অন্যরকম মিলনমেলা

সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় জীবন মানেই ক্লাস, পরীক্ষা, এসাইনমেন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। সংক্ষেপে অনেক শিক্ষার্থী এসবকে আদর করে ডাকে প্যারা!! এই প্যারা থেকে কিছুটা হলেও অবসান ও বিনোদনের উদ্দেশ্যে একটি চমৎকার নৌকা ভ্রমণের আয়োজন করেন গবিসাসের সদস্যরা। গবিসাসের সব সদস্য পড়ন্ত বিকালে নৌকা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নলামের বংশী নদীতে নৌকা ভ্রমণ যেন আনন্দের মাঝেও বোনাস এক আনন্দ। ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আরও একটি মিনি ভ্রমণ হয় অটোরিকশাতে। বাইশমাইল থেকে নলামগামী অটোরিকশাগুলো ভ্রমণে নতুন ছন্দ প্রদান করে

প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
গবিসাসের শিক্ষার্থীদের পড়ন্ত বিকালে নৌকা ভ্রমণের আগ মুহূর্ত
মো. আশিকুর রহমান 'সব সখিরে পার করিতে নিবো আনা আনা/ তোমার বেলায় নিবো সখি তোমার কানের সোনা' জনপ্রিয় এই গানটি শুনে মনে লাড্ডু ফুটছে, নাকি হারিয়ে যাচ্ছেন কোনো রঙিন স্মৃতির মোহনায়? আমার মনে কিন্তু একটি ছবিই ভাসছে তা হলো নৌকা ভ্রমণ! প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা আর রঙিন স্বপ্ন যেখানে সুখের ছোঁয়া দিতে ব্যর্থ, সেখানে একটি নৌকা ভ্রমণ পারে নতুন সুখের দোলা দিতে। সম্প্রতি সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস) পরিবারের এমনই চমৎকার এক নৌকা ভ্রমণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এমনিতে সর্বদা মানুষের মাঝে সত্য, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে ব্যস্ত থাকলেও সাংবাদিকদের মনেও যে অন্যান্য মানুষের মতোই নানা ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা থাকে, এটা তারই প্রমাণ। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় জীবন মানেই ক্লাস, পরীক্ষা, এসাইনমেন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। সংক্ষেপে অনেক শিক্ষার্থী এসবকে আদর করে ডাকে প্যারা!! এই প্যারা থেকে কিছুটা হলেও অবসান ও বিনোদনের উদ্দেশ্যে একটি চমৎকার নৌকা ভ্রমণের আয়োজন করেন গবিসাসের সদস্যরা। গবিসাসের সব সদস্য পড়ন্ত বিকালে নৌকা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নলামের বংশী নদীতে নৌকা ভ্রমণ যেন আনন্দের মাঝেও বোনাস এক আনন্দ। ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আরও একটি মিনি ভ্রমণ হয় অটোরিকশাতে। বাইশমাইল থেকে নলামগামী অটোরিকশাগুলো ভ্রমণে নতুন ছন্দ প্রদান করে। ৪টি গাড়ি একসঙ্গে দৌড়ে চলে নদীর দিকে। একটি গাড়িতে ৩ জনের জায়গায় ৫ জন বসায় অন্যরকম আনন্দ পায় ভ্রমণকারীরা। কেউ কেউ বলে 'উড়ে চলছে গাড়ি সিসিমপুরে, আনন্দ মাখা আর হাসি খুশি গান, আমাদের নলামপুরে।' ২০ মিনিট পর গাড়ি পৌঁছায় বংশী নদীর উপকণ্ঠ নলাম ব্রিজে। গাড়িতে থাকার সময় ও ব্রিজে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ছবি তুলতে ভুল করেননি গবিসাসের বর্তমান দপ্তর সম্পাদক অনিক আহমেদ। কিছুক্ষণের মধ্যেই ২টি নৌকা ভাড়া করা হয় ঘণ্টাখানেকের জন্য। সবাই ধীরে ধীরে নৌকায় উঠে বসে। নদীর পানি শান্ত ছিল, সঙ্গে শান্ত ছিল চারপাশের পরিবেশটাও। শান্ত পরিবেশকে গরম করতে প্রথমেই গান ধরে গবিসাস পরিবারের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রোকনুজ্জামান মনি। সঙ্গে তাল মিলায় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রনি খাঁ ও গবিসাসের অন্য সদস্যরাও। 'মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা/ মিলন হবে কত দিনে/ সব সখিরে পার করিতে নিবো আনা আনা' ইত্যাদি নানা গানে জমে ওঠে পরিবেশ। এরপর হঠাৎ সন্ধ্যা নেমে আসে। চারিদিকের স্তব্ধতা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু সবার ছবি তোলাতে কিন্তু কোনো স্তব্ধতা আসে না। একের পর এক বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে ছবি তুলতে থাকে সবাই। গান গাইতে গাইতে সবাই যখন ক্লান্ত তখন বাঁশির সুরে সবাইকে মুগ্ধ করে নৌকার মাঝি। তার মন মাতানো বাঁশির সুর সবাইকে আকৃষ্ট করে গভীরভাবে। কিন্তু তার বিরহে ভরা প্রেমের কাহিনী পরক্ষণেই ব্যথিত করে সবার মন। অজানা কিছু অনুভূতি কাজ করে সবার মনে। ভ্রমণটি অল্প সময়ের জন্য হলেও একসঙ্গে সবার উপস্থিতিতে যে নৌকা ভ্রমণ আয়োজন করা হয় তার রেশ রয়ে যায় সবার প্রাণে। এই আনন্দঘন ভ্রমণে উপস্থিত ছিলেন গণবিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (গবিসাস) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আসিফ আল আজাদ। তিনি বলেন, 'ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সবসময়ই আনন্দের। আর যদি হয় নৌকাতে ভ্রমণ তাহলে তো কথাই নেই। খুবই ভালো লাগছে গবিসাসের বর্তমান সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে পেরে।' মাঝ নদীতে হঠাৎ সন্ধ্যা গাঢ় হওয়ার পর চাঁদ তার অপূর্ব জ্যোৎস্নালোকিত রূপ নিয়ে হাজির হয়। নদীর বুকে জ্যোৎস্নার দৃশ্য যে কতখানি মনোমুগ্ধকর তা স্বচক্ষে না দেখলে বোঝা যায় না। চারিদিকের নীরবতার মধ্যে পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ এক অদ্ভুত সুরের মূর্ছনা সৃষ্টি করেছিল। অল্প সময়ের এই ভ্রমণ হৃদয়ে গেঁথে থাকবে স্মৃতির পাতায় অনেকদিন। গবিসাসের সাংগঠনিক সম্পাদক এই ভ্রমণ সম্পর্কে বলেন, 'প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিতে খুব ভালো লাগে। প্রকৃতির কাছে গেলে কেমন যেন এক অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করি। মনে হয় সবকিছু অনেক সহজ হয়ে যায়। এবারের নৌকা ভ্রমণ ছিল অন্যরকম এক আনন্দের, সবাই গলা ছেড়ে একরাশ জলরাশির মধ্যে গান গাচ্ছিল, মাঝি বাঁশি বাজাচ্ছিল, গানের সুর প্রতিধ্বনি হয়ে এসে বারবার কানে বাজতেছিল, যে কি এক অনুভূতি তা মুখে বলে বুঝানোর উপায় নেই। সেদিন বারবার মনেমনে ভেবেছি, রাতটা যদি শুধু নৌকায় থেকে বাঁশি শুনে কাটিয়ে দিতে পারতাম তাহলে খুব ভালো হতো। কয়েকদিন পর ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাব, তখন খুব মিস করব এই সময়গুলোকে।' গবিসাসের সাধারণ সদস্য ধীরা বলেন, 'এই নৌকা ভ্রমণটি আমাদের জন্য খুবই আনন্দের ছিল। এই ভ্রমণের মাধ্যমে আমরা সবাই একসঙ্গে আড্ডা দেয়ার সুযোগ পেয়েছি, যা সাধারণত পাওয়া যায় না। নৌকা ভ্রমণ বাংলাদেশের অন্যতম একটি সংস্কৃতি- যা এখন বিলুপ্তির পথে। আমাদের এই নৌকা ভ্রমণ শুধু আনন্দ নয়, বাংলার সংস্কৃতিকে মনেও করিয়ে দিয়েছে। নানা ব্যস্ততার মাঝেও একসঙ্গে মিলে এই নৌকা ভ্রমণ যেন সবাইকে নিয়ে যায় ভিন্ন এক জগতে। যেখানে হাসি আছে, আছে সুখ, আছে আনন্দ আর অফুরন্ত ভালোবাসা। আর গবিসাস পরিবারের সবার মাঝে এই ভালোবাসা বিরাজ করুক সারাজীবন এটিই লেখকের প্রত্যাশা।