স্মৃতিতে অম্স্নান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমি

১৯৭১! মহান মুক্তিযুদ্ধে সারাদেশে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। দেশের বিভিন্ন স্থানে গণকবরগুলো তার সাক্ষী। দেশের আনাচে-কানাচে গণকবরের মধ্যে অন্যতম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমি। একাত্তরের নির্মম দিনগুলোর স্মৃতি বহন করা বধ্যভূমি নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন- মো. উমর ফারুক

প্রকাশ | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাঙালিদের জীবনে সবচেয়ে গৌরবময় মাস ডিসেম্বর। এ মাসেই বাঙালিরা পেয়েছিল তাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। মায়ের আঁচল থেকে দূরে সরে না যাওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে বাংলার বীর সৈনিকরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে। দেশের বীর সন্তানরা স্বাধীনতা অর্জনে যখন আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ঠিক সে মুহূর্তে শুরু হয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যাকান্ড। ২৫ মার্চ থেকে চূড়ান্ত বিজয়ের আগমুহূর্ত পর্যন্ত পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আর এদেশীয় দোসর, রাজাকার, আলবদর দ্বারা নৃশংস হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, নিপীড়ন, লুণ্ঠন চালিয়েছিল। দেশকে মেধাশূন্য করতে হত্যা করা হয়েছিল দেশের মেধাবী বুদ্ধিজীবীদের। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চালানো হয় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। পৈশাচিকতার নির্মম সাক্ষ্য বহন করে চলছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমি। পাক হানাদার বাহিনী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের প্রায় নয় মাস ধরেই ক্যান্টনমেন্ট বানিয়ে রেখে ছিল। এই হলের ঠিক পেছনের দিকে এক মাইল এলাকা জুড়ে ছিল বধ্যভূমি। দীর্ঘ সময় ধরে পাকিস্তানি বাহিনী এবং রাজাকার ও আলবদররা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী কাটাখালি, মাসকাটা দীঘি, চৌদ্দপাই, শ্যামপুর, ডাশমারী, তালাইমারী, রানী নগর ও কাজলা থেকে এখানে ধরে এনে হত্যা করে কয়েক হাজার নারী-পুরুষকে। রেহাই পাননি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ছাত্র, কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও। জোহা হলের আধা মাইল দূরে পূর্ব কোণে এই গণকবরটি আবিষ্কৃত হয়। কবর খননের ফলে মিলে অজস্র মানুষের কঙ্কাল, খুলি। কবর থেকে মিলে ব্যবহৃত হাতঘড়ি, কলম, টুপি টাকার নোট, চাবির রিং, কানের দুল, মানিব্যাগ, ওড়না, আংটি ও চিরুনির ইত্যাদি। ১৯৯৭ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উদ্যোগে শহিদ বুদ্ধিজীবী মীর আবদুল কাইয়ুমের স্ত্রী অধ্যাপিকা মাস্তুরা খানম এবং শহিদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার স্ত্রী চম্পা সমাদ্দার স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি ফলকটি ভেঙে ফেলে। পরে এ স্থানে ১৯৯৯ সালে ১৬ ডিসেম্বর স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন উপাচার্য প্রফেসর সাইদুর রহমান খান। ৩১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট স্মৃতি স্তম্ভটি ২০০৪ সালে উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম। স্তম্ভের সামনে রয়েছে একটি মুক্তমঞ্চ। গোলাকৃতি একটি চৌবাচ্চা ভেদ করে চৌকোণাকৃতি স্তম্ভটি কয়েকটি ধাপে উপরে উঠে তুলনামূলক ছোট হয়ে গেছে। স্তম্ভের চৌকোণাকৃতি দেয়ালের এমন রূপ দেয়া হয়েছে যেনও গুলির আঘাতে দেয়াল এবড়োথেবড়ো হয়ে গেছে। এটি পাকিস্তানের পৈশাচিক বর্বরতা, নিষ্ঠুরতার সাক্ষ্য হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ৭১ সালে সেই নির্মম স্মৃতিগুলো এ দেশের নতুন প্রজন্মের কাছেই শুধু নয়, বিদেশিদের কাছেও আগ্রহের শেষ নেই। আত্মত্যাগের উজ্জ্বল মহীমায় উজ্জীবিত হয় তারা। সম্প্রতি চীনের সাংহাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রনিক্স পাওয়ার বিভাগের টিম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো পরিদর্শন এসে পরিদর্শন করেছেন। তাদের মতে, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মত্যাগ তাদেরও অনুপ্রাণিত করে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাজ করে যেতে হবে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।