে বাজার খরচের মোটা ব্যাগ। শার্টের বোতাম খুলে আর স্বাগত জানাতে পারবে না আধুনিকতাকে; সেদিন খুব বেশি হলে পকেটে একটা পাঁচ টাকার বলপেন কলম নয়তো একটা পাওয়ারি চশমা থাকবে। সেদিন আমরা দুপক্ষই চাইবো ইস আর একবার যদি যেতে পারতাম নৌকা করে সেই ব্রহ্মপুত্র নদে, হয়তো সাময়িকভাবে হৃদয় জুড়িয়ে যেত। সেই গল্প, হৈহুলেস্নাড় করা স্মৃতিগুলো মাথায় থাকবে, কখনো স্বপ্নেই চলে যাব পুনর্মিলনীতে কিন্তু বাস্তবে রান্না ঘরের ঘোর কাটিয়ে বের হওয়া হয়তো আর হবে না। আর বন্ধুরাও পারবে না সংসারের বাজার খরচের হিসেব ছেড়ে পুনর্মিলনীর তারিখ ঠিক করতে। স্মৃতির পাতায় শুধু জমা থাকবে- সেই পুনর্মিলনীর অপূর্ব ঠিকানা ব্রহ্মপুত্র নদ।