অন্তুর বুদ্ধি

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

আনজুমান নিশি
অন্তু পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। অন্তুর বাবা ব্যাংকের কমর্কতার্ আর মা এনজিওতে চাকরি করে। অন্তু খুব ভালো ছাত্র। ক্লাসের ফাস্টর্ বয়। অন্তু পড়াশোনায় যেন পিছিয়ে না পড়ে তাই একজন গৃহ টিচার রেখে দিয়েছে। অন্তু বন্ধুদের সঙ্গে বেশি মেলামেশা করতে পারত না, কারণ মেলামেশা করলে ওর বাবা-মা খুব রাগারাগী করত, বকা দিত। রবিন অন্তুর ভালো বন্ধু। রবিন আর অন্তু স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে এমন সময় ওর অন্য বন্ধুরা ক্রিকেট খেলছে। রবিন আর অন্তুকেও ওরা খেলার জন্য ডাকছে কিন্তু অন্তু রাজি হচ্ছে না। রবিন খেলার জন্য রাজি হলো। ওরা সবাই খেলছে অন্তু বসে বসে ওদের খেলা দেখছে। রবিন অন্তুকে জোর করে খেলার মাঠে নামালো, রবিনের দলেই নামলো অন্তু। অন্তুর ভালো ব্যাটিং দেখে সবাই অবাক, কারণ অন্তু আগে খেলেনি তারপরও এত সুন্দর ব্যাটিং করছে। অন্তুর কাছেও খেলতে খুব ভালো লাগছে। খেলার মধ্যেই মনে পড়ল ওর বাবার কথা কারণ ওর বাবা জানতে পারলে ওকে আস্ত রাখবে না। তাই অন্তু খেলা রেখেই বাড়ি ফিরে যায়। বাড়িতে গিয়ে মন খারাপ নিয়ে বসে আছে। অফিস শেষে প্রথমে ওর বাবা আসে পরে ওর মা আসে। সন্ধ্যার পরে অন্তু নিয়মিত পড়তে বসে আজকেও বসছে কিন্তু আওয়াজ করে পড়ছে না। বিষয়টি ওর মা দেখে অন্তুকে জিজ্ঞেস করল, অন্তু! বাবা তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? না মা! তাহলে মন দিয়ে পড়ছ না যে? মা! আমি একটা কথা বলতে চাই, তোমরা রাখবে? অবশ্যই রাখব, তুমি কত্ত ভালো ছেলে তোমার কথা না রেখে পারি? মা! আমাদের স্কুলের পাশে একটা খেলার মাঠ আছে ওখানে সবাই খেলাধুলা করে আমার বন্ধুরাও খেলে, আমারও খুব খেলতে ইচ্ছা করে, আমাকে ওখানে খেলতে দাও না? এই কথা অন্তুর বাবা অন্য রুম থেকে শুনে অন্তুর কাছে এসে চোখ গরম করে বলছে, কি বললে তুমি? তুমি পাড়ার দুষ্টু ছেলেদের সঙ্গে খেলে ওদের মতো হবে? বাবা! ওরা খুব ভালো। ওরা কেমন ভালো? তোমার চেয়ে ভালো ছাত্র? হ্যঁা। তাহলে তুমি ক্লাসের ফাস্টর্ কেন? ওরা হলো না কেন? ওরা প্রতিদিন খেলাধুলা করে, ঘুরতে বের হয়, অন্যদের সঙ্গে সময় দেয় তারপরও ওরা প্রায় আমার সমান সমান নাম্বার পায়। আমার মতো সারাদিন বই নিয়ে পড়ে থাকলে ওরা আমার চেয়ে ভালো করত। অন্তুর বাবা অন্তুর মুখ থেকে এমন কথা শুনে রাবেয়া (অন্তুর মা) দেখ তোমার ছেলে মুখে মুখে কীভাবে তকর্ করছে। রাবেয়া বলল, অন্তু ভুল তো কিছু বলে নাই? ও এখনো ছোট ওরও একটা মন আছে, সারাদিন একা একা ঘরে বসে থাকতে ওর ভালো লাগে? সাবির সাহেব (অন্তুর বাবা) রাবেয়ার কথা বেশ রেগে গিয়ে বলল, তার মানে অন্তুকে এসব কথা তুমি শিখিয়েছ? ...আমি কেন শেখাব? যা বলছে ওর নিজের থেকেই বলছে। এ ঘরে আমি যেভাবে বলব ঠিক সেভাবেই চলবে, অন্তু কোনো ধরনের খেলাধুলা করতে পারবে না, এটাই আমার শেষ কথা এ বলে সাবির সাহেব বেড রুমে চলে গেল। রাবেয়া অন্তুকে বোঝালো ওর বাবার কথাই রাখতে তা না হলে অনথর্ক ঘরে অশান্তি সৃষ্টি হবে। অন্তু ওর মায়ের কথাই শুনলো, ও পরদিন থেকে আর খেলতে গেল না। মি. জামানের ৭ম বিবাহ বাষির্কীতে সাবির সাহেবের পরিবারের সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে। মি. জামান হলো সাবির সাহেবের কলিগ। সাবির, রাবেয়া, অন্তু সবাই অনুষ্ঠানে গেল। অনুষ্ঠানের এক পযাের্য় মি. জামান তার ছেলে তমালের প্রশংসা করতে লাগল, তমাল ক্রিকেট খেলায় খুব ভালো ওর বয়সের সবাই তমালের কাছে হার মানে, পড়াশোনায় ও বেশ। তিনি আরও বললেন, বাচ্চাদের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে দিতে হবে, ওদের ঘুরতে সময় দিতে হবে, ওদের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে, ওদের ওপর আমরা জোর করে কিছু চাপিয়ে দিলে ওরা মানসিকভাবে দুবর্ল হয়ে পড়বে। অনুষ্ঠান শেষে অন্তু বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়িতে চলে এসেছে। রাতে অন্তুর বাবা অন্তুকে কাছে ডেকে নিয়ে বলছে, অন্তু তোমাকে আজ আমাকে একটা কথা দিতে হবে। থথজি বাবা! বলো? তোমাকে তমালের চেয়েও সেরা হতে হবে, পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও, বলো পারবে? থথঅন্তু তো ওর বাবার কথা শুনে খুব খুশি, ফুটফুটে হাসিমুখে বল, বাবা! আমি তোমার কথা রাখতে চেষ্টা করব। বছরের জুন মাসে সরকারিভাবে ঘোষণা দিল, সবাই স্কুলে ক্রিকেট খেলার আয়োজন করা হবে, বিজয়ী স্কুলকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার প্রদান করা হবে। খেলার দিন চলে এলো, তমাল আর অন্তু আলাদা আলাদা স্কুলে পড়ে তাই ওদের দুই দলে খেলতে হবে। অন্তুর বাবা খুব চিন্তিত, কারণ অন্তু তমালের চেয়ে ভালো না খেললে গবর্ করতে পারবে না। খেলা শুরু হলো। অন্তুর স্কুল বিজয়ী হলো। খেলায় ম্যান অব দ্যা ম্যাচ অন্তু। অন্তুর বাবা বেশ খুশি সবাইকে মিষ্টি বিতরণ করছে। তার দুদিন পর মি. জামান অন্তুদের বাড়িতে এলো, এসে সাবির সাহেবকে অন্তুর বুদ্ধির কথা বলল। সাবির সাহেব জানতে চাইল অন্তু কি করেছে? থথতুমি যেদিন অন্তুকে খেলতে সম্পূণর্ভাবে নিষেধ করেছ তার পরের দিন অন্তু আমাদের বাসায় গিয়েছিল। অন্তু আমাকে বলল যে, এমন একটা কিছু করতে যা তোমার গায়ে লাগে যাতে তুমি ওকে খেলতে নিষেধ না করো। আমি অনুষ্ঠানে ওই দিন যে কথাগুলো বলেছি সবই অন্তুর শেখানো কথা মাত্র! সত্যিই সাবির, তোমার ছেলের বুদ্ধির তুলনা হয় না, এমন ছেলেকে নিয়ে গবর্ করাই যায়। আমাদের সবার উচিত পড়াশোনার পাশাপাশি বাচ্চাদের খেলাধুলা করতে সময় দেয়া এতে ওদের মন উৎফুল্ল থাকে। বিকাল গড়িয়ে গেলে অন্তু বাসায় এলো, সাবির সাহেব অন্তুকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল, তোমার মতো বুদ্ধিমান ছেলেকে আমার ভুলের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছিলাম। দোয়া করি তুমি অনেক বড় হও।