সেতু ও ছাদবাগান

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

সাধন সরকার
খুব মনোযোগ দিয়ে বই পড়ার অভ্যাস সেতুর। প্রত্যেকটা বিষয় বুঝে ও খঁুটিয়ে খঁুটিয়ে পড়ে সে। এ কারণেই সেতু ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্র এবং শিক্ষকদের কাছে প্রিয় পাত্র। যদিও ক্লাসে তার বন্ধু খুব কম! সে নিজেই কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায় না, যদি কেউ নিজে থেকে আগ্রহ না দেখায়। কদিন ধরে সেতুর মাথায় একটা বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই যেন তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে পারছে না। সে বই পড়ে কয়েকদিন ধরে একটি শব্দের মানে খেঁাজার চেষ্টা করছে। ‘ছাদবাগান’। সেতুর আগেও গাছ লাগানোর প্রতি ঝেঁাক ছিল। গত কয়েকবার বাবার সঙ্গে বৃক্ষমেলায় গিয়ে তার মধ্যে এ শখ তৈরি হয়েছে। কিন্তু শহরে ভাড়া বাসায় থাকার কারণে বাবা-মা আর খুব বেশি আগ্রহ দেখায়নি। সে টিফিনের টাকা বঁাচিয়ে এবার নিজেই একটি ফুল ও একটি লেবুগাছ কিনে নিয়ে আসে। ছাদে গাছ লাগানোর কারণে ইদানীং এই গাছই তার নতুন বন্ধু হয়ে উঠেছে! তাই অন্যান্য যে কোনো সময়ের চেয়ে তার ছাদে যাওয়া বেড়ে গেছে। তার মতো বয়সে যেটুকু ভালোবাসা-প্রেম, ¯েœহ-ভালোবাসা থাকা দরকার সবটুকুই যেন তার ছাদবাগানকে ঘিরে। ছাদবাগানের গাছগুলোর সঙ্গে যেন তার নিত্যদিনের আবেগ-অনুভ‚তি খেলা করে। ছাদবাগান সেতুর দাদির খুব একটা পছন্দ নয়। পছন্দ নয় ঠিক তা নয়, বিকালবেলা সেতুর বারবার ছাদে যাওয়া আর দাপাদাপি করা দাদির ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। সেতু একটা বিষয় নিয়ে খুব চিন্তিত। তার গাছ দুটি বড় হচ্ছে ঠিকই কিন্তু গাছের সংখ্যা আর বাড়ছে না। একবার সেতুর দাদির মারাত্মক জ¦র হয়। কয়েকদিন পর জ¦র থেকে সেরে ওঠার পরও মুখ দিয়ে যা খায় তাই তিতা লাগে। ডাক্তার দাদিকে টক খাওয়ার পরামশর্ দেয়। সেতু তার গাছ থেকে লেবু পেড়ে নিয়ে দাদিকে দেয়। দাদির মুখে ধীরে ধীরে রুচি ফিরে আসে। এরপর থেকে সেতুর ছাদবাগানের প্রতি দাদির ভালোবাসা বেড়ে যায়। দাদি সেতুকে বলে, ‘আমিও তোমার সঙ্গে তোমার ছাদবাগান দেখাশোনা করব, বাগানের যতœ নিব।’ সেতু খুশি হয়। ছাদবাগানের প্রতি আরও উৎসাহ বেড়ে যায় সেতুর। এত বড় ছাদটা কেমন যেন ফঁাকা ফঁাকা লাগে সেতুর। সেতু ভাবে, ‘বাগানে যদি আরও গাছ থাকত!’ এরপর স্কুলের বাষির্ক পরীক্ষার ফলাফলে সেতু প্রথম স্থান অধিকার করে। পুরস্কার হিসেবে আরও তিনটি গাছের চারা পায় সেতু। খুশিতে আত্মহারা সেতু ও তার দাদি। সেতু ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণিতে ওঠে। এরপর চলে গেল আরও কয়েক মাস। বষার্কাল চলে আসে। সেতুর স্কুলে স্থানীয় নগরবাসী ও স্কুল কতৃর্পক্ষের উদ্যোগে ‘বৃক্ষরোপণ কমর্সূচির’ আয়োজন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা সম্পকের্ শিক্ষাথীের্দর মধ্য থেকে বক্তৃতার ওপর ‘বিশেষ পুরস্কার’-এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেতু ওই অনুষ্ঠানে তার বক্তৃতায় শহর এলাকায় বাসা-বাড়ির ছাদে বাগান করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। সেতু বলে, ‘নগরের প্রতিটি ছাদে বাগান করার উদ্যোগ নিলে নগরের সবুজায়ন যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি নগরবাসী প্রাণ ভরে নিঃশ^াস নিতে পারবে। নগরের প্রতিটি ছাদ হবে এক একটি সবুজ ক্ষেত্র। তা ছাড়া প্রয়োজনীয় ফল ও সবজির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মনও ভালো থাকবে।’ সেতুর বক্তৃতা শুনে উপস্থিত সবাই মুগ্ধ হয়ে যায়। সেতু বক্তৃতায় প্রথম স্থান অধিকার করে। আবারও পুরস্কার হিসেবে কতগুলো গাছের চারা পায় সেতু। সেতু এখন অনেক খুশি। তার উৎসাহ-উদ্দীপনা আগের থেকে অনেক বেড়ে গেছে। ছাদবাগান করার সুবাদে সেতুর পরিচিতি দিনকে দিন বেড়েই যাচ্ছে। স্কুলের সবাই এখন সেতুকে একজন ‘ছাদবাগানের বৃক্ষবন্ধু’ হিসেবে চেনে। যাদের বাড়ির সামনে গাছ লাগানোর কোনো জায়গা ছিল না, যাদের গাছ লাগানোর প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না তারাও এখন সেতুর দেখাদেখি বাসা-বাড়ির ছাদে বাগান করার তাগিদ অনুভব করছে। অন্যান্যরা এখন সেতুর খুব ভালো বন্ধু। ছাদবাগান করার ক্ষেত্রে সবাই এখন তার কাছ থেকে বিভিন্ন পরামশর্ নেয়। এমনভাবে দিন ভালোই কাটছিল। পড়ালেখার বাইরে সেতুর একটায় ভাবনা; যদি তার ছাদবাগানে গাছের সংখ্যা আরও বাড়ত তাহলে ভালোই হতো! হঠাৎ সেতু দুদিন ধরে স্কুলে যাচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক সেতুর বাবা-মায়ের কাছ থেকে জানতে পারে সেতুর মন খারাপ। জানা যায়, সেতুর ছাদবাগানের ছোট ছোট দুটি নিমগাছ মারা গিয়েছে। এজন্য সে স্কুলে যায়নি! স্কুল কতৃর্পক্ষও বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায়। পরের দিন সকালে সেতু ছাদবাগানে গিয়ে দেখে তার বাগানে পঁাচটি নিমগাছের চারা হাজির। সেতু অনেক খুশি হয়। সেতু প্রধান শিক্ষকসহ স্কুল কতৃর্পক্ষকে গাছ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেতুর ছাদবাগানে গাছের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অনেকেই এখন সেতুর ছাদবাগান দেখতে আসে, প্রশংসা করে। অন্যান্যরা উৎসাহিত হয়। সবার প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠে সেতু।