পুতুল পুতুল খেলা

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

সারমিন ইসলাম রতœা
তন্বী স্কুল থেকে ফিরে দেখল তার পুতুলটি এখনো খায়নি, গোসল করেনি এমনকি পড়াও তৈরি করে রাখেনি, বসে বসে কাটুর্ন দেখছে। ডাইনিং টেবিলে খাবারগুলো যেভাবে রেখে গিয়েছিল সেভাবেই পড়ে আছে। তন্বী ভীষণ রেগে গিয়ে পুতুলটির কান ধরে টান দিল। পুতুলটি কান্না কান্না চোখে তন্বীর দিকে তাকিয়ে বলল আম্মু তুমি আমার সঙ্গে এমন করছ কেন? তুমি এখনো খাওনি, গোসল করোনি, এমনকি পড়াও তৈরি করে রাখনি। বলি বিষয়টা কি? আম্মু আমি কাটুর্ন দেখছিলাম, খুব সুন্দর কাটুর্ন! তুমিও আমার সঙ্গে কাটুর্ন দেখো। তন্বী আরও রেগে গেল, সে পুতুলটিকে তুলে নিয়ে ড্রয়ারে বন্দি করে রাখল। পুতুল কঁাদতে কঁাদতে বলল আম্মু প্লিজ এমনটা করো না, আমার খুব ভয় করছে, আমাকে এখান থেকে বের করো, না হয় আমার একটা অনুরোধ রাখ, কাটুর্নটা খুব সুন্দর, একটু দেখো। তন্বী আর কি করে, পুতুল তার একমাত্র মেয়ে, ও যখন এভাবে বলছে, তন্বী? একটু ভেবে চিনতে বসে পড়ল কাটুর্ন দেখতে। কাটুর্ন দেখতে দেখতে ও কেমন যেন হয়ে গেল, ভুলে গেল নাওয়া-খাওয়া এমনকি পড়া তৈরি করা। সত্যি বেশ মজার কাটুর্ন! সুন্দরি রাজকন্যা রাজকুমারের সঙ্গে ড্যান্স করছে, ড্যান্স করতে করতে রাজকন্যার চোখ পড়ল ঘড়ির দিকে। মধ্য রাত থেকে চলেছে এক্ষুনি তাকে যেতে হবে। রাজকন্যা ছুটতে শুরু করল, তার পেছন পেছন ছুটতে শুরু করল রাজকুমার। ছুটতে ছুটতে রাজকন্যার পা থেকে একটি জুতো খুলে পড়ে গেল, সেদিকে কোনো খেয়াল নেই রাজকন্যার। রাজকন্যা কোনো দিকে না তাকিয়েই উঠে বসল একটি ঘোড়ার গাড়িতে, ছুটতে শুরু করল গাড়ি। মধ্য রাস্তায় যেতে না যেতেই গাড়ি সাদা কুমড়ায় পরিণত হলো! তন্বী কাটুর্ন দেখতে দেখতে চারপাশের সব কিছু ভুলে গেল। কখন যে বেলা গড়িয়ে গেল বুঝতেই পারল না। এমন সময় ঘরে ঢুকলেন তন্বীর আম্মু, তন্বীকে এ অবস্থায় বসে থাকতে দেখে আম্মু ঝঁাজালো কণ্ঠে বললেন কি ব্যাপার তন্বী, তুমি এখনো খাওনি, গোসল করোনি, এমনকি স্কুল ড্রেসটাও চেঞ্জ করোনি, বলি বিষয়টা কি? আম্মু আমি কাটুর্ন দেখছিলাম খুব সুন্দর! তুমিও আমার সঙ্গে কাটুর্ন দেখো, আমার তো খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই আমি তোমার সঙ্গে কাটুর্ন দেখব। একটু দেখো না প্লিজ, আম্মু তন্বীর অনুরোধ শুনে বসে পড়লেন কাটুর্ন দেখতে, আসলেই বেশ মজার কাটুর্ন। রাজকুমার সব রাজ্যে ঘোষণা করে দিয়েছেন, এই জুতো যার পায়ে লাগবে সে এই রাজ্যের রানী হবে। পাইক-পেয়াদারা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মেয়েদের পায়ে জুতো পরাতে লাগল। ওদিকে সৎ মা রাজকন্যাকে লুকিয়ে রেখেছে চিলেকোঠার ঘরে, যাতে কিছুতেই এই জুতো তাকে পরানো না হয়। হঠাৎ আম্মু সম্বিত ফিরে পেলেন, বললেন যথেষ্ট হয়েছে এবার ওঠো, তন্বী। আম্মুর দিকে তাকিয়েই কেঁদে ফেলল, কঁাদতে কঁাদতে বলল আম্মু আর একটু দেখি এই তো শেষ। আম্মু রেগে গিয়ে বললেন কোনো কথা নয়, টিচার আসবে তোমাকে তৈরি হতে হবে। তন্বী এবার জোরে জোরে কঁাদতে লাগল। আম্মু সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে বললেন দেখো তন্বী তুমি এখন ছোট নও, বড় হয়েছ, ক্লাস ফোরে পড়। এ কথা বলতেই তন্বী চোখ মুছল হঠাৎ তার মনে পড়ল পুতুলটির কথা সে পুতুলটির সঙ্গে এ রকমই আচরণ করেছিল। মনের ভেতর কেমন একটা অপরাধ বোধ কাজ করতে লাগল। তন্বী বলল আম্মু আমি আমার পুতুলটিকে ড্রয়ারে বন্দি করে রেখেছি, আম্মু জিজ্ঞেস করলেন কেন? স্কুল থেকে ফিরে দেখি ও কিছুই করেনি। তুমি তো এখন ঠিক একই কাজ করছো তন্বী, আমি যদি তোমাকে বাথরুমে বন্দি করে রাখি তোমার কেমন লাগবে? তন্বী ভয়াতর্ চোখে আম্মুর দিকে তাকাল। আম্মু ছোট্ট একটি হাসি দিয়ে বললেন, না আমি তোমাকে বাথরুমে বন্দি করে রাখব না সুযোগ দেব। তন্বী তার ভুল বুঝতে পারল সে উঠে দঁাড়াল আম্মু ওর হাত ধরে পাশে বসালেন, তন্বী উঠে যেতে চাইল। আম্মু ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বললেন, কাটুর্নটা এখনো শেষ হয়নি, শেষ করে যাও। না আম্মু আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে। তন্বী এই বলে ছুটে এলো তার ঘরে। ঝড়ের গতিতে পুতুলটাকে ড্রয়ার থেকে বের করেই বুকে জড়িয়ে ধরল। মুক্তির আনন্দে হেসে উঠল পুতুলটা, তন্বীকে ছোট্ট একটা আদর দিয়ে বলল আম্মু তুমি অনেক ভালো। বলো আর কখনো আমাকে ড্রয়ারে বন্দি করে রাখবে না? রাখব না। আম্মু কাটুর্ন দেখেছ? তন্বী বলল দেখেছি খুব সুন্দর কাটুর্ন। এবার বুঝতে পেরেছ আমি কেন কাটুর্ন দেখে সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম? তন্বী হিহি করে একটা হাসি দিল, হাসতে হাসতে পুতুলকে আদর করে দিল। পুতুল বলল আসলে আমরা দুজনেই এখন অনেক ছোট, আমরা অনেক কিছু বুঝতে পারি না। আমাদের আরও শিখতে হবে জানতে হবে। তাই না আম্মু? তন্বী হেসে উঠল হিহি ঠিক তাই।