চ ট্ট গ্রা ম বি শ্ব বি দ্যা ল য়

স্বপ্ন পূরণে প্রস্তুত নবীনরা

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

সাইফুল ইসলাম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠ। এরই মধ্যে সে বিদ্যাপীঠে জমে উঠেছে ভর্তিযুদ্ধ। সর্বত্র বইছে সে ভর্তিযুদ্ধের হাওয়া। সেই হাওয়ায় পাল তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দেশের আনাচে-কানাচে পড়ে থাকা বিভিন্ন কলেজের মেধাবী নবীন শিক্ষার্থীরা। সব মিলিয়ে এই মাসের শেষ নাগাদ শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধ। সে যুদ্ধে দেশের হাজারও শিক্ষার্থী নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে লড়াই করে স্বপ্ন পূরণ করতে মরিয়া হয়ে আছে। অক্টোবরের ৩১ তারিখ পর্যন্ত চলবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধ। এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রেকর্ডসংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে। মোট ৪ হাজার ৯২৬টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮শ ৭০ জন। সে হিসাবে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রতি আসনের বিপরীতে লড়বে ৩৪ জন পরীক্ষার্থী। আসন্ন ভর্তিযুদ্ধে টিকে থাকতে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাড়ি জমিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে চলে আসেন বহু ভর্তি ইচ্ছুক পরীক্ষার্থী। ভর্তি হন নগরীর বিভিন্ন কোচিং সেন্টারগুলোতে। আর স্বপ্ন দেখেন আয়তনে দেশের বৃহত্তম ক্যাম্পাস, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভর্তি হওয়ার। ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে আসা এই শিক্ষার্থীদের অনেকের মনে থাকে নানান আশা-আকাঙ্ক্ষা। আর কারো জীবনে থাকে নানান প্রতিকূলতা। তবুও তারা সব প্রতিকূলতা ভুলে গিয়ে একটা ভালো জীবনের সন্ধানে আশায় বুক বেঁধে নেমে পড়েন ভর্তিযুদ্ধের লড়াইয়ে। এমনই একজন শিক্ষার্থী আমজাদ হোসেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে এসেছেন খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ির এক অজপাড়া গ্রাম থেকে। বাবা পেশায় একজন চা দোকানদার আর মা গৃহিণী। তিন ভাই, তিন বোনসহ আট সদস্যের বড় পরিবার তার। ভাইবোনের মধ্য আমজাদ সবার বড়। অভাব-অনটনের সংসারে বহু কষ্টে এইচএসসি পরীক্ষার গন্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বাছাই করে নিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে। আমজাদের মনে একটাই আশা এবারের ভর্তিযুদ্ধে নিজের অবস্থান করে নেয়া এবং ভালো সাবজেক্টে ভর্তি হওয়া। আমজাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমি মূলত মানবিকের ছাত্র। সে হিসেবে আগে থেকে আমার অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করার খুব ইচ্ছা। আমার মনে হয় এই বিষয়ে আমি খুব ভালো করতে পারব। এই বিভাগে চাকরিরও অনেক খাত রয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করা আমার মূল লক্ষ্য, যাতে করে আমার পরিবারে হাল ধরতে পারি। বাকিটা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিলাম"। এমনই আরেকজন ভর্তি ইচ্ছুক পরীক্ষার্থী নাফিসা তাবাসসুম নেহা। বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলাতে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার আশায় বাড়ির মায়া ত্যাগ করে চলে এসেছেন নগরীর চকবাজারে। ভর্তি হয়েছেন একটি স্বনামধন্য কোচিং সেন্টারে। নেহার স্বপ্ন ও লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু আব্বা-আম্মা এতদূরে থেকে পড়াশোনা করাতে রাজি না। তাই আমার একমাত্র টার্গেট এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। শুনেছি এখানকার আইন বিভাগ খুবই ভালো। সেশনজট ও নেই। আর আমার স্বপ্ন হলো এই সাবজেক্ট থেকে পড়াশোনা শেষ করে লন্ডনে গিয়ে ব্যারিস্টারি পড়া। জানিনা, ভর্তিযুদ্ধে আমি কতটুকু সফল হতে পারব। তবে হাল ছাড়ছি না। এ যুদ্ধে আমি বিজয়ী হতে চাই। স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমার লক্ষ্য অটুট। ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রযুক্তিগত সহয়তা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল। সেলের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিচালক ড. হানিফ সিদ্দিকী বলেন, "আইসিটি সেলের কারিগরি সহযোগিতায় ২য় বারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ অটোমেশন সিস্টেমে অনুষ্ঠিত ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার অনেক কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের সেলে সঠিক তদারকির মাধ্যমে পাঁচ কোটি টাকার স্থানীয় সেট আপের বদলে প্রায় একলাখ টাকার নিরাপদ ক্লাউড সার্ভারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সঠিকভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। সফটওয়্যারে অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রেশনের সময় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য দিলেই বোর্ড থেকে স্বয়ংক্রিয় তথ্য যাচাই করে ওয়েবসাইটে ইনপুট হয়। এ ছাড়াও যে কোনো সময় যে কোনো স্থান থেকে অর্থ জমাদান, এডমিটকার্ড ও সিটপস্ন্যান নেয়া, ফলাফল প্রদান, বিভাগে ভর্তির জন্য ডাকা ও স্বয়ংক্রিয় মাইগ্রেশন, শিক্ষার্থী তথ্য জমাদানসহ নির্দিষ্ট বিভাগে ভর্তি সম্পূর্ণ বিষয়টিই সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। এক কথায় যদি বলতে চাই, ২০১৯-২০ সালে ব্যবহৃত আমাদের এই সিস্টেমটি অন্য যে কোনো সিস্টেমের চেয়ে এগিয়ে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ"। ভর্তি পরীক্ষার বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সচিব এস এম আকবর হোসাইন বলেন, "ভর্তি সম্পর্কিত প্রায় সব ধরনের প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছে। এই মাসের ৯ তারিখ থেকে পরীক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে পারছে। যা ভর্তি পরীক্ষার একঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত। সিট পস্ন্যান আমরা পরীক্ষা শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিতে পারব বলে আশা করছি। এন্টি-প্রক্সি ব্যবস্থা আমাদের রয়েছে। প্রধান পরিদর্শক এবং হলে যারা সমন্বয়ক হিসেবে থাকবেন তারা চাইলে আমাদের এন্টি-প্রক্সি সফটওয়ারের মাধ্যমে প্রকৃত ভর্তি পরীক্ষার্থীদের শনাক্ত করতে পারবে। যদি কেউ ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ যদি ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম নিয়ে কোনো ধরনের অপপ্রচার চালায় তাতে যাতে পরীক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত না হয় আমাদের বিনীত অনুরোধ থাকবে। পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে আমাদের শাটল ট্রেন থাকবে। ভর্তি পরীক্ষার হলে সব ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এর বাইরে মেমরি অপশান ব্যতীত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে। ভর্তি পরীক্ষার অগ্রগতি এবং চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপাচার্য (রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, "ভর্তি পরীক্ষার সব কার্যক্রম ইতোমধ্যে সবার সহযোগিতায় আমরা সম্পন্ন করেছি। এন্টি-প্রক্সি এবং এন্টির্ যাগিং কমিটি গঠন করেছি আমরা। যদি কেউ ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ও ভর্তি জালিয়াতি করে তার ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আশা করছি, আমরা সঠিকভাবে ভর্তি পরীক্ষার সব কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারব"।