কৃষি প্রকৌশলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভাবনায়ী

দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী। এক সময় বিশাল এই জনগোষ্ঠীর কাছে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কৃষিবিদদের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। কিন্তু বর্তমানে সব পণ্যের বাজার মূল্য বৃদ্ধি পেলেও সেই হারে বৃদ্ধি পায়নি কৃষিপণ্যের বাজার মূল্য। এদিকে শ্রমিক মজুরি, সার, কীটনাশক ও ফসল উৎপাদনের আনুষঙ্গিক জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা কৃষি কাজে আগ্রহ হারাচ্ছে। কারণ তারা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। এজন্য প্রযুক্তিকরণের মাধ্যমে কৃষিকে লাভজনক পেশায় পরিণত করতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমানোর পাশাপাশি বীজের অপচয়, ফসলের অপচয় ও ক্ষতি কমানো সম্ভব। এ সম্পর্কে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরা হলো। লিখেছেন-তানিউল করিম জীম

প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শ্রমিক সংকট ও কৃষি উৎপাদনশীলতা ধরে রাখতে হলে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই। একদিকে কৃষিজমির পরিমাণ কমছে, অন্যদিকে শ্রমিকরা শহরমুখী হচ্ছে। এজন্য শুধু উন্নত জাত ও সার ব্যবহার করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখা সম্ভব নয়। কৃষির প্রতিটি ধাপে যান্ত্রিকীকরণ সঠিকভাবে করতে পারলেই দেশের কৃষিজ উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কৃষকের দুঃখ ঘোচানো সম্ভব। এ ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের বহুলাংশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে। যা বর্তমান সরকারের অগ্রগণ্য বিষয়ও বটে। সেটা করতে হলে অবশ্যই প্রতিটি উপজেলায় দক্ষ কৃষি প্রকৌশলী। কিন্তু বিসিএসে কৃষি প্রকৌশলীদের টেকনিক্যাল ক্যাডার না থাকায়, সত্যিকার অর্থেই কৃষি প্রকৌশলীদের জ্ঞান কৃষকের দোড়গোড়ায় পৌঁছাচ্ছে না। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে দ্রম্নতই প্রতিটি উপজেলায় কৃষি প্রকৌশল ক্যাডার চালু করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করি। আবুল বাশার মিরাজ ৪র্থ বর্ষ, ২য় সেমিস্টার যান্ত্রিকীকরণের এই যুগে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত অংশটি এখন কৃষি। অথচ জিডিপিতে কৃষিই ১৯.৬ শতাংশ হারে অবদান রাখে চলেছে। এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিনিয়ত খন্ডিত হচ্ছে জমি। এখন প্রয়োজন স্বল্প জমিতে উৎপাদন বৃদ্ধি করা। কৃষি উন্নয়নের অন্তরায় কি হতে পারে এমন প্রশ্নে প্রথমেই সামনে আসে কৃষিপ্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তির অভাব। কৃষকের হাতে উপযুক্ত প্রযুক্তি আর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। কৃষকদের নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করা এবং এর সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করার জন্য কৃষি প্রকৌশলীদের প্রয়োজন। তাদের গবেষণাই পারে দেশীয় ভূমি আর আবহাওয়ার জন্য যুগোপযোগী কৃষিপ্রযুক্তির উদ্ভাবন করতে এবং কৃষকের সঙ্গে এসব যন্ত্র বা যন্ত্রাংশের মেলবন্ধন সৃষ্টি করতে। ওয়াহীদা তানজীম ৪র্থ বর্ষ, ২য় সেমিস্টার দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান রেখে চলেছে কৃষকরা। কিন্তু কৃষকের বর্তমান অবস্থা এখন নাজেহাল। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে তারা ফসল উৎপাদন করলেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। একদিকে বীজ, কীটনাশক, প্রযুক্তি ও সেচ সবকিছুর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে ধানের দাম হ্রাস পাচ্ছে। মোটকথা যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে আমাদের কৃষকের কায়িক পরিশ্রম কমার পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক দিয়েও লাভবান হবে। কৃষি যন্ত্র ব্যবহারে জমি তৈরি, নিড়ানি দেওয়া, ফসল কাটা, মাড়াই করা, শুকানো সবকিছুর আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব। কৃষকের কাছে কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার সহজীকরণ, নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন, প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিখাতে নতুন মাত্রা যোগ করতে আমাদের কৃষি প্রকৌশলীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষি প্রকৌশলীদের ক্ষেত্র বৃদ্ধি করে তাদের কাজের সুযোগ প্রদান করলে বাংলার কৃষি উন্নয়নের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। তানজিমা রিতা ৪র্থ বর্ষ, ২য় সেমিস্টার বিশ্বের অনেক দেশ কৃষি কাজে বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিকে একটি লাভজনক পেশায় পরিণত করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো সেটি সম্ভব হয়ে উঠিনি। উন্নত বিশ্বে কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করে এক সঙ্গে অনেক কাজ কম মূল্যে করা সম্ভব হচ্ছে। আমাদের দেশে এসব যন্ত্র বাইরে থেকে আমদানি করা হয়। এজন্য ক্রয়মূল্য বেশি হওয়ায় দেশের কৃষকরা তা ব্যবহার করে না। এ ক্ষেত্রে যদি কৃষি প্রকৌশলীদের মাঠপর্যায়ে নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে কৃষকের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সহজলভ্য যন্ত্রপাতি তৈরি করে কৃষকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে যথাযথ সেচব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটাবে। মাঠপর্যায়ে যদি কৃষি প্রকৌশলীরা তাদের অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা, সক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ পায় তবেই কৃষকের হাতে হাতে পৌঁছাবে প্রযুক্তি। কফিল উদ্দীন ২য় বর্ষ, ২য় সেমিস্টার