ইপ্সিতা ও লালপরী

প্রকাশ | ১০ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

আবেদীন জনী
জোছনায় ভেজা রাত। যেন টুপ টুপ করে ঝরে পড়ছে জোছনাবৃষ্টি। এমন সুন্দর রাতে জানালার পাশে বসে পড়ছে ইপ্সিতা। জানালাটা খোলা। কোমল হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে ওকে। পড়ার ফঁাকে ফঁাকে দেখে নিচ্ছে রুপালি চঁাদের মুখ। সামনে পরীক্ষা। লেখাপড়ার ভীষণ চাপ। তাই রাত জেগে সিলেবাস শেষ করতে হচ্ছে। অন্যদিন মা পাশে থাকেন। কিন্তু আজ নেই। ঘুমিয়ে পড়েছেন তিনি। ইপ্সিতা পড়ার কক্ষে একা। বাইরে ঝলমল করছে রুপোর আলো। আলো ঠেঁাটে মেখে হাসছে গাছের সবুজপাতা। ফুল। দূর থেকে ভেসে আসছে নিশিপাখির ডাক। কখনো হাওয়ার মিহিন ডানার শব্দ। কখনো বা পাতাঝরার শব্দ কানে আসছে ইপ্সিতার। জোছনা রাত হলেও ভয় ভয় লাগছে ওর। যদি ভ‚ত এসে জানালায় ভেংচি কাটে। তাহলে? ভ‚তের কথা মনে পড়তেই গা শির শির করে উঠল। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। লেখাপড়া বন্ধ করে বসে রইল চুপচাপ। এমন সময় মৃদু কণ্ঠে ডাক শুনতে পেল ইপ্সিতা। Ñএই ইপি, মন খারাপ করে বসে আছো কেন? ইপ্সিতা আরও ভয় পেয়ে গেল। কোনো জবাব দিল না। Ñইপি, ইপি, এই ইপি! আবারও একই কণ্ঠ। ইপ্সিতা ভাবনায় পড়ে গেল। কেউ তো ওকে ইপি বলে ডাকে না। ওর পুরো নাম ইপ্সিতা আজমিন। প্রায় সবাই ওকে ইপ্সিতা নামে ডাকে। দু-একজন দুষ্টু বন্ধু আছে। ওরা বলে ইপ্সি। কিন্তু ইপি নামে এই প্রথম কেউ ডাকল ওকে। ওকেই যে ডেকেছে তা একদম নিশ্চিত। কারণ জানালার পাশ থেকেই শব্দটা এসেছে। তা ছাড়া এ পাড়ায় ইপি নামের কেউ নেই। ইপ্সিতা ভ‚ত ভেবে চোখ বন্ধ করে রাখল। বড্ড ভয় পাচ্ছে ও। আবারও ডাক শোনা গেল। এই ইপি, শোনো। ভয় পাচ্ছ কেন? আমি ভ‚ত না। আমি পরীর দেশ থেকে এসেছি। লালপরী। ইপ্সিতা পরীর কথা শুনে অবাক হলো। তবে ভয় পেল না। কারণ, পরীরা পাজি হয় না। ভয় দেখায় না। পরীরা খুব কোমল মনের। দেখতে অপূবর্ সুন্দরী। পরীদের নিয়ে অনেক গল্প শুনেছে ইপ্সিতা। পরী দেখার প্রবল আগ্রহ নিয়ে চোখ খুলল ও। দেখল, জানালার শিক ধরে দঁাড়িয়ে আছে লালপরী। শরীর থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে রূপের আলো। ডানায় ঝকমক করছে চোখ ধঁাধানো লাল। এমন অবাক সুন্দরের কারুকাজ কোনো দিন দেখেনি ইপ্সিতা। মুচকি হেসে লালপরী বলল, হঠাৎ পরী দেখে অবাক হয়েছ, তাই না? Ñঅবাক তো হবই। প্রথম দেখলাম তো। Ñআমি তোমার বন্ধু হতে চাই। তুমি যদি আমার বন্ধু হও, তাহলে তোমাকে আমি পরীর দেশে বেড়াতে নিয়ে যাব। তখন আরও অনেক পরী দেখতে পারবে। Ñআমি তোমার বন্ধু হব না। Ñকেন? Ñতুমি আমাকে ইপি বলে ডাকলে কেন? আমার নাম তো ইপ্সিতা আজমিন। বড়জোর ইপ্সিতা বলতে পারতে। Ñআমি ভুল স্বীকার করছি। এখন থেকে ইপ্সিতাই বলব। Ñঠিক আছে। আমি তোমার বন্ধু হতে রাজি। লালপরী খুশি হয়ে ইপ্সিতাকে ধন্যবাদ জানালো। বন্ধু হিসেবে উপহার দিল একটি লাল আপেল। লালপরী বলল, এ আপেল হলো মন ভালো হওয়ার আপেল। একমাত্র পরীর দেশেই পাওয়া যায়। অন্য কোথাও নেই। এটা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মন ভালো হয়ে যায়। আমি জানি, এখন তোমার পড়তে ইচ্ছে করছে না। আপেলটা খাও। মন ভালো হয়ে যাবে এবং পড়তে ইচ্ছে করবে। আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু। তোমার মন খারাপ হলেই আমাকে স্মরণ করবে। আমি এক নিমিষেই তোমার জন্য আপেল নিয়ে উড়ে আসব। পরীর সামনেই আপেলটা খেয়ে নিল ইপ্সিতা। ইস্ কী মজা! সত্যি সত্যি মনটাও ভালো হয়ে গেল। Ñতাহলে তো খুব ভালো বন্ধু পেয়েছি আমি । ইপ্সিতা হেসে বলল। Ñতোমাকে বন্ধু হিসেবে পেয়ে আমিও খুব খুশি হয়েছি। তবে একটা কথা মনে রাখবে। লালপরী বলল। Ñকী কথা? Ñতুমি কখনো কারও সঙ্গে মিথ্যা কথা বলতে পারবে না। Ñবললে কী হবে? Ñমিথ্যা বলা মহাপাপ। পরীরা কখনো মিথ্যা বলে না। আর মিথ্যা বলা মানুষের সঙ্গে পরীদের বন্ধুত্ব করা নিষেধ। তুমি যখন মিথ্যা বলবে, তখনই তোমার-আমার বন্ধুত্বের সম্পকর্ ভেঙে যাবে। তখন আমাকেও পাবে না, মন ভালো হওয়ার আপেলও পাবে না আর। ইপ্সিতা বলল, ঠিক আছে বন্ধু, আমি কখনো মিথ্যা বলব না। তারপর থেকে ইপ্সিতার সঙ্গে দেখা করতে পরীর দেশ থেকে মাঝেমধ্যেই উড়ে আসত লালপরী। সঙ্গে নিয়ে আসত মন ভালো হওয়ার আপেল। আর কয়েক দিন পর পর পরীর দেশে বেড়াতে নিয়ে যেত ইপ্সিতাকে। ভালোই যাচ্ছিল লালপরী ও ইপ্সিতার দিনগুলো। দিন যেতে যেতে একদিন ইপ্সিতার ভীষণ মন খারাপ হলো। কিছুতেই পড়তে ইচ্ছে করল না। লালপরীর জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কখন সে মন ভালো হওয়ার আপেল নিয়ে আসবে। তবেই মনটা ভালো হয়ে যাবে। তা ছাড়া অনেক দিন হলো পরীর দেশে বেড়াতে যাওয়া হয় না। লালপরী এলেই সব হবে। আরও অনেক দিন চলে গেল। লালপরী আর এলো না। এক রাতে স্বপ্নে লালপরী এসে ইপ্সিতাকে বলল, তোমার সঙ্গে আমার আর বন্ধুত্ব নেই। তুমি তোমার স্কুলের স্যারের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলেছ। ইচ্ছে করে পড়া না শিখে বলেছ, খুব জ্বর এসেছিল স্যার। তাই শিখতে পারিনি। লালপরী ঠিক কথাই বলেছে। সেদিন স্যারকে ওই কথাটাই বলেছিল ইপ্সিতা। স্পষ্ট মনে পড়ছে ওর। একটা মিথ্যা বলার কারণে সব গেল। লালপরীর সঙ্গে বন্ধুত্ব নষ্ট হলো। পরীর দেশে যাওয়া-আসার সুযোগ হারালো। মন ভালো হওয়ার আপেলও আর কোনো দিন খাওয়া হবে না। ইপ্সিতা বুঝতে পারল, মিথ্যা বলা ঠিক নয়। মিথ্যা বললে নিজেরই ক্ষতি হয়। তাই মনে মনে পণ করল, আর কখনো কারও সঙ্গে মিথ্যা বলবে না ও।