চ ট্ট গ্রা ম বি শ্ব বি দ্যা ল য়

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

১৯৬৬ সালে মাত্র ৪টি বিভাগ নিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। আয়তনে দেশের সর্ববৃহৎ ২১০০ একরের ক্যাম্পাস এই শিক্ষাঙ্গনের। বর্তমানে রয়েছে ৪৮টি বিভাগ, ৬টি ইনস্টিটিউট এবং ৫টি গবেষণা কেন্দ্র। ২০১৯ সালের প্রকাশিত ডায়রি অনুযায়ী বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৭,৮৩৯ জন। আজ ১৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রাণের বিদ্যাপিঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের ভাবনা শুনে অনুলিখন করেছেন মাহবুব এ রহমান...

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আরও শিক্ষাবান্ধব হওয়া দরকার ২১০০ একরের এই ক্যাম্পাসকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধিত্ব করার সুবাধে দেখেছি বিশ্বের অনেক দেশের শিক্ষার্থী মুগ্ধ হয়েছে এত বিশাল ক্যাম্পাস এবং যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রতিদিন শাটল ট্রেন শিক্ষার্থীদের শহর থেকে আনা-নেওয়ার গল্পটি শুনে। ঘণ্টাখানেক ট্রেন ভ্রমণের যাওয়ার-আসার ক্লান্তি অবদমিত করতে বগি থাপড়িয়ে গান কিংবা সবুজে ঘেরা এই ক্যাম্পাসে ভালোবাসার গল্পগুলো আন্তর্জাতিক মহলে শুনানোর সময় গর্ববোধ করি। শাটলের সাম্রাজ্যের সৌন্দর্যের পাশাপাশি আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আরো শিক্ষাবান্ধব হওয়া দরকার। একদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সৌন্দর্যের পাশাপাশি সবার শিক্ষার গুণগত মানের দিক দিয়েও সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচনা করবে এই আশায় বুকবাঁধি। সেশনজটমুক্ত ক্যাম্পাস হতে চলারপানে শাটলের বেগে যে এগিয়ে চলা তা আরো সুদৃঢ় হবে, এক সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুপড়ির আড্ডা, গানের সঙ্গে তাল দেবে হাজারো পাস করে বের হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীর সফলতার গল্পজোট। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব মানচিত্রের সবাই চিনবে বাংলাদেশে একটি শাটলের সম্রাজ্য রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর স্নাতক/স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা হাজারখানেক শিক্ষিতরা সুশিক্ষিত মানুষ হোক। সুবিশাল এই ক্যাম্পাসে একটি সুন্দর পরিবেশ সৌন্দর্যবর্ধকি হিসেবে থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম ছড়িয়ে দিক; ৫৩-র পাদদেশে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এটিই বাসনা। মুসাদ্দিকুল ইসলাম অর্থনীতি বিভাগ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্কটা হোক জ্ঞানের প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ সময় অতিক্রম করে আজ ৫৩-তে পা রাখছে প্রাণের ক্যাম্পাস। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে রয়েছেন জ্ঞানী, উচ্চতর ডিগ্রিধারী এবং দক্ষ শিক্ষক মহোদয়রা। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা এবং বিভাগ কেন্দ্রিক। উদাহরণস্বরূপ : একজন ইতিহাস পড়ুয়া শিক্ষার্থী চাইলেই তার পছন্দের বিষয় সাংবাদিকতা সম্পর্কে জানতে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষকের কাছে ছুটে যেতে পারে না। নিজ বিভাগের পড়াশোনার বাহিরে একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর জ্ঞান আহরণের ইচ্ছা থাকতে পারে অন্যান্য বিভাগের বিষয়ের ওপর। এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় আমাদের ভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের সহায়তা পাওয়া কঠিন হয়। আইন বিভাগের শিক্ষকের সাহচর্য পেতে হলে আইনের শিক্ষার্থী হওয়া আবশ্যক। বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র-শিক্ষক গতানুগতিক এই সম্পর্কে পরিবর্তন আসুক। একজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সম্পর্কটা শুধুমাত্র নিজ ডিপার্টমেন্ট কেন্দ্রিক না হয়ে, ছড়িয়ে পড়ুক জ্ঞানের আলো সর্বত্র। উন্মুক্ত হোক শিক্ষার দ্বার। তাসরীন সিদ্দিকী তাসিয়া ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ। একটি বিশ্বমানের শিক্ষাঙ্গন হিসেবে আবিষ্কার করতে চাই স্বায়ত্তশাসিত দেশসেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের ঠিকানা নিশ্চিত করা আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল। এখন আমি সেই স্বপ্নের একজন গর্বিত সদস্য। ভাবতেই একরাশ ভালোলাগা মনটাকে প্রফুলস্ন করে দেয়। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আমার ভাবনা-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শতভাগ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হোক। রাজনৈতিক কিংবা দলীয় মতাদর্শ যেন কোনভাবেই আমাদের সংকুচিত করে না দেয়- সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে মুক্তচিন্তার অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। এখানে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে মনোজগতের উৎকর্ষ সাধিত হয়। সেই সঙ্গে বন্ধ হোক নিয়োগবাণিজ্য। প্রসাশনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে- সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে জাতীয় স্বার্থে সংকীর্ণতা পরিহার করলে বিশ্ববিদ্যালয় অনেক আগাবে। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্বমানের শিক্ষাঙ্গন হিসেবে আবিষ্কার করতে চাই। গবেষণা-উদ্ভাবন এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় চবি যেন তার স্বতন্ত্র অবদান রাখতে পারে- একবিংশ শতাব্দীর একজন সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে সেটাই আমার কাম্য। চবির উদর থেকেই জন্ম নিক আগামীর শ্রেষ্ঠ সন্তান- সেই প্রার্থনা। রহমাতুলস্নাহ্‌ রাফি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ। এই পরিবারের সদস্য হতে পেরে গর্ববোধ করি ২১০০ একরের ক্যাম্পাসে হাঁটার সময় আপনি একটা আলাদা জগৎ তৈরি করতে পারবেন। কাটারপাহাড় রাস্তায় একা একা হাঁটতে গিয়ে ময়ূরাক্ষীর মতো নদী বানাতে না পারলেও হিমালয় বানাতে পারবেন নিশ্চিত। এত বিশাল আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ক্যাম্পাস যে কাউকে মুগ্ধতা ছড়াতে বাধ্য। এই সবুজ-শ্যামল রোমাঞ্চকর ক্যাম্পাসের কিছু জিনিসের অভাব বোধ করি। খুব শিগগিরই একটা সমাবর্তন চাই, আরো চাই প্রাণের চারুকলা ইনস্টিটিউটটা শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসুক। চারুকলার ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য। আমরা আমাদের বিভাগের ১ম ব্যাচ। আমাদের পরে আরেকটা ব্যাচ এসেছে ক্যাম্পাসে। সিনিয়র জুনিয়র রাতভর আড্ডা চলে। শহীদ মিনার, ফরেস্ট্রি থেকে স্টেশন সব জায়গায় আমাদের বিচরণ। আমি গর্বিত, সত্যি অনেক ভাগ্যবান মনে করি নিজেকে চবিয়ান হতে পেরে। প্রিয় ক্যাম্পাসের জন্য অনেক শুভকামনা জন্মদিনে। রাইসুল ইসলাম \হডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ। জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলো পার করছি এই ক্যাম্পাসে শুভ জন্মদিন আমার প্রাণের ক্যাম্পাস। শুভ জন্মদিন পাহাড় আর শাটলের রাজ্য। ভালোবাসার আরেক নাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। নামের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে মায়া আর ভালোবাসা। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় আর প্রিয় বিষয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ নিয়ে পড়ছি। জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলো পার করছি। সব ভাবনা ছিল চবিকে ঘিরেই। প্রিয় প্রতিষ্ঠানকে খুব ভালো পর্যায়ে দেখতে চাই। শিক্ষা, গবেষণাসহ সব দিক থেকেই সমৃদ্ধ হবে চবি। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলবে সব কিছুকে পার করে এটাই কামনা। ফারজানা আমিন সোনিয়া যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।