জা হা ঙ্গী র ন গ র বি শ্ব বি দ্যা ল য়

প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড সিকিমে

প্রকাশ | ১৬ মার্চ ২০২০, ০০:০০

মাহমুদুর রহমান মানিক
অনিন্দ্য সুন্দর ভারতের সিকিম রাজ্যকে সৌন্দর্যের জন্য অনেকেই সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক শহর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় নয় হাজার ফুট উপরে অবস্থিত এই পাহাড়ি শহরে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য তো আছেই, ছোট এই শহরের সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। সুন্দরতো হবেই, কারণ প্রকৃতির রূপ ও মানুষের সুুশৃঙ্খল জীবনের দারুণ এক কম্বিনেশন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রওনা দিয়ে ভারতের সিকিম রাজ্যে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা। পাহাড়ি তিস্তা নদীর পাড় ঘেঁষে দীর্ঘ জার্নি শেষে যখন গ্যাংটক শহরে পৌঁছুই তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমে গেছে। রাতের গ্যাংটক শহরের এমজি মার্গের রাতের স্নিগ্ধ সৌন্দর্য নিমিষেই ক্লান্তির কথা ভুলিয়ে দেয়। পরদিন ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়ি গ্যাংটক শহরের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে সঙ্গে সিকিমের স্থানীয় খাবার মোমো টেস্ট করতেও ভুল হয়নি। শহরের একপাশে রোপওয়ে থেকে ছোট গ্যাংটক শহরের প্রায় সম্পূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সারাদিন ঘুরাঘুরি করে হোটেলে এসে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি- কারণ পরের দিন সকালে চলে যাব গ্যাংটক থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে লাচুংয়ের উদ্দেশ্যে। পথে যেতে যেতে চোখে পড়ে উঁচু উঁচু পাহাড়ি ঝর্ণা অসংখ্য ছোট বড় ঝর্ণার পানি পতিত হয়েছে তিস্তা নদীতে। তিস্তার পাড় ঘেঁষে ও অপরূপ তিস্তার পাহাড়ি রূপ দেখতে দেখতে কখন যে চার ঘণ্টার জার্নি শেষ হলো বুঝতেও পারলাম না। পাহাড়ি তিস্তা নদী উঁচু উঁচু পাথুরে পাহাড়েকে দু'ভাগে ভাগ করে এঁকে বেঁকে চলার সময় সিকিমে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে, এ অঞ্চলকে দিয়েছে জৌলুসতা। লাচুং সিকিম রাজ্যের নর্থ সিকিম ডিস্ট্রিক্টের একটি শহর। এটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪ হাজার ফুট উপরে অবস্থিত। এখানে তাপমাত্রা এতটাই কম যে রাতে মাইনাস ৩ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়। প্রচন্ড ঠান্ডায় রাত পার করে ভোরে বেরিয়ে পড়ি ইয়ামথাং ভ্যালির সৌন্দর্য দেখতে। ইয়ামথাং ভ্যালির বিশেষত্ব হলো- শুভ্র তুষা। আমাদের গাড়ি যতই ইয়ামথাং ভ্যালির দিকে এগুচ্ছিল বরফ আচ্ছাদিত সাদা সাদা পর্বত একের পর এক উঁকি দিয়ে যাচ্ছিল। আর সেই সাদা পাহাড় চূড়ায় সকালের সোনালি রোদ পড়ে স্বর্ণবর্ণ ধারণ করে। পর্বত চূড়ায় প্রকৃতির রূপের আলোর ঝটকা থেকে দৃষ্টি সরানো দায়। এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে চলে আসি সেই কাঙ্ক্ষিত স্থানে। শুভ্র বরফ ও সোনালি পর্বত সব মিলিয়ে যেনো স্বর্গ নেমে এসেছে মর্ত্যে অথবা স্বর্গের আলোক ছটার কিছু অংশ পড়েছে এখানে। যেভাবেই হোক শুভ্র সৌন্দর্য আমাদের এতটাই বিমোহিত করে যে, প্রচন্ড ঠান্ডার কথা আমাদের একবারের জন্যও মনে হয়নি। তুষার পাতের ফলে গাছ ও প্রকৃতি সাদা বরফে রিক্ত হলেও আমাদের মনে চলে আসে বসন্ত, এ বসন্তের রং রঙিন নয় সাদা আর সাদা যে সাদায় মনের মতো বসন্তের রূপ একে নেওয়া যায়। প্রকৃতির রূপের জন্যই বোধহয় স্থানীয়রা সিকিমকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড বলে থাকে। আমাদের টু্যর পস্ন্যানের পরের দিনটি ছিল বরফের মাঝে নীল পানির সাঙ্গু লেকের সৌন্দর্যে মনকে ভিজিয়ে নেওয়ার। কিন্তু ভাগ্য আমাদের অনুকূলে ছিল না অতিরিক্ত তুষারপাতের জন্য রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়া এবারের মতো ভ্রমণ পিপাসু অশান্ত মনকে শান্ত করতে হয়। তবে আমরাও বসে থাকার পাত্র নই সে দিনই চলে আসি পশ্চিম বঙ্গের শিলিগুড়ি শহরে সেখানে নেতাজি মোড় থেকে শুরু করে দর্শনীয় বেশ কয়েকটি স্থানে চলে আমাদের পদচারণা। আর শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়িতে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সান্নিধ্যে এসে একবারের জন্যও মনে হয়নি দেশের বাইরে এসেছি। আর এভাবেই স্মৃতির ডায়রিতে ভালো কয়েকটি দিনের বাস্তব গল্প ও ছবি এঁকে দেশে ফিরে আসি।