রা জ শা হী বি শ্ব বি দ্যা ল য়

আবিরের রঙে রাঙানো একটি দিন

প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আরাফাত শাহীন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে রঙিন দিনগুলোর মধ্যের্ যাগ-ডে অন্যতম। সাধারণত র্'যাগ' শব্দটা শুনলেই একটা ভীতিকর অবস্থা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু এটি মূলত ভীতিকর তেমন কিছু নয়; বরং এটি আনন্দের উপলক্ষ নিয়ে আমাদের মাঝে এসে হাজির হয়। এই দিনে আমরা আনন্দে মাতোয়ারা হই; রঙের ফুলঝুরিতে মেতে উঠি উৎসবে। দেখতে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর পার করে অনার্স শেষ করে ফেলেছি। সত্যি বলতে এই চার বছরে আমরা তেমনভাবে ক্লাস পার্টি করার সুযোগ পাইনি। তাই চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা চলাকালীন সিদ্ধান্ত হয়, ভাইভা শেষ হলেই আমরার্ যাগ-ডে পালন করব। আমার কয়েকজন বন্ধু- বিশেষ করে আর্য্য চাকমা, আখতারুজ্জামান রিপন, মেসবাহুল ইসলাম, জিহান, বিপস্নব ইসলাম, তাসনুভা আমিনসহ অনেকেই এই ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে আসে। মাত্র এক সপ্তাহের মাঝেই টাকা তোলা থেকে শুরু করে সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করা হয়। বন্ধুদের ব্যাপক তৎপরতার ফলেই অতি দ্রম্নত এমন একটা আনন্দপর্ব সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। আকাশে মেঘের ঘটঘটা আমাদের মনে অনুষ্ঠান পালনের ব্যাপারে সামান্য দ্বিধার সৃষ্টি করলেও সবার আন্তরিক ইচ্ছার ফলে সেই দ্বিধা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। আমরা প্রায় সত্তর জন বন্ধু যথাসময়ে শহীদুলস্নাহ্‌ কলাভবনের সামনে এসে হাজির হয়ে গেলাম। বন্ধু হাবিব ধবধবে সাদা টি-শার্ট নিয়ে হাজির হয়ে গেলে ঝটপট সেটা আমরা সবাই পরে নিলাম। তারপর শুরু হলো অদ্ভুত সব আঁকিবুঁকি। কে যেন আবির মাখানোর শুরু করল। তারপর সবাই মিলে একে অপরকে চলল আবির মাখানোর কাজ। কিছুক্ষণ যেতেই দেখা গেল আমাদের মুখ কিম্ভূতকিমাকার হয়ে গেছে। তবে তাতে কারো কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা ছিল। আমরা সবাই আনন্দে মেতে উঠলাম। আমাদের হৈহুলেস্নাড় দেখে সবাই আমাদের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল। এরপর সাউন্ডবক্সে গান বেজে উঠলে, আমরা গানের তালে তালে নেচে উঠলাম সবাই। এই নাচের আদৌও কোনো আগামাথা নেই। যে যেমন পারছে নেচে নিজের পারদর্শিতা প্রদর্শন করছে। একটা সময় খেয়াল করলাম, আমি নিজেও বন্ধুদের সঙ্গে ধুমসে নাচ শুরু করে দিয়েছি। গান এবং নাচে আমরা সারা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করলাম। প্রতিটি রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আমরা নেচেছি; গেয়েছি একদম গলা ছেড়ে। আমাদের অনার্স লাইফের সবচেয়ে আনন্দঘন দিন এটি। গানের তালে তালে আমরা পৌঁছে যাই বহু স্মৃতির সাক্ষী হয়ে চলা প্যারিস রোডে। এখানে যদি একটা গ্রম্নপ ফটো তোলা না হয় তাহলে কি আনন্দ পূর্ণতা পায়! নাচে উন্মাতাল থাকা সবাইকে লাইনে দাঁড় করাতে বেশ বেগ পেতে হলো। তারপর সবাই মিলে প্যারিস রোডে তোলা হলো ছবি। প্যারিস রোড থেকে আমরা চলে আসি শহিদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে। এখানে অবশ্য সবাই বেশ সুস্থির হয়ে বসে গ্রম্নপ ফটো তুলে নিলাম। এরপর শহীদুলস্নাহ্‌ কলা ভবনের সামনে সবাই মিলে বসে থেকে বিভাগের নাম অঙ্কন করলাম। বিল্ডিংয়ের চার তলায় উঠে ক্যামেরাম্যান সে ছবিটাও ধারণ করে নিলো। এরপর দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষ করে শুরু হলো সাংস্কৃতিক পর্ব। আমরা বন্ধুরা মিলেই সুর তুললাম গলায়। চার বছর পার হয়ে যাওয়ার পর একটা স্মৃতিময় দিন কাটানো গেল সবাই মিলে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, চমৎকার একটা দিন কাটিয়েছি বন্ধুদের সঙ্গে। আর কিছুদিন পরই আমরা সবাই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাবো। এই দিন কখনো ফিরে পাবো না কেউ। কিন্তু নিশ্চিত বলা যায়, স্মৃতি হিসেবের্ যাগ-ডে'র এই দিনটা হৃদয়ের মনিকোঠায় রয়ে যাবে। সত্যি সত্যি এই দিনটা একেবারে রঙে রঙিন হয়ে বুকের ভেতর বাজবে।