বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বসন্ত এসে গেছে

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর
বসন্ত সাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
ভোরবেলা ঘুম থেকে আড়মোড়া ভেঙে যখন দেখি কুয়াশার চাদর সরিয়ে সূর্যের হাসি, তখন মনে পড়ে যায় বসন্ত এসে গেছে। মধ্য দুপুরে বৃক্ষতলে যখন শুকনো পাতা কুড়োনোর তাড়া নেই, তখন মনে হয় বসন্ত এসে গেছে। পড়ন্ত বিকেলে উদাস মনে যখন শুনি কোকিলের সুর, মনে পড়ে যায় বসন্ত এসে গেছে। হঁ্যা, বসন্ত এসে গেছে। ঘাসের পাতায় শিশির নিয়েছে ছুটি, কৃষ্ণচূড়া-পলাশের লাল আবিরে রক্তিম হচ্ছে পিচঢালা রাজপথ, আম্রকাননগুলো মুকুলের গন্ধে 'ম ম' করছে, পিঠাপুলির আসরেও মুখর আমেজটা কমে গেছে। সত্যিই বসন্ত এসে গেছে। ঋতু পরিক্রমায় আরো একবার শীত বিদায় নিল। ফাগুনের আগমনে স্মৃতির জোনাকিরা জেগে উঠেছে আবারও। লেপমুড়ি দিয়ে অলস সময় কাটানো কবিরাও হয়তো নীরবতা ভেঙে অজস্র কবিতার পশরা সাজাচ্ছে। মাঠে মাঠে কৃষকদের নতুন ধান লাগানোর ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। ক্যাম্পাস জীবনের ফাগুনগুলো আরো বেশি বসন্তময়। হলুদে হলুদে ছেয়ে যায় ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রান্তর। বৈশাখের মতো পহেলা ফাগুনে আনুষ্ঠানিক কোনো ছুটি থাকে না। তাতে অবশ্য ঋতুরাজকে সাদরে গ্রহণ করতে আয়োজন বা উদযাপনে নূ্যনতম ভাটা পড়ে না। তারুণ্য মানেই যে বাঁধনহারা পাখির মতো চঞ্চলতা, তারুণ্য মানে কবিগুরুর 'কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা।' হলুদভূষণে বসন্তবরণ থেকে শুরু করে ফাগুনের প্রতিটি সূর্যদোয়ই চিরঅম্স্নান বন্ধুত্বের ধারক। গহিন অরণ্যের পত্রপলস্নবীর নবযৌবন ফিরে পাওয়া, গোধূলিতে জলের বুকে সূর্যের অপূর্ব মিশে যাওয়া, উদাস পথিকের হারানো সুর খুঁজে বেড়ানো- বসন্তের একেকটি সৌন্দর্য যেন বৈচিত্র্যময় তারুণ্যের প্রতীক। বাসন্তী সাজে তরুণীর খোঁপায় গোঁজা রং-বেরঙের ফুল দেখে শিল্পী গেয়ে উঠেন, 'রঙিন এ বিহুর নেশা কোন আকাশে নিয়ে যায়।' অতিথি পাখির বিদায়ের আপস্নুততাকে পেছনে ফেলে পুবের বাতাসের স্পর্শ নাড়া দিয়ে ওঠে প্রতিটি প্রাণে। পরিবর্তনের চিরন্তন নিয়ম মেনে এক সময় বসন্তও বিদায় নেবে আমাদের মাঝ থেকে। আসবে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত। কিন্তু ভালোবাসার প্রতিটি স্পন্দন নিয়ে বসন্ত মিশে থাকে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের মণিকোঠায়। বসন্তের এ অবগাহন ছড়িয়ে যাক নীলাম্বর ছাড়িয়ে অসীম বিশালতায়, দিগ্বিদিক।