কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

মুকুলেই ফুটবে ফুল

প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

সিয়াম চৌধুরী
শিক্ষাথীর্রা সময় কাটিয়েছেন সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের সঙ্গে
চলতি বছরের ২৬ ফেব্রæয়ারি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম আবতের্নর শিক্ষাথীের্দর এক বছর পূতির্ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত হচ্ছে বষর্পূতির্র মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠান। কেক কাটা, র‌্যালি-সবই হলো। তবে অনুপস্থিত বাংলা বিভাগের শিক্ষাথীর্রা। সহপাঠীদের মনে প্রশ্ন-কোথায় তারা? এই অনুপস্থিতির কারণটা জানা গেল কিছুক্ষণ পরই। সবোর্চ্চ বিদ্যাপীঠে নিজেদের যাত্রা শুরুর এক বছর পূতির্ উপলক্ষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবষের্র বাংলা বিভাগের শিক্ষাথীর্রা সময় কাটিয়েছেন সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের সঙ্গে। জরাজীণর্ কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনে অবহেলায়-অনাদরে পড়ে থাকা জনা ত্রিশেক শিশুর সঙ্গে গান, আড্ডা, খেলাধূলা আর আহারের সেই দিনটির মাধ্যমেই জন্ম হয় ‘মুকুল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের’। প্রতিষ্ঠার পর সংগঠনটি আয়োজন করেছে কয়েকটি সেশন। এর দুটিই ছিল রেলস্টেশনে। তৃতীয় সেশনের আগে সংগঠনের সদস্যদের মাথায় এলো নতুন চিন্তা। কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে থাকে কয়েকটি সংগঠন। মুকুলের সদস্যরা তাই সুবিধাবঞ্চিত এমন শিশুদের খুঁজছিলেন, যাদের কাছে সহায়তার হাত পেঁৗছায় না বললেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে প্রায় বারো কিলোমিটার পথ হেঁটে খেঁাজ মিলল কোটবাড়ী এলাকার বিজয়পুর ইউনিয়নের ধনমুড়া গ্রামের। ছবির মতো সুন্দর একটি গ্রাম। আরও সুন্দর গ্রামের শিশুরা। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যতীত এখানে নেই শিশুদের শিক্ষার সমুচিত তদারকি। শিক্ষার আলো পেঁৗছে দেওয়ার লক্ষ্যে মুকুলের সদস্যরা ওই গ্রামটিকেই বেছে নিলেন নিজেদের পরবতীর্ সেশনগুলোর ঠিকানা হিসেবে। নতুন ঠিকানায় প্রথম সেশনে গ্রামের অভিভাবকদের কাছ থেকে মুকুল পেয়েছিল অভাবনীয় সাড়া। কুঁড়েঘরের সামনের এক উঠোনে বসল মুকুলের আসর। সংগঠনের সদস্যরা শিশুদের সঙ্গে গান গাইলেন, খেললেন, উপহার দিলেন, বিতরণ করলেন শিক্ষা ও খাদ্যসামগ্রী। মুকুলের সদস্য ফারহানা সুলতানা বলেন, ‘আমরা নিয়মিতভাবে এখানকার প্রায় ৪০ জন শিশুকে সপ্তাহে দুই দিন করে পাঠদান করছি। পাঠ্যবইয়ের শিক্ষার পাশাপাশি আমরা তাদেরকে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং শিক্ষা ও সচেতনতামূলক বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করি।’ মুকুলের মূল লক্ষ্য কী? সংগঠনের আহŸায়ক আবদুল্লাহ হক মোল্লা বলেন, ‘আর কয়েক বছর পরই আমরা নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ব। ছাত্রজীবনের শেষ ধাপটির কিছুটা সময় আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ব্যয় করতে চাই। আমরা মাসিক চঁাদা সংগ্রহের মাধ্যমে নিজেদের অথার্য়নে ফান্ড তৈরি করি। সেই ফান্ড থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছি শিশুদের জন্য সামান্য কিছু হলেও করতে। আর এই ব্যাপারটি কিন্তু আসে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই।’ সংগঠনের নাম মুকুল রাখার পেছনে অবদান হুসাইন আহমেদ সৌরভের। প্রথম সেশন শেষ করে ক্লান্ত সদস্যরা বসে ছিলেন রেলস্টেশনের প্ল্যাটফমের্। মুকুলের মতো পরিস্ফুটনের অপেক্ষায় থাকা শিশুদের বিকাশে কাজ করার লক্ষ্য আর প্রবল ইচ্ছা সবার চোখেমুখে। আটপৌরে সেই আড্ডায় সংগঠনের পরিচয় হিসেবে ‘মুকুল’ নামটি প্রস্তাব করেন সৌরভ। তালির সঙ্গে মাথা নেড়ে বন্ধুরা জানান সমথর্ন। সেই থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিকাশের লক্ষ্যে নিজ নিজ জায়গা থেকে চেষ্টা করে আসছে মুকুল, উদ্দেশ্য মুকুলের মতো পরিস্ফুটনের অপেক্ষায় থাকা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ফুলের মতো সুন্দর করে গড়ে তোলা।