৬৮ বছরের বাংলা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের মাতৃভাষা। হয়তো এজন্যই আমাদের জীবনে ভাষার প্রভাব অনেক বেশি। অত্যন্ত গর্বের বিষয় হচ্ছে, এ বছরই আমরা মাতৃভাষা অর্জনের ৬৮ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি; ৬৮ বছরের এই সুদীর্ঘ যাত্রা শেষেও আমরা সম্পূর্ণ বাংলায় একটানা কথা বলতে পারি না। ভাষা যেন তার পুরানো সুতীব্র ভালোবাসার গতিতে নেই, তাই '৬৮-র বাংলা'- আহ্বানে ভাষাকে আরও বেগবান করতে কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কিছু শিক্ষার্থী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- মুজাহিদ হোসেন

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সবার আগে বাংলা ভাষা ব্যবহার চাই ১৯৫২ সাল থেকে আন্দোলন শুরু হয়েছে কিন্তু বাংলা ভাষা আজও প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেনি বা সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারছে না। এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা বাংলা ভাষা পেয়েছি। বাংলা ভাষা আমরা ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতে পারছি না। বিভিন্ন জায়গায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও ডাক্তারদের কাছ ইংলিশ ভাষা বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার হয়। ঢাকার আশপাশে যে কোনো রেস্টুরেন্টে তাকাইলে আগে ইংরেজি লেখা চোখে ভাসে তাহলে আমরা এত কষ্ট করে বাংলা ভাষার জন্য কেন রক্ত দিলাম। সুশীল সমাজের প্রতি আহ্বান সবার আগে বাংলা ভাষা ব্যবহার চাই। এমনকি বাংলাদেশের অনলাইন জগতে বাংলা ভাষাকে জিম্মি করে রমরমা ভাষা ব্যবসা জারি রাখার দুর্বৃত্ত চেষ্টা অব্যাহত আছে। ভাষা দসু্য ও ভাষা ব্যবসায়ীদের সামাজিক ও ব্যবসায়িকভাবে রুখে দিতে হবে। প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নাগরিকদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আলিফ আল আজাদ শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলা ভাষাকে আরো উন্মুক্ত করা হোক! ঐধঢ়ঢ়ু ওহঃবৎহধঃরড়হধষ গড়ঃযবৎ খধহমঁধমব উধু বলে স্মার্ট হতে চাওয়া মানুষ কমলেও দু'লাইনের কথায় গোটা দশেক ইংরেজি বলে স্মার্ট হওয়া মানুষ এখনো অহরহ। বিশ্ব আমাদের ভাষাকে দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্মান কিন্তু আমরা বাঙালিরাই এখনো দেশীয় পর্যায় পর্যন্ত সম্মান দিতে পারিনি। এখনো এমন মানুষ-ই বেশি- যারা অদ্ভুত শৈল্পিক বাংলা গানের চেয়ে অন্য দেশীয় গান শুনতেই পছন্দ করেন, গানের অর্থ বুঝুক আর নাইবা বুঝুক। আড্ডায় গান গাইতে বললে নির্দ্বিধায় দু'লাইন ইংরেজি গেয়ে মাথা দোলায়। আমরা চিনি না দলছুট এর দেওয়া কোনো রোদ্রস্নান, জানি না স্নিগ্ধ গাংচিলের শিরোনামগুলো। আনিসুল হকের মা না চিনলেও ম্যাক্সিম গোর্কির মা চিনতেই হবে, এমন জাতি আমরা। ৬৮ বছর পার করলেও, ইতিহাস জানতে চাইলে গোটা পাচেক শহিদের নাম-ই বলতে পারব না, তাদের আত্মত্যাগ আর বুঝব কি করে! আমাদের এই সময়ে আত্মত্যাগের দরকার নেই, যেটা অর্জিত আছে সেটাই শুধু ধারণ করতে হবে, লালন করতে হবে। কত বছর আগে স্বাধীনভাবে বাংলা বলতে পেরেছিলাম সে হিসেবের পাশাপাশি কতটা গর্বের সঙ্গে বাংলা বলছেন, বাংলা সংস্কৃতি কে চিনছেন সেটাও ভাবুন। আসুন বাঙালি হই, চোখে রঙিন চশমা না দিয়ে জীবনানন্দ-সুকান্তের চোখে বাঙলা দেখি। বাংলায় ফিরে আসি। পরিচিত যে ডাকেই যায়- বাড়ি তো ফিরতেই হয় সন্ধ্যা হলে, তাই না? নুসরাত তন্দ্রা শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। বাংলা ভাষায় চলছে অবাধ বিকৃতি ১৯৫২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ছাত্র-শিক্ষক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে যা পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষা আন্দোলন নামে পরিচিত। দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে বাংলা ভাষা প্রাণের বিনিময়ে সারা বিশ্বে একটি দুর্লভ মর্যাদা পেলেও বর্তমানে বাংলা ভাষায় চলছে অবাধ বিকৃতি। তথ্যপ্রযুক্তিগত উন্নয়ন, মুক্তবাজার অর্থনীতি, আকাশ সংস্কৃতি ও অবাধ তথ্য প্রবাহের ফলে বাংলা ভাষার বিকৃতি চলছে- যা জাতির জন্য ভয়াবহ। বর্তমানে প্রেক্ষাপটে নিজেদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়া সন্তানটি প্রথিত বাংলায় কথা বলতে জানে না কিন্তু এটাই যেন মা-বাবার জন্য গর্বের হয়ে উঠে। এ ছাড়াও বর্তমানে শিশুরা হিন্দি কাটুনের প্রতি ঝুঁকছে যার ফলে তারা ছোট থেকেই হিন্দির প্রতি পারদর্শী হচ্ছে। তারা 'ভকেট', 'হুদাই' এই ধরনের অদ্ভুত ভাষার সৃষ্টি করেছে। মনে রাখতে হবে, আমরা সেই জাতি, যেই জাতি মাকে 'মা' বলে ডাকার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছি- যা ইতিহাসে বিরল। তাই এই ভাষার মহত্বকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের ওপরই বর্তায়। জোবায়ের আহমেদ শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভাষা জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ভাষা জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যেখানে আমাদের জীবনে বাংলার পথচলা ৬ দশকেরও বেশি সময়ের। এই বছরই বাংলা ভাষা পূরণ করতে যাচ্ছে অর্জনের ৬৮ বছর। কিন্তু অর্জনের এতটা বছর পরও আমরা সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় একটানা কথা বলতে পারি না। বাংলা ভাষায় এখন আমরা মিশিয়ে ফেলি অন্য অনেক বিদেশি ভাষা। তবে অর্জনের এত বছর পরে এসে বাংলা যাতে তার শুদ্ধতম রূপটি হারিয়ে না ফেলে ৬৮-র বাংলা আহ্বানে বাংলা ভাষায় সঠিক ব্যবহার করা উচিত। বিদেশি ভাষা আমরা ব্যবহার করব কিন্তু এর যথেচ্ছ ব্যবহার না করে। যখন বাংলা বলব তখন শুধুই বাংলা এবং যখন বিদেশি ভাষা বলব তখন শুধুই বিদেশি ভাষা। কেননা, আমরা চাই, বাংলা আমাদের মাঝে শুধু বাহ্যিকভাবেই নয় বরং আত্মিকভাবেও যুক্ত থাকুক। বাংলা হবে সর্বময়, সবার মাঝে সবসময়। তাই আসুন, এই মাতৃভাষা দিবসে চেষ্টা করি বাংলার আহ্বানে সাড়া দিতে, ৬৮ বছরের এই যাত্রায় অন্তত ৬৮ সেকেন্ড বাংলায় কথা বলতে। মুসলিমা খাতুন শিক্ষার্থী, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়