ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাসে অভিজ্ঞতা অর্জনের হাতেখড়ি

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই স্মরণীয় হয়ে থাকে একজন গ্র্যাজুয়েটধারীর। পাঁচ বছরের এ সংক্ষিপ্ত সময়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই চেষ্টা করেন তার জীবনকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে। আবার কেউ কেউ জীবনের গন্ডিকে অতিক্রম করে, সময়ের অবহেলায় গা ভাসিয়ে দিয়ে হারিয়ে ফেলে জীবনের স্বকীয়তাকে। কিন্তু জীবনের এ স্বকীয়তাকে বহুদূর এগিয়ে নিতে কিছু শিক্ষার্থী জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ক্যারিয়ার উন্নয়নবিষয়ক সংগঠনে। কিন্তু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর কার্যক্রমে এর ভিন্নতা দেখা গেছে। পড়ালেখার পাশাপাশি অভিজ্ঞতা অর্জন আর আত্মনির্ভরশীলতার নেশায় মত্ত হয়েছেন তারা। চলুন জেনে নিই তাদের অভিজ্ঞতা আর অর্থ উপার্জনের হাতেখড়ির গল্পকথা- লিখেছেন মাহবুব রায়হান

প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আলীমের এএফসি ক্যাম্পাসের সবার পরিচিত মুখ আব্দুল আলীম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী আলীম একাধারে হিন্দি, চীনা, তামিলসহ অনেক ভাষা ইতোমধ্যে রপ্ত করেছেন। এসব ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারে জীবন যুদ্ধে হার না মানা এ মেধাবী মুখ। নানা অভিজ্ঞতার নেশায় আর নিজের-পরিবারের খরচ মেটাতে আলীম জড়িয়ে পড়েছে ক্ষুদ্র-ব্যবসায়। 'এএফসি' নামের এ দোকানে দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামলেই দেখা মেলে নানা পদের খাবার। তার কর্ণার থেকে নুডলস্‌, চপ, চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, গরমে শরবত, লাচ্চি, বেলের শরবত, কোল্ড কফিসহ নানা পদের খাবার খাওয়ায় মত্ত দেখা মেলে শিক্ষার্থীদের। দুই বন্ধুর বগুড়া দই হাট মাহমুদ-সরোয়ার দুই বন্ধু। মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ এবং সরোয়ার বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। কুষ্টিয়া শহরে অবস্থান করায় তারা ক্যাম্পাস টাইমে ডাইনা চত্বরে এবং সন্ধ্যা টাইমে ক্যাম্পাসের জিয়া মোড়ে তাদের দই ব্যবসায়ের কার্যক্রম চালায়। আবার রাত সাড়ে ৮টার ক্যাম্পাস বাসযোগে শহরে ফিরে যায়। শুক্রবার কুষ্টিয়া শহরের কাস্টম মোড় এলাকায়ও এটি বিক্রি করা হয়। তারা ছোট-বড় কয়েকটি বাটিতে দই বিক্রি করে থাকে। বড় বাটিগুলো ১৬০ থেকে ১৫০ এবং ছোট বাটিগুলো ৩০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকে তারা। সুদূর বগুড়া থেকে কাটুনযোগে এসব সুস্বাদু ও লোভনীয় দই এনে থাকে বলে জানায় তারা। জমিরের আলওয়ালা টেবিলের উপর সারি সারি ছোট-বড় কৌটা। কোনোটায় হরেক রকমের মধু, কোনোটায় নানা পদের দামি দামি বাদাম। কাজু, কাঠ, আখরোটের মতো বাদাম, কালোজিরা, জয়তুনের তেল, জয়তুন-ত্বীন ফল, মাশরুম ও ঘিসহ বিভিন্ন ধরনের গুড় এসব কৌটায় সংরক্ষিত। ক্যাম্পাসের জিয়া মোড়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় দেখা মিলবে জমিরের এসব সংগ্রহ। স্বাস্থ্য সচেতন শিক্ষার্থীরা এসব কিনতে ভিড় জমায় জমিরের দোকানে। জমির বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। 'ভেজালের ভিড়ে খাঁটি পণ্যের নিশ্চয়তা' স্স্নোগানকে সামনে নিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলে জানালেন জমির। দুই ক্লাসমেটের ফেয়ার পেস্ন গ্রম্নপ সাহিত্যবিষয়ক বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে তাদের সংগ্রহে। শিক্ষার্থীরা কম খরচে আনায়াসেই এসব বইপত্র সংগ্রহ করছেন ফেয়ার পেস্ন গ্রম্নপ থেকে। এম বি পাপ্পু ও হাবিবুলস্নাহ পড়ছেন লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষে। সন্ধ্যাবেলা সময়ের অপব্যবহার না করে জিয়া মোড়ে চেয়ার-টেবিল পেতে বসে তারা। তাদের সংগ্রহে দেখা মিলবে টি-শার্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি, প্যান্ট, থ্রি-কোয়ার্টারসহ আরো কয়েক পদের পোশাক। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কোল্ড ড্রিংকস ও মিনারেল ওয়াটারের অর্র্ডার নিয়ে থাকে তারা। ইউসুফের হালাল শপিং জোন সন্ধ্যা ৭টা। ইউসুফের শপিং জোনে গিয়ে দেখা মিলল বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা বার্ষিক টু্যরের জন্য টি-শার্ট অর্ডার দিচ্ছেন আর ইউসুফ তা খাতায় টুকিয়ে রাখছেন। এদিকে কেউ কিনছেন কোর্ট, হুডি, কটি, মোজা, বেস্নজার, জগার্সসহ নানা শীতের পণ্য। এ ছাড়া কেউ কেউ দরদাম করছেন, চাহিদার অনুকূলে থাকলে টুক করে পছন্দের পোশাকটি ক্রয় করছেন। এখানে শিক্ষা সফরের যাবতীয় পোশাকসামগ্রীর অর্ডার নেয়া হয় বলে জানালেন ইউসুফ।