টোনা টুনির দস্যিপনা

প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

মিজানুর রহমান মিথুন
আজ টোনাটুনির ভীষণ মন খারাপ। সেই সঙ্গে দুই ভাই-বোন মহাচিন্তায় পড়ে গেছে। কারণ মা সকালে তাদের সঙ্গে রাগ করে তার বাবার বাড়িতে চলে গেছেন। সেখানে গিয়ে মা তাদের কুনো মামাকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছেন, তিনি আর কখনো বাড়িতে আসবেন না। এ খরব জানতে পেরে টোনাটুনির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। টোনা-টুনির সঙ্গে তাদের মায়ের রাগ করার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর প্রধান প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে টোনাটুনি অনেক রাত করে প্রতিদিন ঘুমোতে যায় এবং রাতে চেঁচামেচি করে। উচ্চমাত্রায় শব্দ করে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করে ইত্যাদি। এতে তাদের বাড়ির অনেকেই খুব বিরক্ত হচ্ছেন। বাড়ির অনেকে তাদের মায়ের কাছে এ নিয়ে অভিযোগও করেছেন। তাই এ বিষয়ে টোনাটুনিকে তার মা বেশ কয়েকবার নিষেধ করেছেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। টোনাটুনি আপন মনে তাদের এই কমর্কাÐ চালিয়ে গেছে। মামাবাড়ি থেকে মা আর আসবেন না, একথা টোনাটুনি কিছুতেই মনে করতে পারছে না। মনে করতে গেলেই অঝোরে কান্না আসে। মাকে যে করেই হোক ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুনো মামার সঙ্গে মায়ের কাছে যাবে। যে মূল্যে মায়ের রাগ ভাঙ্গাতে হবে। টোনাটুনির মামাবাড়ি তাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে। সেই সঙ্গে রাস্তা-ঘাটও খুব একটা ভালো নয়। পুরো রাস্তাই নানা রকম খানাখন্দে ভরা। এ কারণে রাস্তায় কোনো গাড়ি-ঘোড়া চলতে পারে না। হেঁটে যেতেও অনেক কষ্ট হয়। হাসিমুখে এই কষ্ট মেনে নিয়ে টোনাটুনি মামার বাড়িতে মায়ের কাছে পেঁৗছালো। টোনাটুনিকে দেখে মায়ের রাগ মুহ‚তের্ই কমে গেল। প্রচÐ রোদের মধ্যে খানা-খন্দে ভরা রাস্তা পেরিয়ে আসার কষ্টে টোনাটুনির রাতে ভীষণ জ্বর এসেছে। এমনকি তারা জ্বরে দিক হারিয়ে প্রলাপ বকতে শুরু করেছে। শরীর কঁাপিয়ে জ্বর আসায় টোনাটুনি কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকল। জ্বরের কারণে কোনো রকম কথা কিংবা শব্দ টোনাটুনির কানে এলে তারা তা একেবারে সহ্য করতে পারছে না। তাই টোনা তার মাকে কাতর কণ্ঠে ডেকে বলেÑ ‘আম্মু সবাইকে একটু চুপ করে থাকতে বলো। কোনো রকমের শব্দ আমাদের ভালো লাগছে না। এতে আমাদের আরও বেশি মাথা ব্যথা করছে এবং বমি আসতে চাইছে। আমরা একটু নীরবে থাকতে চাই।’ টোনাটুনির মা এ কথা শুনে বুঝতে পারলেন তার মেয়েদের গায়ে ভয়ানক জ্বর এসেছে। তাই তিনি বাড়ির সবাইকে কোনো রকমের কথাবাতার্ না বলে নিশ্চুপ থাকতে বললেন। গঞ্জ থেকে কবিরাজ এনে চিকিৎসাও করালেন। দুদিন পরে টোনাটুনির জ্বর ভালো হয়ে গেল। জ্বর পুরোপুরি সেরে যাওয়ার পর টোনাটুনির মা টোনাটুনিকে বোঝাতে লাগলেনÑ ‘তোমরা বাড়িতে বসে অনেক রাত পযর্ন্ত জেগে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলো তাতে অনেকের ঘুমের সমস্যা হয়। তা ছাড়া অন্য ঘরে যারা অসুস্থ আছে তারা এতে ভীষণ কষ্ট পায়। এবার কি তোমরা তা বুঝতে পেরেছ?’ টোনাটুনি মাথা নাড়লো। তারা বুঝতে পেরেছে। টোনাটুনি যে ভুল করেছে তারা স্বীকার করেছে। মায়ের এ কথা শুনে টোনাটুনি ওয়াদা করল তারা আর কখনো অত জোরে হারমোনিয়াম বাজিয়ে ‘গ্যাঙর-গ্যাঙর’ গান গাইবে না। আর রাত জেগে জোরে কথা বলাসহ কোনো অন্যায় করবে না। এর কয়েকদিন পরে টোনাটুনি তাদের মাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেল।