বা ং লা দে শ কৃ ষি বি শ্ব বি দ্যা ল য়

দিগন্তের শেষ নীড়ে বিদায়ী শরৎ

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আতিকুর রহমান 'শরতে আজ কোন অতিথি এলো প্রাণের দ্বারে/আনন্দ গান গায় রে হৃদয় আনন্দ গান গায় রে/নীল আকাশের নীরব কথা শিশির ভেজা ব্যাকুলতা/বেজে উঠুক আজি তোমার বীণার তারে তারে'- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানের সুরে শরতের মোহনীয় সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। কখনও নীল আকাশ কখনও তাতে ভেসে বেড়ানো সাদা সাদা মেঘের দল আবার কখনও বা দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে কাশফুলের মন মাতানো দৃশ্য। কখনও আবার কামিনী, টগর, শিউলি, শাপলা আর জবা ফুলের অবারিত সৌন্দর্য ও গন্ধে সিক্ত পরিবেশ- কত সাজেই না শরতের প্রকৃতি সেজে উঠেছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ১২৫০ একরের সুবিশাল সবুজ চত্বরে ঠিক এমনই দৃশ্য ফুটে উঠেছে। সাদা কাশফুলের অবারিত পদচারণায় ছেয়ে গেছে বাকৃবির আশরাফুল হক হলের মাঠ। সদা পরিষ্কার নীল আকাশ আবার তারই মাঝে বাহারি নকশার মেঘের ভেলা। বাকৃবি ক্যাম্পাসের দিকে দিকে কাশফুলের অবারিত সৌন্দর্য, রোদের সঙ্গে মেঘের লুকোচুরি খেলা, বাতাসের সঙ্গে পালস্না দিয়ে দোল খাওয়া সাদা কাশফুলের সূর্যস্নান, তারই উপরে বিছিয়ে দেয়া বিশাল আকাশের মস্ত নীল আঁচল। যেন মুঠোবন্দি করে নিতে চায় শাপলা, শিউলি, টগর, বকুল, মলিস্নকা, জবা, কামিনীসহ বিচিত্র সব ফুল আর তার বিচিত্র সব রূপ। শরতের ছোয়ায় বাকৃবি ক্যাম্পাস যেন স্বর্গরূপে সজ্জিত হয়েছে। দেখে মনে হয়, বড় ভালোবাসি এই শরতকে, থেকে যাক সে আজীবন। তবে পরিবর্তনের এই জগতে কোনো কিছুই থাকে না চিরন্তন। এরই ধারায় বাংলা ঋতুচক্রের রীতিতে বিদায়ের সুর কড়া নাড়ছে শরতের দরজায়। ধীরে ধীরে প্রকৃতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে। যতই বিমোহিত থাকি না কেন বর্ষপঞ্জিকার পাতা মনে করিয়ে দিচ্ছে শরতকে এবারের মতো বিদায় নিতেই হবে। এমনটাই তো এই বঙ্গীয় বদ্বীপের নিয়ম। ভাদ্র মাসের পালাবদলে উচ্ছ্বল তরুণ কাশফুলগুলো আশ্বিনের বুকে ঠাঁই নিয়েছে। ক্রমেই বয়স্ক হয়ে উঠেছে তারা। প্রকৃতির নির্ধারিত সময়ের একেবারে অন্তিমলগ্নে পৌঁছে গেছে শরতের দিনগুলো। এরপরই পাবে টানা এক বছরের ছুটি। শরতের আকাশে উড়ে যাওয়া তুলোর মতো মেঘের সঙ্গে কাশফুলের লোমশ পাপড়িগুলো পালস্না দিয়ে ছুটে চলেছে দূর বহুদূরে। যেন বিদায় বেলায় শেষ উলস্নাসটুকু মন ভরে কাটিয়ে নিচ্ছে। এ নিয়ে কৃষি প্রকৌশল অনুষদের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান বলেন, এ কাশফুলেই যেন আমার পুরো শৈশব মিশে আছে। শরত এলেই মন ছুটে যায় ছোটবেলার সেই মধুর স্মৃতির পানে। এই বিদায় বেলায় শরত সাদা কুয়াশা দিয়ে মন ভারি করে চলে যাচ্ছে। ভেটেরিনারি অনুষদের আরেক শিক্ষার্থী তানভীর বলেন, শরত আমার প্রেম। ভোরবেলার রাস্তার ধারে শিউলি ফুল, গোধুলীতে স্নিগ্ধ সমীরণ আর একগুচ্ছ সাদা নীলের লুটোপুটি- প্রকৃতি পিয়াসী যে কারোর অবচেতন মনে অবশ্যই দোলা দিয়ে যায়। হেমন্তের শিশিরের সঙ্গে বিদায় বলি বটে স্মৃতিতে চির অমলিন থেকে যায় ভালোলাগা ও ভালোবাসা অজস্র মুহূর্ত। কিছুদিন পর দীর্ঘ ছুটি শেষ করে প্রকৃতির বুকে ফিরে আসবে হেমন্ত আমাদের এই প্রাণের। শরতের সব নিদর্শনের সমাপ্তি ঘটিয়ে নতুনদের স্থান দিতে শুরু করবে সে। দক্ষিণা বাতাসের দিক পরিবর্তন করে ঠিক তার উল্টো পথে পরিচালিত করার পরিকল্পনা গুনবে। না শীত না গরমের কিছু অনুভূতির পর ঠান্ডার অংশটা ক্রমেই বৃদ্ধি করে প্রকৃতিতে উত্তরের হিম বাতাসের আগমনী বার্তা পৌঁছে দিবে ধরনীতে। ক্রমে ক্রমে শেষ হবে হেমন্ত, আসবে শীত তারপর বসন্ত। এভাবেই চলবে বারো মাস, ঋতু পরিবর্তিত হবে তার নিজস্ব গতিতে।