গ ণ বি শ্ব বি দ্যা ল য়

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর রঙিন আয়োজন

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনিক আহমেদ
দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিড়ে তুলনামূলক ছোট্ট একটি ক্যাম্পাস। ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু, পেরিয়ে গেছে প্রায় দুই যুগ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তবে প্রথম দেখাতে পাবলিক বলে ভুল করার লোক নেহায়েত কম নয়। প্রথমের জনক ও ব্যতিক্রমধর্মী এই প্রতিষ্ঠানের নাম গণবিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানীর অদূরে সাভারে অবস্থিত ৩৪ একরের প্রতিষ্ঠানটি আয়তনে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসে গর্ব করার মতো বিভিন্ন কিছুর মধ্যে গণবিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস) উলেস্নখযোগ্য একটি নাম। ক্যাম্পাসের ঘটনাগুলোকে পত্রিকার পাতায় তুলে ধরতে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করছে সংগঠনটি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি ২০১৩ সালের ১০ ফেব্রম্নয়ারি যাত্রা শুরু করে। দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাংবাদিক সংগঠনটির শুরুটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। নানা চড়াই-উতরাই পার করে বর্তমানে এটি ক্যাম্পাসে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। গবিসাস প্রতিষ্ঠার মূল কারিগর আসিফ আল আজাদের হাত ধরে বর্তমানে এর শেকড় বেশ গভীরে পৌঁছে গেছে। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়েই নয় বরং সারাদেশের ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার জগতে গবিসাস একটি পরিচিত ও জনপ্রিয় নাম। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গবিসাসের ৭ম বর্ষপূর্তি ও ৮ম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে বিশাল আয়োজন। 'সাধ আছে, সাধ্য নাই' অবস্থার কারণে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে নিয়মিতভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান বিশালাকারে পালন করা সম্ভব হয়নি। বলার মতো কেবল ২০১৮ সালে জমকালোভাবে ৫ম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এরপর এক বছর বিরতিতে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে নতুন কমিটি গঠনের পর থেকেই ৭ম বর্ষপূর্তি জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয় নতুন দায়িত্বশীলরা। সে লক্ষ্যে মাসখানেক আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামে টিম গবিসাস। পরিকল্পনা মোতাবেক টিমের প্রতিটি সদস্যকে আলাদা আলাদা কাজ ভাগ করে দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন গবিসাসের সাধারণ সম্পাদক মো. রোকনুজ্জামান মনি। তার অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতার মাধ্যমে পুরো টিমকে কাজে লাগিয়ে অনুষ্ঠানকে সফল করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। আর সার্বিক বিষয়ে দেখভাল এবং দিকনির্দেশনার কাজটি করেন সভাপতি মোহাম্মদ রনি খাঁ। টিমের প্রতিটি সদস্যের বিরামহীন পরিশ্রম, সাবেকদের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে নানা বাধা অতিক্রমের পর আসে বহু আকাঙ্ক্ষিত দিনটি। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, কেক কাটা, ফিচার প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাজানো হয় পুরো দিনের কার্যক্রম। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিকদের দাওয়াত করা হয়। এ ছাড়া সাভার, আশুলিয়ার প্রেস ক্লাবসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে এ আয়োজনে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। সবার অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিনব্যাপী আয়োজনের সূচনা হয়। এতে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, বাইরের সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেয়। শোভাযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে ব্যান্ড পার্টির শব্দ নতুন মাত্রা যোগ করে। শোভাযাত্রা শেষ করে উদ্বোধনী বেলুন উড্ডয়ন করা হয়। বেলুন আকাশের সীমানা পেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি যেন গবিসাসের বহুদূর এগিয়ে যাওয়াকেই ইঙ্গিত করছিল। এ পর্ব শেষ করে উদ্বোধন হয় ফিচার প্রদর্শনীর। বিগত বছরে বিশ্ববিদ্যালয়কে পত্রিকার পাতায় তুলে ধরতে নানা বিষয়ে ফিচার লেখেন সাংবাদিকরা। বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত এসব ফিচারের প্রদর্শনী দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। এ পর্বের আগেই অবশ্য দুপুরের খাবার সেরে নেন অতিথিরা। এসবের ফাঁকে ফাঁকেই বিভিন্ন সময় চলছিল ফটোসেশন। দারুণ এ আয়োজনের প্রতিটি মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দির দায়িত্বে ছিলেন দাপ্তরিক ফটোগ্রাফার রকিবুল ইসলাম অয়ন, এস এম নাহিদুজ্জাহান টুটুল, হ্লা মং উ মারমা, বরাতুজ্জামান স্পন্দনসহ বেশকিছু ফটোগ্রাফার। আলোচনা সভা শেষে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটা হয়। এ পর্বে সম্মানিত অতিথি এবং গবিসাসের উপদেষ্টা প্যানেলকে সম্মাননা স্মারক হিসেবে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এ ছাড়া বর্ষসেরা রিপোর্টার মো. রোকনুজ্জামান মনি এবং বর্ষসেরা ফিচার লেখক হিসেবে ফায়জুন নাহার সিতু ও অনিক আহমেদকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। আলোচনা পর্ব শেষ হওয়ার পর সংক্ষিপ্ত পরিসরে চা-চক্র সম্পন্ন হয়। এরপর দুপুরের রোদ শেষে বিকাল গড়াতেই শুরু হয় আয়োজনের মূল আকর্ষণ সাংস্কৃতিক পর্ব। এ পর্বকে মোট তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। প্রথম ভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মনোমুগ্ধকর নাচ ও গান পরিবেশন করা হয়। চাঁদের প্রাকৃতিক আলো এবং কৃত্রিম আলোর দারুণ সংমিশ্রণে অপরূপ রূপ ধারণ করা ট্রান্সপোর্ট ইয়ার্ডে উপস্থিত দর্শকবৃন্দ এ পরিবেশনা উপভোগ করতে থাকেন। তবে সাংস্কৃতিক পর্বের মূল আকর্ষণ ছিল দ্বিতীয় ভাগে, যার জন্য দর্শকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। অবশেষে দর্শকদের অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে সন্ধ্যার পরপরই মঞ্চে ওঠে রকধাঁচের দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড 'বাংলা ফাইভ'। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটাই ছিল দেশের কোনো ব্যান্ডের প্রথম পরিবেশনা। বাংলা ফাইভের বিদায়ই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ছিল না। তৃতীয় ভাগে চমক হিসেবে দর্শকদের জন্য অপেক্ষা করছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সংযোজন, গানের পাখিদের সংগঠন গণবিশ্ববিদ্যালয় মিউজিক কমিউনিটি। একঝাঁক তরুণ শিল্পীদের নিয়ে গড়ে ওঠা অমিত সম্ভাবনাময় সংগঠনটি আরো ঘণ্টাখানেক দর্শকদের গানের ভুবনে মাতিয়ে রাখেন। গানের ফাঁকে ফানুস আর আতশবাজির মাধ্যমে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশ ঝলমল হয়ে ওঠে। সাংস্কৃতিক পর্বের শেষ ভাগের ১০টি মিনিট যেন শুধুই গণবিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির জন্য বরাদ্দ ছিল। এ সময় গবিসাসের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও সংস্কৃতিমনা চরিত্র ইমরান হোসেন জনির দুটি গানে সব সদস্য নেচে গেয়ে দারুণভাবে উপভোগ করেন। এ গান শেষে ঘড়ির কাঁটা যখন প্রায় রাত ১০টা, তখন আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। মনোমুগ্ধকর এ আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, ডা. এড্রিক বেকার বস্নাড ফাউন্ডেশন, বৃন্ত, অগ্নিসেতু, সাধারণ ছাত্র পরিষদ, ডিবেটিং সোসাইটি, সমকাল সুহৃদ সমাবেশ, কালেরকণ্ঠ শুভ সংঘ, গণবিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, স্পোর্টস ক্লাব, নির্বাণসহ প্রায় সব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন গবিসাসের সাধারণ সম্পাদক মো. রোকনুজ্জামান মনি ও শাহনাজ আক্তার সাবা। পুরো আয়োজনে গবিসাসের বর্তমান সদস্যদের অন্যতম পাওয়া ছিল সাবেক সব কর্ণধারের একসঙ্গে পাওয়া। বিশেষ করে আসিফ আল আজাদ, আব্দুলস্নাহ আল কাউসার মিলন, মেহেদী তারেক, এস এম আহমেদ মনির, ইমরান হোসেন জনি, তাজবিদুল ইসলাম সিহাব, রিফাত মেহেদী, মুন্নি আক্তার, ওমর ফারুক, সাজ্জাদ সাজু, নাজমুল ইসলাম অনিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার উপস্থিত অন্যরকম মিলনমেলার সৃষ্টি করেছিল।