বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

লেকের পানিতে 'অতিথি' পাখির জলকেলি

নতুনধারা
  ০৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল

লাল শাপলায় পূর্ণ লেকের পানিতে দিনভর পাখিদের ভেসে বেড়ানো, জলকেলিতে মেতে থাকা আর ওড়াউড়ি চলতেই থাকে। পুরোটা সময় পাখিগুলো খুনসুটি আর ছোটাছুটিতে মাতিয়ে রাখে পুরো ক্যাম্পাস। সকালের সূর্য আর কুয়াশার ঘুম ভাঙে এসব পাখির কিচিরমিচির শব্দে। দিনভর তাদের দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের নজর কেড়ে সন্ধ্যা নামতে শুরু হলেই পাখিরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে কোন গাছের ডালে রাতের জন্য আবাস গড়ে। ভোর হলেই আবার পাখিরা ফিরে আসে লেকগুলোতে। বলছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে আগত 'অতিথি' পাখির কথা।

শীতের আগমনি বার্তা নিয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক বা জলাশয়গুলো। বিগত বছরের তুলনায় ক্যাম্পাসে এবার পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সব পরিযায়ী পাখিদের ভালোবেসে অতিথি পাখিও বলা হয়। অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে হালকা শীতের আবহে কোনো ধরনের সংযোগ ছাড়াই প্রকৃতির বার্তায় লাখ মাইল দূর থেকে উষ্ণতার খোঁজে নাতিশীতোষ্ণ বাংলাদেশে ছুটে আসে অসংখ্য প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। মাঘ মাসের শেষ পর্যন্ত থাকে তাদের এই পদচারণা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের শেষে নগর। কিন্তু নগরের কোলাহলময়তা সেখানে পৌঁছায় না। ফলে পরিযায়ী পাখিদের জন্যও অনেকটা নিরাপদ আবাসস্থল এটি। এ ছাড়া ইট-কাঠ-পাথরের রুক্ষতাও কখনো ছুঁতে পারেনি এই নগরকে। তাই বলে এটি একেবারে গ্রামও নয়। গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দেয় লাল ইটের দালান। ঋতুর পালাবদলে যখন শীত আসে তখন অতিথি পাখির কলরবে দিনভর মুখর থাকে এ নগর।

প্রতি বছর নভেম্বরের শেষে ও ডিসেম্বরের শুরুর দিকে উত্তরের

শীতপ্রধান অঞ্চল সুদূর সাইবেরিয়া, চীন, নেপাল, জিনজিয়াং, মঙ্গোলিয়া অঞ্চল থেকে খাবার ও উষ্ণতার খোঁজে আসে অসংখ্য প্রজাতির এ সব পরিযায়ী পাখি। এসব পাখির মধ্যে থাকে- সরালি, গার্গেনি, পিচার্ড, মানিকজোড়, মুরগ্যাধি, জলপিপি, নাকতা, কলাই, ফ্লাইপেচার, পাতারি, চিতা টুপি, লাল গুরগুটিসহ নানা প্রজাতি। এ বছর শীত শুরু হতে না হতেই নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই বিপুলসংখ্যক পরিযায়ী পাখি আশ্রয় নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর এসব পরিযায়ী পাখি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসে বৃদ্ধি পায় দেশ-বিদেশ থেকে আগত অতিথি বা দর্শনার্থীর সংখ্যা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাধ্যমে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলোতে ১৯৮৬ সাল থেকে পরিযায়ী পাখি আসছে। এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ২০৪ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে এই ক্যাম্পাসে। এগুলোর ১২৬টি দেশি ও ৭৮টি বিদেশি প্রজাতির। ক্যাম্পাসে এখন পর্যন্ত ১০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখা গেছে। এরা মূলত দুই ধরনের। এক ধরনের পাখি ডাঙায় বা গাছের ডালে বসে বিশ্রাম নেয়, আরেক ধরনের পাখি পানিতে থাকে এবং পানিতেই বিশ্রাম নেয়। এদের বেশির ভাগই হাঁসজাতীয় পাখি। মূলত এরাই দর্শনার্থীদের বেশি নজর কাড়ে।

এ বিষয়ে পাখি বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি অনেকটা পাখির মাধ্যমে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বললেই অনেকের মনে ভেসে উঠে যে, শীতকালে এখানে অতিথি পাখি আসে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব পাখি নিয়ে গবেষণার কাজ করছি। এ ছাড়া সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।'

তিনি আরও বলেন, 'এ বছর এখন পর্যন্ত ছোট সরালি, বড় সরালি এবং লেঞ্জা হাঁসের দেখা মিলছে। এ ছাড়া একটা দীর্ঘসময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল ফলে উৎপাত কম হয়েছে আর এ কারণেই হয়তো বেড়েছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। তবে দর্শনার্থী এবং যানবাহনের উৎপাত কম থাকলে আরও বেশি পাখি আসবে বলে ধারণা করছি। ডিসেম্বরের শেষ এবং জানুয়ারি নাগাদ আরও নানা প্রজাতির পাখি ক্যাম্পাসে আসবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<83076 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1