অতিথি

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

মোহাম্মদ আব্দুল্লা হেল বাকী
আসমান সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। আলোকছটা হাই স্কুলের ফাস্টর্ বয়। লেখাপড়ায় যেমন ভালো তেমনি খেলাধুলাতেও। সে সবাইকে সহায়তা করে। তার সহায়তায় তার সহপাঠীরাও ভালো করছে। সবাই তাকে ভালোবাসে এবং সমীহ করে। সে সবার মধ্যমণি। গঁায়ের মেঠো পথে হেঁটে স্কুলে আসে আসমান। তার সঙ্গে আসে হিজল, রাগীব আর মাইনুল। বিশাল মাঠ পেরিয়ে নদী। নদীর পাড় ধরে অনেক দূর হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। এই নদী এক সময় খরস্রোতা ছিল। এখন বিগতযৌবনা। মাঝেমধ্যে চর জেগে গেছে। নদীর চরে চিনিসাদা বালু। পথে পড়ে চৌধুরীদের বেদানা বাগান। বেদানা বাগানটা যা সুন্দর! নয়নাভিরাম। দেখলে আসতে ইচ্ছে করে না। সবুজপাতার আড়ালে লাল-লাল বেদানা ঝুলে। মনে হয় আলোকসজ্জার বাতি। বাগানের চারদিক প্রাচীর ঘেরা। আসমানদের খুব ইচ্ছা করে বেদানাগুলো ছঁুয়ে দেখতে। কিন্তু চৌধুরীদের ভয়ে তাকানোও যায় না। আসমানরা যখন বাগানের কাছ দিয়ে যায়, চোরাচোখে তাকিয়ে দেখে আর আফসোস করে। তাদের ক্লাসের ট্যারা জসিম একদিন আসমানকে বলল, ‘চল, চৌধুরীদের বাগান থেকে বেদানা চুরি করব।’ আসমান ভয় পেয়ে গেল। ধরতে পারলে আর রক্ষে নেই! কিন্তু বাগানে ঢুকবেÑ একথা মনে হলেই একটা ভালোলাগা মনে ঢেউ খেলে যায়। এদিকে জসিমও নাছোড়বান্দা। প্রায়ই বলে বেদানাচুরির কথা। একদিন আসমানরা রাজি হয়ে গেল। জসিম মনে মনে খুব খুশি। তাদের বলল, ‘তোরা কোনো চিন্তা করিস না। কোনো ভয় নেই। রাতে বাগানে কেউ থাকে না। তা ছাড়া আমি তো আছি। সব জেনে-শুনেই বাগানে ঢুকব।’ সবাই মিলে ঠিক করলÑ সামনে বৃহস্পতিবার রাতে তারা বাগানে ঢুকবে। সেদিন পূণির্মা। নিস্তব্ধ রাতে, ঢলনামা জোছনায় তাদের অভিযান। আসমানদের মনে কিছু ভয়, কিছু কৌত‚হল আর কিছু দুঃসাহসিক অভিযানের নেশা। হিজল বলল, ‘জসিম কোনো ঝামেলা করতে পারে।’ রাগীব বলল, ‘ওতো আমাদের সঙ্গেই থাকবে, কী ঝামেলা করবে? সময় যত ঘনিয়ে আসছে, আসমানদের দুনুমুনু ভাব তত বাড়ছে। এক পা এগোই তো দু’পা পেছায়। মন সায় দেয় না। আস্তে আস্তে চলে এলো সে সময়। তারা রওনা দিল। ফুটফুটে জোছনা। নদীর চরের চিনিসাদা বালুতে মিশে একাকার। নদীর নিস্তরঙ্গ জলেও জোছনার প্লাবন। চারদিকে অনাবিল সৌন্দযর্ ছড়ানো। সব মিলিয়ে এক অপাথির্ব পরিবেশ। সারাজীবন মনে ধরে রাখার মতো মুহূতর্। আসমানদের মনে হলো জোছনা গায়ে মেখে সারারাত নদীর পাড়ে বসে থাকবে। এমন সময় জসিম এসে হাজির। জসিম বলল, ‘কী হলো তোদের, আসল কাজের কথাই ভুলে গেলি? আয় আমার সাথে।’ সবাই গড্ডলের মতো জসিমকে অনুসরণ করা শুরু করল। বাগানের দক্ষিণ পূবর্ কোণ দিয়ে দেয়াল টপকে বাগানে ঢুকে গেল। ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ধরে ফেলল চৌধুরীদের লোকেরা। বাগানে ঘাপটি মেরে বসে ছিল তারা। তারপর যা হওয়ার তাই-ই হলো। জসিম দঁাত কেলিয়ে হাসতে লাগল। আসমানরা সব বুঝে ফেলল। এসবই জসিমের সাজানো নাটক। রাগে-অপমানে তারা চুল ছিঁড়তে লাগল। বন্ধু হয়ে জসিম এমন কাজ করতে পারল! তারাও পণ করল জসিমকে দেখে নেবে। বেশ কিছুদিন পর জসিম তার দাদার সঙ্গে আসমানদের বাড়িতে বেড়াতে এলো। জসিম বুঝতে পারেনি, আসমানের দাদাই তার দাদার পুরনো বন্ধু। আসমানকে দেখে সে ছটফট করা শুরু করল। এদিকে আসমান, হিজল আর রাগীব ঠিক করল, তাকে বাড়ির পেছনে পুরনো কুয়া দেখাতে নিয়ে যাবে। তারপর কায়দা করে ধাক্কা দিয়ে কুয়াতে ফেলে দেবে। তখন বুঝবে মজা। কত সরিষায় কত তেল! তাদের ফিসফাস সব শুনে ফেললেন হিজলের বাবা। তাদের সাবধান করে দিয়ে বললেন, ‘পুরনো কুয়া খুব বিপজ্জনক। এখানে অক্সিজেনের অভাব থাকে। কাবর্ন-ডাইঅক্সাইডে ভরা থাকে। এখানে কোনো প্রাণী পড়লে মারাও যেতে পারে।’ তখন তারা সেদিনের সব ঘটনা খুলে বলল। তিনি সব শুনে বললেন, ‘সে অন্যায় করেছে বলে তোমরাও করবে? তা ছাড়া সে তো আজ তোমাদের অতিথি। অতিথির আতিথ্য করা তোমাদের কতর্ব্য। আজ কিছুতেই তাকে অসম্মান করা যাবে না।’