ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

'যুগোপযোগী শিক্ষা দেওয়া হয় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে'

ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাব্যবস্থার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান। গরিব শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে কম খরচে উচ্চশিক্ষার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশেই গাবতলী আন্তঃজিলা বাস টার্মিনালের পাশে সাড়ে পাঁচ লাখ বর্গফুটের এই সুবিশাল ক্যাম্পাসে প্রায় পঁচিশ হাজার শিক্ষার্থীকে উন্নত শিক্ষাসেবা দিচ্ছে এই ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান। প্রশস্ত ও খোলামেলা ভবনের সব তলাতে রয়েছে চলমান সিঁড়ি ও উন্নত লিফট ব্যবস্থা। গরিব শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার ৭ বছরে সর্বাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে দ্রম্নত এগিয়ে যাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই বিশ্ববিদ্যালয়। এক সময় যিনি একাধারে নিউজিল্যান্ডের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়, ইংল্যান্ডের ব্রাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং মস্কো টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৭৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৬ বছর বিশ্বব্যাংকের টেক্সটাইল অ্যাডভাইজার হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কাজ করেছেন। বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাতকে বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে নিয়ে গেছেন।

প্রকাশ | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
উপাচার্য, প্রফেসর ড. মকবুল আহমেদ খান
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেন কেন? বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার ধারণাটা আমার অনেক আগে থেকে মাথায় এসেছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষাব্রতী মানুষ। শিক্ষা প্রচারে নিবেদিতপ্রাণ। আমার শিক্ষকতার জীবন শুরু হয়েছে বিদেশে; ইংল্যান্ড, রাশিয়া, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। ১৯৮৫ সালের জুন মাসে আমি বিশ্বব্যাংকে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে সময়োপযোগী নীতিমালা ও কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে সংকট উত্তরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখি। ১৯৮৪-৮৫ সালের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয় ৩০০ মিলিয়ন ডলার থেকে ২০০০ সালে ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করায় আমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করি। এই কাজটা করতে করতে আমার মনে হতে থাকে আমি তো একজন শিক্ষক। কিন্তু দেশের উচ্চশিক্ষা প্রচারেও আমার কিছু করা দরকার। আমি দেখলাম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বিশাল এক শূন্যতা রয়েছে। সারাদেশে বছরে এইচএসসি লেভেলে পাস করে বের হচ্ছে ১১ লাখের অধিক শিক্ষার্থী। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র চলিস্নশ থেকে পঞ্চাশ হাজার শিক্ষার্থী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। আমি মূলত ওই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করি। ওইসব পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের মূল সমস্যা হলো দারিদ্র্য। কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিতে সমমানের গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রামের খরচ ১.৫ থেকে ২.৫০ লাখ টাকার মধ্যে সীমিত রেখে তাদের পড়াশোনা করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। এ ক্ষেত্রেও কথা আছে। যদি একান্তই এই টাকা জোগাড় করতে না পারে। সে ক্ষেত্রেও আমরা পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে রেখেছি। আমরা সেই সুযোগের নাম দিয়েছি ইটেপ প্রোগ্রাম (ঊফঁপধঃরড়হ :যৎড়ঁময ঊসঢ়ষড়ুসবহঃ চৎড়মৎধসসব)। আপনার বিশ্ববিদ্যালয় কোন বিষয়গুলোকে পড়াশোনার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিচ্ছে? প্রধানত এখানে প্রকৌশলবিদ্যা বা ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এর মধ্যে আছে- টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই), কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই), ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাক্টশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই)। এ ছাড়া আছে বিবিএ, এমবিএ, এক্সিকিউটিভ এমবিএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম (ফাইনাল), ইংরেজি বিএ (অনার্স), এমএ। টু্যরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট-টিএইচএম, অর্থনীতি- বিএসএস (অনার্স), এমএসএস (দুই বছর), এমজিডিএস (১ বছর)। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য চেষ্টা চলছে, এখনো অনুমোদন মেলেনি। আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা করা খুব দরকার। আগেই বলেছি আমি নিজেই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এজন বিশেষজ্ঞ। আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়টি সেমিস্টারে ভর্তি করানো হয়? আমাদের এখানে তিনটি সেশন বা সেমিস্টারে ভর্তি করা হয়। স্প্রিং- সেমিস্টার জানুয়ারি থেকে এপ্রিল, সামার- সেমিস্টার মে থেকে আগস্ট ও ফল- সেমিস্টার সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর। লেখাপড়ার মানের দিক থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ বাইরের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ? আমরা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেই। পর্যায়ক্রমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতিবছর শিক্ষদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। দ্বিতীয়ত, কী পড়াবেন? শিক্ষক নিজের ইচ্ছামত পড়াতে পারবেন না। প্রত্যেক বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক দিয়ে সিলেবাস অনুযায়ী মডিউল তৈরি করে দেওয়া হয়। এই মডিউলগুলো সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর ওপর পাঠদানের জন্য সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া থাকে। আমাদের পড়াশোনা করানোর মডিউলগুলো মোটামুটি বিশ্বমানের। কারণ এগুলো অনলাইনে চলে যায়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অর্জিত ক্রেডিট বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ছাড়া আমাদের এখানকার শিক্ষার্থীদের প্রায় ৮৫ শতাংশ কোন না কোন আয় বর্ধনমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। এখানে পড়াশোনা করতে আসা শিক্ষার্থীরা কী কী ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকে? এখানে সবচেয়ে বড় সুযোগ-সুবিধা হলো সময়মতো ক্লাস করানো হয়। শিক্ষার্থীরা শতভাগ ক্লাস করতে পারে। পড়াশোনার জন্য যে সুন্দর পরিবেশ দরকার সেটি তারা এখানে পাচ্ছে। ক্লাসরুমের বাইরে চিত্ত বিনোদনের জন্য বিশাল খোলামেলা পরিবেশ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বৃত্তির ব্যবস্থা কেমন? এখানে তিনটি বিষয়ে খুব নজর দেওয়া হয়। তারমধ্যে মূল যেটা হচ্ছে পড়াশোনার ফি অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম। তথাপি আমরা ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চারবার টিউশন ফি কমিয়েছি। প্রথমবার পনের শতাংশ, দ্বিতীয়বার ২০%, তৃতীয়বার ৪০% এবং সর্বশেষ চতুর্থবার ৫০% টিউশন ফি কমিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করানো হচ্ছে। আমরা স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছি। এর কোনো শাখা নেই। আমরা চাই, গরিব শিক্ষার্থীরা যেন স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকার হতাশায় না ভোগে। আমরা বলিয়াপুরে ১০ বিঘা জমি নিয়েছি। আরো ১০ বিঘা জমি ক্রয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা স্বল্পখরচে থাকার মতো হোস্টেল নির্মাণ করব যেন গরিব শিক্ষার্থীরা থাকতে পারে। 'ইটেপ' বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ এ ছাড়া আমাদের এখানে বড় একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সেটি হচ্ছে 'ইটেপ'। ইটেপ একটি এডুকেশনাল প্রোগ্রাম। এটি তিনটি ভাগে বিভক্ত। এর একটি হলো ক্যান্টিন। এটি প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী মিলে পরিচালনা করে থাকে। এখানের সব খাবার স্বাস্থ্যসম্মত। এই কেন্টিনে নিয়োজিত শিক্ষার্থীরা এখান থেকে যে বেতন পায় সেটা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে নেয়। আমরা ইউবি রিসাইক্লেক্স প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। এই প্রজেক্টের আওতায় রাজধানীর যে বর্জ্য আসে সেটি নিয়ে কাজ করব। মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি আমাদের প্রজেক্টকে সফল করতে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এখান থেকে পস্নাস্টিক, পেট্রোল, ধাতব ও জৈবসার প্রক্রিয়া করে উৎপন্ন করা হবে। এটার জন্য শক্তিশালী টিম গঠন করেছি। আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সাংগঠনিক কার্যক্রম কেমন? আমাদের একটি প্রক্টোরিয়াল কমিটি আছে। তাদের কাজ হলো প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টে বিভিন্ন সংগঠন থেকে দুই-তিনজন করে নিয়ে কাজ করা। এখানে প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্টে তিন থেকে চারটি ক্লাব আছে। এর মধ্যে আছে ডিবেট ক্লাব, স্পোর্টস ক্লাব, ড্রামা ক্লাব, কালচারাল ক্লাব প্রভৃতি। তাদের মধ্যে আন্তঃডিপার্টমেন্ট প্রতিযোগিতা যেমন হয় তেমনি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতাতেও আমরা অংশগ্রহণ করি। এখানে ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়। আমরা ক্লেমন কাপ, ইউল্যাব ফেয়ার পেস্ন গোল্ডকাপ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ানশিপ কাপ অর্জন করি। আমরা খেলাধুলায়ও যথেষ্ট সক্রিয়। আমাদের এখানে জাতীয় দলের ছয়জন খেলোয়াড় আছে। নাঈমুল ইসলাম, মাশরাফি, শাওন এদের মতো খেলোয়াড় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এখানে কি পূর্ণাঙ্গরূপে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান করা হয়? আমাদের ক্যাম্পাস গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে ডিজিটালাইজড। ক্লাসরুমগুলোতে ডিজিটাল পদ্ধতির সাহায্যে পাঠদান করা হয়ে থাকে। তবে সেটি সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড নয়। সব ক্লাস তো ডিজিটালি সম্ভবও নয়। যেমন প্রাকটিক্যাল ক্লাস। তবে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের ব্যবহার করা হয়। আপনাদের লাইব্রেরি কতটা সমৃদ্ধ? লাইব্রেরি অনেকটাই সমৃদ্ধ। আমরা সব সময় পাঠ্যপুস্তক হালনাগাদ রাখি। আমাদের লাইব্রেরির একটা পার্ট অনলাইনভিত্তিক করা হয়েছে। আমাদের মডিউল আর্কাইভ ডিপার্টমেন্ট আছে। এর কাজ হচ্ছে প্রত্যেকটা সাবজেক্টের যে মডিউল আছে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে বলতে পারি আমাদের লাইব্রেরি অনেক সমৃদ্ধ। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আপনার উপদেশ কী থাকবে? \হআমার শিক্ষার্থীদের গরিব হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে দেখি। আমার সন্তান হিসেবে দেখি। আমি কোনো দিনও তাদের অবমূল্যায়ন করি না। তাদের আরো মূল্য সংযোজন করে দেব আমরা। তারা যেন জীবনে শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত হতে পারে। লেখাপড়া করে শুধু ডিগ্রি অর্জন করলে চলবে না; যদি সে ডিগ্রি কোনো কাজে না আসে তাহলে লাভ কি? কাজেই শিক্ষার প্রমাণ দিতে হবে। কর্মে নিযুক্ত হতে হবে। দেশকে আরো এগিয়ে নিতে হবে। আমি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। এখানে তোমাদের দায়বদ্ধতা অনেক। দেশকে অনেক কিছু তোমাদের দিতে হবে। অবদান রাখতে হবে। য় ক্যাম্পাস ডেস্ক