শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
জা হা ঙ্গী র ন গ র বি শ্ব বি দ্যা ল য়

অতিথি পাখির কলতানে মুগ্ধ ক্যাম্পাস

ক্যাম্পাসে এখন লেকগুলো জুড়ে পাখি আর পাখির কলতান। পাখিদের জলকেলির দৃশ্য দেখে দুই নয়ন ভরে যায়। প্রতিদিনই অতিথি পাখি দেখতে ক্যাম্পাসে আসছেন অনেক দর্শনার্থী। শীতপ্রধান দেশসমূহে এ সময়ে প্রচুর তুষারপাত হওয়ায় পাখিদের খাদ্য ঢেকে যায়। জীবন বাঁচাতে ও খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পাখিগুলো বাংলাদেশে আসে। আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে যেমন- সাইবেরিয়ান দেশগুলোতে তেমন হালকা শীত থাকে...
নূর হাছান নাঈম
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

বাতাসে শীতের ছোঁয়া। চারদিক ঘনকুয়াশা। কিচিরমিচির শব্দে হঠাৎ গা চমকে ওঠে। মাথার ওপরে নীল আকাশ আর চারদিকের জলাশয়ে অতিথিদের ডাকে ঘুম ভাঙে জাহাঙ্গীরনগরবাসীর। প্রতি বছর শীতের শুরুতেই এখানে শুরু হয় অতিথি পাখির আনাগোনা। শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গেই হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে অতিথি পাখি দল বেঁধে আসতে শুরু করে বাংলাদেশে। ঢাকার অদূরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোও এসব পাখির কলতানে মুখরিত। শীত এলেই যেন অন্যরকম প্রাণ ফিরে পায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র। দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা অতিথি পাখির বিচরণে মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। এ সময় ক্যাম্পাসে ভিড় জমান পাখিপ্রেমীসহ সব বয়সের দর্শনার্থীরা। অন্যান্য বছর থেকে এবারের চিত্র ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে। উপাচার্যবিরোধী আন্দোলের বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ একমাস বন্ধে ক্যাম্পাসে ছিল শুনশান নীরবতা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুতুড়ে পরিবেশ যেন মনে হয়েছে পাখপাখালির অভয়ারণ্য। ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ, শিয়ালের ডাকাডাকি, পাখিদের কিচিরমিচির, মাঝে মাঝে বাঁদরের লাফালাফি, কাঠবিড়ালির গাছে গাছে দৌড়াদৌড়ি মনে হয় বুঝি অরণ্য। পাখিরা এমন পরিবেশে নিজেদের রাজত্বে নিয়েছে ক্যাম্পাসের জলাশয় আর আকাশ। তাইতো জলাশয়গুলোর লিজ বাতিল করে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করায় এবার আগে ভাগেই আসতে শুরু করেছে পাখিরা। দীর্ঘ বন্ধ শেষে ক্যাম্পাসে এসেছে প্রাণচঞ্চলতা। মনে হচ্ছে, বুঝি নিথর দেহে প্রাণ ফিরে এলো। এবারে একটু ভিন্নভাবেই দর্শনার্থী ও শিক্ষার্থীদের বরণ করছে অতিথিরা। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে লাল শাপলার মাঝে উড়াউঠি হাজারো পাখির। কিছুক্ষণ পর পর আকাশে দলবেঁধে উড়াল দিয়ে ছুটে চলছে এক লেক থেকে অন্য লেকে। ডানা ঝাপটিয়ে পাখিরা পানিতে দিচ্ছে ঢেউয়ের তরঙ্গ। শীতের তীব্রতা ও খাবারের সংকট থেকে বাঁচতে প্রতি বছর সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপাল থেকে অক্টোবরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের জলাশয়গুলোতে আসতে থাকে অতিথিরা। তার উলেস্নখযোগ্য একটা অংশ আসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় ১২টি জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রশাসনিক ভবনের সামনের জলাশয়, জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল সংলগ্ন জলাশয়, ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের ভেতরের জলাশয়, সুইমিংপুল এলাকার জলাশয়ে অতিথি পাখির আধিক্য দেখা যায়। খায়রা, চখাবালি, বালিহাঁস, কাদাখোঁচা, হেরণ, কার্লিউ, বুনোহাঁস, ছোটসারস, বড়সারস, সরালি, পিচার্ড, মানিকজোড়, জলপিপি, ফ্লাইপেচাসহ নানা নামের পাখির আগমনে মুখরিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তবে এবার সরালি পাখির সংখ্যাটা একটু বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের তথ্যমতে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলোতে ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম অতিথি পাথি আসতে শুরু করে। তখন ক্যাম্পাসে ল্যাঞ্জা হাঁস, কার্কেনী, সরালিসহ ৪-৫ প্রজাতির পাখি আসে। এরপর আস্তে আস্তে পাখিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে ৫০-৬০ প্রজাতির পাখি আসে। \হলোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের হাসান বলেন, অতিথি পাখিদের আগমন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে ভিন্নভাবে পরিচিত করেছে। জাহাঙ্গীরনগরের সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে অতিথি পাখি যুক্ত হয়ে অন্যরকম সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়ায় এবার পাখির উপস্থিতি বেশ সন্তোষজনক। তাই আমাদের সচেতনতা এসব পাখিদের আসার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাখি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে প্রতিবছর পাখিমেলার আয়োজন করা হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা অনেক বেশি। পাখি আসার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে জলাশয় ঘেঁষে কোলাহল করা, গাড়ির হর্ণ বাজানো, শব্দ দূষণের মাত্রা কমিয়ে এনে পাখিদের নিরাপদ অভয়ারণ্য সৃষ্টির লক্ষ্যে এবারে মেলায় বিশেষ নজর থাকবে বলে তিনি জানান। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালের বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক লিফলেট ও বিলবোর্ড টানানো হয়েছে। ক্যাম্পাসে এখন লেকগুলো জুড়ে পাখি আর পাখির কলতান। পাখিদের জলকেলির দৃশ্য দেখে দুই নয়ন ভরে যায়। প্রতিদিনই অতিথি পাখি দেখতে ক্যাম্পাসে আসছেন অনেক দর্শনার্থী। মতিঝিল থেকে সপরিবারে পাখি দেখতে এসে ওমর ফারুক বলেন, প্রকৃতির সবুজের সঙ্গে পাখির কলতান একটা নৈসর্গিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। শাপলা ফুলের মাঝে পাখিদের জলকেলি আমাকে মুগ্ধ করেছে। নগরীর ব্যস্ততা রেখে পরিবার এ সন্তানদের পাখিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এখানে এসেছি। শীতপ্রধান দেশসমূহে এ সময়ে প্রচুর তুষারপাত হওয়ায় পাখিদের খাদ্য ঢেকে যায়। জীবন বাঁচাতে ও খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পাখিগুলো বাংলাদেশে আসে। আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে যেমন- সাইবেরিয়ান দেশগুলোতে তেমন হালকা শীত থাকে। হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আসা অতিথি পাখিদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সে জন্য পাখিদের বিরক্ত না করতে পাখিপ্রেমী ও দর্শনার্থীদের অনুরোধ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে