ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ভাস্কর্যে বিজয়গাথা

এদেশীয় ভাস্কর্য শিল্পও মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। দেশের সর্বত্র মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিকে ধারণ করে নির্মিত হয়েছে ভাস্কর্য। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৬ সালে নির্মিত হয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্মারক মুক্তবাংলা এবং ২০০১ সালে সব শহীদের স্মরণে নির্মিত হয় শহীদ স্মৃতিসৌধ। মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্দেশ্য দুটো- একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর পাশাপাশি একাত্তরের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা সংগ্রামের ইতহাস নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করা... 

প্রকাশ | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ফেরদাউসুর রহমান সোহাগ বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই বিজয়ের মাসে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি পতাকা, একটি মানচিত্র ও স্বাধীন বাংলাদেশ। নয় মাস রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে দেশমার্তৃকা মুক্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাঙালির সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিল একাত্তরের প্রভাব। বাঙালির সাহিত্যকে অনেকটা সমৃদ্ধ করেছে মহান মুক্তিযুদ্ধ। এদেশীয় ভাস্কর্য শিল্পও মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। দেশের সর্বত্র মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিকে ধারণ করে নির্মিত হয়েছে ভাস্কর্য। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৬ সালে নির্মিত হয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্মারক মুক্তবাংলা এবং ২০০১ সালে সব শহীদের স্মরণে নির্মিত হয় শহীদ স্মৃতিসৌধ। মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্দেশ্য দুটো- একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর পাশাপাশি একাত্তরের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা সংগ্রামের ইতহাস নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করা।  মুক্তবাংলা  মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মনে চির জাগরুক রাখতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্মারক ভাস্কর্য 'মুক্তবাংলা'। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থীর প্রাণের সঙ্গে মিশে আছে। আধুনিক স্থাপত্য শিল্পের আঙ্গিকে ১৯৯৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর মেইন গেটের উত্তর পাশে স্থাপিত হয় এই 'মুক্তবাংলা'। খ্যাতিমান স্থপতি রশিদ আহমেদের নকশার ভিত্তিতে একে অপরূপ সৌন্দর্যে রূপ দেয়া হয়। 'মুক্তবাংলা'র সাতটি স্তম্ভ সংবলিত গম্বুজের ওপর রয়েছে দৃঢ় মুষ্টিবদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার রাইফেল- যা সাত সদস্যের মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভার প্রতীক। প্রতিটি স্তম্ভ বিস্তৃত ও প্রসারিত হাত ধরাধরি উলস্নাসিত অবয়বে ইসলামী স্থাপত্যভিত্তিক আর্চ রচিত, চোখে লাল সূর্য উদয়ের প্রত্যাশা, সর্বনিম্নে বিস্তৃত সিরামিক বড় ইট লাগাতার আন্দোলনের নির্দেশক। উপর থেকে চতুর্থ ধাপে লাল সিরামিক ইট আন্দোলন ও যুদ্ধের প্রতীক, দ্বিতীয় ধাপে কালো পাথর শোক ও দুঃখের প্রতীক, তৃতীয় ধাপে সাদা মোজাইক সন্ধি ও যোগাযোগের প্রতীক এবং বেদির মূল মেঝে সবুজ মোজাইক নীল টাইলস শান্তির প্রতীক। সম্পূর্ণ অবকাঠামোটি সাতটি আর্চ সংবলিত একটি অর্ধ উদিত (উদিয়মান) সূর্য। মুক্তবাংলা সৌন্দর্য ও বিশেষত্ব উপভোগ করতে শিক্ষার্থী ছাড়াও প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর পদচারণা ঘটছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপ্রিয় মানুষের আগমন ঘটে এখানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতে ডানদিকে সবার নজর কাড়ে মুক্তিযুদ্ধের এই অনিন্দ সুন্দর স্থাপত্য কর্মটি।  শহীদ স্মৃতিসৌধ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত শহীদ স্মৃতিসৌধ সহজেই সবার নজর কাড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত সংস্কৃতি চর্চার লীলাভূমিতে রূপান্তরিত করার প্রত্যয় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে শহীদ স্মৃতিসৌধ স্থাপিত হয়। '৫২-র ভাষা আন্দোলন, '৭১-এর গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধসহ সব গণতান্ত্রিক সংগ্রামের শহীদদের স্মরণে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০০১ সালে তাৎপর্যপূর্ণ এ শহীদ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী হাশেম খান এবং প্রখ্যাত স্থাপত্যবিদ রবিউল ইসলামের দেয়া মডেল ও স্থাপত্য কর্মের ভিত্তিতে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মিত হয়। '৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা লাভের মূল ধারা ও অতীতের সব ঘটনাকে স্মরণ রাখতে যথাক্রমে ৩০ ফুট, ৪২ ফুট ও ৫২ ফুট উচ্চতায় ২ ফুট ৬ ইঞ্চি পুরু বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের সংমিশ্রণে এই স্মৃতি স্তম্ভটি স্থাপন করা হয়েছে।  ৭১ ফুট উঁচু পরিসরে ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি থেকে ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট ইটের চত্বরে এই স্তম্ভটি স্থাপিত। যার ওপর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ, পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের বেদি, প্রশস্ত পাটাতন, মাঝখানে ২১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট জাতীয় পতাকার দন্ড এবং দুই পাশে ১০ ফুট উচ্চতার ৩৮ ফুট ৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের বাংলাভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাবিষয়ক (দুটি) দেয়ালচিত্র সন্নিবেশিত হয়েছে।  বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, মরমী সাধক ফকির সম্রাট লালন শাহ, পাগলা কানাই ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাণী সংযোজন স্মৃতিসৌধটির গুরুত্ব আরো অর্থবহ করে তুলেছে। এ ছাড়া গোলাকার জ্যামিতিক বৃত্ত, ব্যাসার্ধ, স্তম্ভ ইত্যাদি স্থাপত্য দেশের বিভিন্ন ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে মনে করিয়ে দেয়।