পাহাড়, ঝরনা ও সমুদ্র সৈকতে

প্রকাশ | ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শামীম শিকদার টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। আগ্রহ খুব একটা নেই। পরিকল্পনাটা অনেক আগের- তাই বের হতে হবে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে রাত সাড়ে ৮টায় আমরা ছয় জন জয়দেবপুর রেলস্টেশনে হাজির। উদ্দেশ্য আমাদের পাহাড়, সমুদ্র ও উপত্যকায় ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে প্রাচ্যের রানি হিসেবে বিখ্যাত চট্টগ্রাম শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করা। সবার মন খুব উৎফুলস্ন। পরীক্ষার আগে একটি টু্যর হয়ে গেলে মন্দ কি? সবার মুখে যেন আনন্দের হাসি। হঠাৎ করেই সে হাসি থেমে গেল। ট্রেন মিস। আবার কখন ট্রেন আসবে স্টেশন মাস্টার বলতে পারে না। পরিকল্পনার পরিবর্তন। ট্রেন নয়, বাস, অটো ও সিএনজি দিয়ে ঢাকা বিমানবন্দরে গিয়ে চট্টগ্রামের ট্রেন ধরব। তড়িঘড়ি করতে করতে রাত ১০টায় চলে এলো ঢাকার উদ্দেশে একটি ট্রেন। কোনো সাতপাঁচ না ভেবেই আমরা দ্রম্নত ট্রেনে উঠে পড়লাম। ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করার সময় গল্প করতে করতে আমরা ক্লান্ত; তাই এখন ট্রেনে দাঁড়িয়ে আমরা খুব শান্ত। রাত ১২টায় এয়ারপোর্ট থেকে চট্টগ্রামের যাওয়ার জন্য আমরা ট্রেনে উঠি। ট্রেন জুড়ে তরুণদের উপস্থিতি। অনেকের সঙ্গে কথা হলো। আগামীকাল শুক্রবার। বেশিরভাগ মানুষই চট্টগ্রাম যাবে। ট্রেন সীতাকুন্ডে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সারা রাতের ক্লান্তির কথা ভুলে উঁচু পাহাড়ের উপর সবুজ প্রকৃতি দেখায় ব্যস্ত সবাই। ট্রেন থেকে নেমে প্রথমে আমরা উঠি সীতাকুন্ড পাহাড়ে। সঙ্গে ব্যাগ ভর্তি পানি ও স্যালাইন। হাতে একটি লাঠি। পাহাড়ের পথ বেয়ে অর্ধেক উঠার পর ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে মাটিতে বসে পড়ি আমরা। অবশেষে আমরা ছয় জনই মাটি থেকে ১২০০ ফুট উপরে পাহাড়ের মাথায় উঠি। গটগট করে এক বোতল পানি খেয়ে নিলাম। পাহাড়ে ওঠা খুব কষ্ট। এক প্রকার ভয়ঙ্কর রকমের আনন্দও রয়েছে। চারপাশের সবুজের সমারোহ। সবুজের ভেতর দিয়ে আঁকা বাঁকা পথ। আরেকটু উপরে উঠলেই মনে হচ্ছে মেঘগুলো ধরতে পারব। শত ক্লান্তির মাঝেও সবার হইহুলেস্নাড়। এমন সময় খবর এলো একদল ডাকাত ৪০ জন পর্যটকের কাছ থেকে সব ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা সবাই আতঙ্কে। একপ্রকার ভয়ঙ্কর রকমের আনন্দ নিয়েই খাড়া সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলাম। উদ্দেশ্য এখন খৈয়াছড়া ঝরনা। কাদামাখা পিচ্ছিল পথ দিয়ে লাঠির উপর ভরসা করে ধীরে ধীরে আমরা এগুতে থাকলাম। সামনের দিকে যত এগুচ্ছি আনন্দটা তত বাড়ছে। অবশেষে দেখা মিলল কাঙ্ক্ষিত ঝরনার। এখন সবাই ব্যস্ত ঝরনার ঠান্ডা পানিতে শরীর ভেজানো নিয়ে। দীর্ঘ সময় শরীর ভেজানোর পর আমরা চলে গেলাম গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে। আবারও কাদা ও পিচ্ছিল পথ। পড়ে যাওয়ার ভয় কাজ করে। তবু সমুদ্র দেখার পিপাসায় সামনের দিকে এগুতে থাকলাম। ঝরনার স্বচ্ছ পানির পর এবার নামা হলো সমুদ্রের পানিতে। তখন পড়ন্ত বিকেল। আমরা সবাই ব্যস্ত আমাদের ব্যাগ গোছানো নিয়ে। চট্টগ্রাম থেকে বাস ঢাকার উদ্দেশে। ঘুমে ব্যস্ত সব ভ্রমণপিপাসু সৈনিক।