মেঘের রাজ্যে কিছুক্ষণ

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

আজাহার ইসলাম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ভোর ৫টা বেজে ১০ মিনিট। টুংটাং বেজে উঠলো মোবাইল ফোনের এলার্ম। অভ্যাসগতভাবেই এলার্ম বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। ঠিক ১৫ মিনিট পর পাপ্পু ভাইয়ের ডাক। আজাহার, তাড়াতাড়ি উঠ। বাকিদের ও ডাক। সাড়ে ৫টা বাজে। ঘুমিয়েছিলাম রাঙ্গামাটির ছাদ হিসেবে পরিচিত সাজেকের দু'টি রিসোর্টে প্রতি রুমে ৪/৫ জন করে। সবাই দ্রম্নত উঠে রেডি হয়ে নিলাম। উদ্দেশ্য মেঘের বিচরণ দেখতে কংলাক পাহাড়। সকাল ৬টায় চান্দের গাড়িতে (জিপ) করে মেঘের সঙ্গে সখ্যতা করতে যাব সবাই। আগের দিন বলা হয়েছিল কেউ গাড়ি মিস করলে তাকে রেখে যাওয়া হবে। রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম সবাই। রাস্তায় গাড়ির সামনে সবার সমাগম। উদ্দেশ্য কংলাক পাহাড়। ড্রাইভার আসছে না। সবাই অস্থির, কখন যাব মেঘের রাজ্যে বিচরণ করতে। এদিকে কেউ একজন লক্ষ্য করল রাস্তার ধার থেকে মেঘমালা দেখা যাচ্ছে। অনেকে আবার কোনোভাবেই বিশ্বাস করছে না। কেউ কেউ কুয়াশা বলে হাসা-হাসি করছে। একেকজন একেক ধরনের যুক্তি দিচ্ছে পক্ষে-বিপক্ষে। পাল্টাপাল্টি যুক্তি দিতে দিতেই ড্রাইভার এলো। তখন ৬টা বেজে ১৭ মিনিট। এদিকে কারো আর অপেক্ষা সইছে না। উঠে পরলাম গাড়িতে মেঘের সঙ্গে মিতালী করতে। চান্দের গাড়ি (জিপ) চললো কংলাক পাহাড়ের উদ্দেশে। কংলাক হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে এই পাহাড়ের চূড়া ভূ-পৃষ্ঠ হতে ১ হাজার ৮০০ ফুট সুউচ্চ। কংলাকে যাওয়ার পথে মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড়, আদিবাসীদের জীবনযাপন, চারদিকে মেঘের আনাগোনা দৃষ্টি কেড়ে নেয়। গাড়ি এসে থামলো পাহাড়ের নিচে। বাকি পথ হেঁটে উঠতে হবে। গাড়ি থেকে নেমে পাহাড়ি পথ বেয়ে সবার হাঁটা শুরু হলো। কেউ আবার ভিডিও করছে পাহাড়ি রাস্তা। একপর্যায়ে উঠে পড়লাম কংলাক পাহাড়ের চূড়ায়। যেখান থেকে মেঘমালার ভেসে বেড়ানোর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। কংলাকের চূড়ায় উঠার সঙ্গে সঙ্গেই দৃশ্য উপভোগ করার পাশাপাশি অনেকে সেলফি, ছবি তোলা, ভিডিও করায় মেতে উঠেছে দৃশ্যটিকে ধারণ করতে। মন বলে, 'আমি যদি পাখি হতাম, তবে মেঘের সঙ্গে উড়ে বেড়াতে পারতাম।' সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে যেন আরেক অপরূপ দৃশ্য হাজির। সূর্যের আলোয় মেঘমালা যেন নতুন সাজে সুসজ্জিত হয়ে উঠলো। তুলার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘ। পাহাড়ের গায়ে যেন আটকে যাচ্ছে। মেঘে ঢেকে যাচ্ছে পাহাড়। আহা! কি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সত্যি সত্যি মেঘের রাজ্যে হারিয়ে যেতে মন চায়। মন গেয়ে উঠে, 'মন চায় মন চায়, যেদিকে চোখ যায়, সেদিকে যাবো হারিয়ে'। হারানোর সপ্ন দেখতে দেখতেই সময় হয়ে এল ফিরে যাওয়ার। কিন্তু ফিরে যেতে মন চায় না। কবির ভাষায় 'যেতে নাহি মন চায়, তবু চলে যেতে হয়।'