চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

দেখা হবে বন্ধু...

একে অপরের টি-শার্টে মনের অগোছালো কথাগুলো রঙিন কালি দিয়ে লিখেছিল। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ আবিরের রঙে রাঙিয়ে দেন একে অন্যকে। প্রিয়জনদের রঙিন কলমের নানা লেখায় ভরে গেছে সাদা টি-শার্টগুলো। কেউ লিখেছে- ভালো ছেলে, বন্ধু ভালো থেকো, ও মনে পড়বে তোমায়, আবার কেউ লিখেছে ফাঁকিবাজ, ঘুমবাবু ও অলওয়েজ লেট।

প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
য় রুমান হাফিজ সকাল থেকেই রিমিঝিমি বৃষ্টি। সুনসান নীরবতা গোটা ক্যাম্পাস জুড়ে। এমন সময় দেখা মিললো রং আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে একঝাঁক শিক্ষার্থী। গায়ে পরিহিত সাদা টি-শার্টের লেখা দেখে বুঝতে বাকি রইলো না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) আইন বিভাগের ২২তম ব্যাচেরর্ যাগ ডে। জয় বাংলা ভাস্কর্য প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে তারা একে অপরের টি-শার্টে মনের অগোছালো কথাগুলো রঙিন কালি দিয়ে লিখেছিল। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ আবিরের রঙে রাঙিয়ে দেন একে অন্যকে। প্রিয়জনদের রঙিন কলমের নানা লেখায় ভরে গেছে সাদা টি-শার্টগুলো। কেউ লিখেছে- ভালো ছেলে, বন্ধু ভালো থেকো, ও মনে পড়বে তোমায়, আবার কেউ লিখেছে ফাঁকিবাজ, ঘুমবাবু ও অলওয়েজ লেট। এই কথাগুলো বন্ধুদের টি-শার্টে লিখে তারা স্মরণীয় করে রাখতে চায়। এরপর সেখানে তারা গানের তালে দলবদ্ধ হয়ে নাচতে থাকে। সেখান থেকে তারা আইন অনুষদের দিকে চলে যায়। একে-অপরকে আলতো ছোঁয়ায় বিভিন্ন রঙের আবির লাগিয়ে দিতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিনটিকে মনের মণিকোঠায় আগলে ধরে রাখতে রং মেখে স্মরণীয় করে রাখে। শিক্ষাজীবনের শেষ সময়টাকে স্মৃতিময় করে রাখতে ক্যামেরা আর মুঠোফোনে চলতে থাকে ক্লিক ক্লিক শব্দ। সঙ্গে চলে ফটোসেশন আর সেলফির মাতামাতি। তাদের অনেকেই পেছনে ফেলে আসা চারটি বছরকে স্মরণ করে স্মৃতির পাতায় তুলে ধরেন সবার মাঝে। অনুষদের সামনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল থেকে দুইজন শিক্ষার্থী মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে কথা বলতে থাকে। সাউন্ড বক্সের বড় আওয়াজ আর শিক্ষার্থীদের হেলেদুলে নাচে মুখরিত গোটা অনুষদ চত্বর। অদম্য-২২ ব্যাচের ইমরান হোসাইনের কণ্ঠে ভিন্ন সুর, 'আমরা আজ থেকে সাবেক হয়ে গেলাম! এই বিশ্ববিদ্যালয় চির সবুজ হয়ে রবে। এই বিভাগ থাকবে বর্তমানদের পদচারণায় মুখরিত। চোখের পলকেই কিভাবে পাঁচ বছর গেছে বুঝতেই পারিনি। এই দীর্ঘ সময়ে অসম্ভব ভালো শিক্ষক ও বন্ধু পেয়েছি। চবির আইন বিভাগ অনেক কিছু দিয়েছে, সামনের দিনে অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দেশসেবা করতে চাই। কথা হয় আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুর জান্নাত ও মো. মুজাহিদুল ইসলামের সঙ্গে, আমি খুব আগ্রহী ছিলামর্ যাগ ডে'র জন্য। ক্যাম্পাসের সব শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে বন্ধুদের সঙ্গে এমন একটি দিন হাসি-আড্ডায় কাটিয়ে দেয়ার। শত ব্যস্ততার মাঝেও আমরা এই রকম আড্ডায় মিলিত হতে পেরেছি বলে খুব ভালো লাগছে। সম্প্রীতির পুণ্যবন্ধনের একটি উলেস্নখযোগ্য উদাহরণ র?্যাগ ডে। বিভাগের সব ব্যাচের শিক্ষার্থী সেই সঙ্গে শিক্ষকদের আরেকটিবার একসঙ্গে করে পাওয়ার সুযোগ এটি। শিক্ষাক্ষেত্র থেকে বিদায় আর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের শুরু এ দুয়ের মাঝে চেনামুখগুলোকে রাঙিয়ে নিতের্ যাগ ডে যেন এক অনন্য মেলবন্ধন। নাচ-গান, আনোন্দ-উলস্নাস আর রং মাখামাখির মাধ্যমে জমে ওঠে চারপাশ। এর মধ্যেই বুকের এক কোণ থেকে মাঝে মাঝে বেরিয়ে আসে কান্না। কাঁদছেও অনেকে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে। নিজেদের মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটিয়ে আইন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করার কঠিন পথের যাত্রী এখন। এভাবেই যেন শেষ হয়ে গেল ৪ বছরের হাসি-কান্না আর সুখ-দুঃখের স্মৃতি। কিন্তু এমন অনেক স্মৃতি আছে- যা কখনও শেষ হয় না। কিছু থেকে যায় আজীবনের জন্য। এ স্মৃতি জড়িয়ে আছে ক্লাস রুমের লাল দেয়ালের প্রতিটি ইটে, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, ঝুলন্ত ব্রিজ, কলার ঝুপড়ি, কাটা পাহাড়ের রাস্তা, জিরো পয়েন্টে মউ দোয়ানের চায়ের গল্প, বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঘোরাঘুরি, শাটলের গানময় দিন। আর মাসে মাসে বন্ধুদের জন্মদিন পালন, কেক কাটা আর মাঝে মাঝে হঠাৎ কাউকে চমকে দেয়া। এসব কথা মনে উঠলেই চোখে পানি চলে আসে। সময় ও ব্যস্ততা বড়ই নিষ্ঠুর। যে বন্ধন হৃদয়ের গভীর থেকে গভীরে, কে পারে এ বন্ধন ছিঁড়তে? সব শেষে অশ্রম্নসিক্ত লোচনে আর নির্বাক কণ্ঠে অন্তর বলে উঠে যেন, 'দেখা হবে বন্ধু কারণে বা অকারণে......'।