শিক্ষাব্যবস্থায় সংকট ও এর উত্তরণ সম্পর্কে

আমেরিকা থেকে 'পাবলিক সেক্টর হেলথ কেয়ার ফাইন্যান্সিং প্যাটার্ন অব বাংলাদেশ' বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি, ইউরোপ থেকে উচ্চশিক্ষায় পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি, মালয়েশিয়া থেকে টু্যরিজম ম্যানেজমেন্টে এমবিএ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাসটেইনেবল টু্যরিজম ডেভেলপমেন্টে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯২ সালে তিনি সোফিয়া টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, বুলগেরিয়া থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রিপারেটরি গ্র্যাজুয়েশন এবং ইউকে থেকে বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডুকেশনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন-১৯৯৯ সালে

প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অধ্যাপক ড. জাকারিয়া লিংকন
ড. জাকারিয়া লিংকনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় 'বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সংকট ও এর উত্তরণে করণীয় সম্পর্কে ওঠে এসেছে জানা-অজানা তথ্যবহুল অনেক আলোচনা ও নির্দেশনা। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার নেতিবাচক ও ইতিবাচক বিভিন্ন দিক নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার ফলে শিক্ষাব্যবস্থার নেতিবাচক দিকগুলোর সমাধানেরও যে সহজবোধ্য উপায় তিনি খুঁজে পেয়েছেন তা উঠে এসেছে এই সাক্ষাৎকারে। একান্ত আলাপচারিতায় নিজ শিক্ষা এবং কর্মজীবন নিয়েও খোলামেলা আলোচনা করেছেন তিনি। যার সংক্ষেপিত অংশ তুলে ধরা হলো- বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা বিস্তারে একজন ফার্স্ট জেনারেশনের উদ্যোক্তা হয়েও পদে পদে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে আক্ষেপ করেন তিনি। তিনি বলেন, 'আমি ৪ বছর বয়সে শিক্ষা জীবন শুরু করে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত এক নাগাড়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেছি অর্থাৎ কর্মজীবন শুরুর পরেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বন্ধ করিনি। তিনি বলেন, আমার হাতে ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।' ১৯৯৫ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর দেশে এসে আমার বড়ভাই মরহুম এম এ হান্নান ফিরোজকে সঙ্গে নিয়ে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা প্রদানের জন্য ঝঃধসভড়ৎফ ঈড়ষষবমব এৎড়ঁঢ় প্রতিষ্ঠা করি- যা পরবর্তী সময়ে ঝঃধসভড়ৎফ টহরাবৎংরঃু তে উন্নিত হয়, এ ভাবেই শুরু। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা নানামুখী হওয়ার কারণে লেজেগোবোরে অবস্থা। চরম সমন্বয়হীনতার কারণে ন্যাশনাল কারিকুলাম, মাদ্রাসা শিক্ষা এবং ইংরেজি মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক সামাজিক বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। সরকার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এখন আর মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের সন্তানরা লেখাপড়া করে না। কেবল নিম্নমধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের সন্তানরাই সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে যাচ্ছে। ফলে, যে সামাজিক বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে তা ভবিষ্যতে জাতির জন্য মঙ্গলজনকতো নয়ই বরং ভয়ঙ্কর! ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো ব্রিটিশ কারিকুলাম অনুসরণ করলেও কেবলমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থে আমাদের শিশুরা ব্রিটিশ শিশুদের চেয়েও অ্যাকাডেমিক্যালি ২ বছর পিছিয়ে থাকছে। একটি জাতির উন্নয়নের পথে এটি একটি বড় বাধা। গত ২৫ বছর ধরে আমি একজন শিক্ষক, শিক্ষা সংগঠক এবং গবেষক হিসেবে কাজ করে যতটা বুঝতে পেরেছি তাতে সমন্বিত কারিকুলাম প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই। বিদেশি কারিকুলামের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন দেশীয় কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে। যাতে করে বাংলাদেশের শিক্ষা উন্নত দেশগুলোতে গ্রহণযোগ্য হয়। আর এটি করা তেমন কোনো কঠিন কাজ নয়। শিশুদের শিক্ষা জীবনের দুই বছর সাশ্রয় করার জন্য সরকারি নির্দেশনা প্রয়োজন। হাইকোর্টের আদেশ থাকা সত্ত্বেও বাচ্চাদের এখনো ভারি ব্যাগ বহন করতে হচ্ছে। এর থেকে শিশুদের মুক্ত করতে ১০ সেকেন্ডের সিদ্ধান্তই যথেষ্ট, এ জন্য ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন হবে না। দরকার শুধু সদিচ্ছা এবং সঠিক ব্যক্তিদের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। উচ্চশিক্ষার প্রচলিত ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষাকে যুগোপযোগী করার প্রাণপণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে কিন্তু প্রকৃত ফলাফল আসছে না। এর পেছনেও প্রধান কারণ পদ্ধতিগত ত্রম্নটি। বই এবং মুখস্ত বিদ্যা নির্ভর উচ্চশিক্ষা বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও প্রচলিত নেই। প্রকৃত পক্ষে উচ্চশিক্ষা হওয়া উচিত গবেষণাধর্মী, অ্যানালিটিক্যাল এবং অধিকতর ব্যবহারিক অর্থাৎ ইন্ডাস্ট্রি ওরিয়েন্টেড। উচ্চশিক্ষার কোন বিষয়টি আশু পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন শীর্ষক প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, সব চেয়ে বেদনাদায়ক হচ্ছে, একজন শিক্ষার্থী ব্যাচেলর (পাস), বিএড, বিপিএড, এলএলবি (পাস) এই চারটি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পরেও দেশে অথবা বিদেশে তার কোনো ডিগ্রিই স্বীকৃতি পাচ্ছে না। এই অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন, এমনকি ইতিপূর্বে এই সব একাধিক ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করে যারা কর্মক্ষেত্রে আছেন তাদেরও ব্যাচেলর (সম্মান) ডিগ্রির সমতুল্য করার ব্যবস্থা করতে হবে। আপনাদের নিশ্চয়ই জানা আছে যে, এক সময় এ অঞ্চলে মেডিকেল এডুকেশনে খগঋ শিক্ষা পর্যন্ত দেয়া হতো, গইইঝ ছিল না। দেশ ও জাতীয় স্বার্থে খগঋ ডিগ্রিধারীদের বিশেষ কোর্স করিয়ে গইইঝ ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছিল। বর্তমানেও যাদের একাধিক ব্যাচেলর ডিগ্রি আছে তাদের অর্জিত ওই ডিগ্রিগুলো সমন্বিত করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য মান অনুযায়ী স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি প্রদান করা যায়। আর এটা করা হলে বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবার উপকৃত হবে। শুধু পরিবারগুলো নয়- জাতি ও সরকার উপকৃত হবে। ওই সব গ্র্যাজুয়েট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উচ্চশিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে প্রবেশ করা সহজতর হবে। এতে দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এবং পুরো জাতি সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।