আজ অভি শ্রেষ্ঠ

প্রকাশ | ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

মাহমুদা শিরীন
অনিক অভি দুই ভাই। দুজনের বয়সের পাথর্ক্য দশ বছর। অনিক নবম শ্রেণিতে পড়ে। অভি কেবল প্লেতে ভতির্ হলো। দুজনের চরিত্র দুই রকম। অনিক যেমন শান্ত, ভদ্র, ভালো ছাত্র। তেমনি অভি অনেক দুষ্ট, রাগী ও জেদি প্রকৃতির। পড়াশোনায়ও একদম ভালো না। অভি স্কুলে গিয়ে কলমেই হাতে নেয় না লেখার জন্য। এই নিয়ে প্রতিদিন অভির মায়ের কাছে টিচাররা নালিশ করে। শুধু তাই নয়, স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে মারামারি একটা না একটা লেগেই থাকে। স্কুল ছুটির পর প্রতিদিন কোনো না কোনো গাজের্নরা অভির মাকে বলে এই দেখুন আমার বাচ্ছাকে কেমন করে খামছি দিয়েছে। অভির মা এসব শুনতে শুনতে বাসায় আসে। এভাবেই অনেক কষ্টে অভির মা অভিকে বড় করছে। সে এখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। কোনো রকম ক্লাস পার করছে। বাসায় আরবি পড়ার জন্য হুজুর রাখা হয়েছে। হুজুররাও পড়াতে পারে না। এক হুজুর যায় তো আর এক হুজুর আসে। অভি বাসায় মায়ের সঙ্গে জিদ করে তার মায়ের মোবাইল বাথরুমে পানিভতির্ বালতির মধ্যে ফেলে দেয়। কখনো দামি জিনিসও জানালা দিয়ে ফেলে দেয়। এসব দেখে অভির মা শুধুই কঁাদে। একদিন অভির মা-বাবা অভিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। ডাক্তার তাকে ঘুমের ওষুধ দিলেন। সেই ওষুধ খেয়ে অভি শুধু ঘুমিয়ে থাকে। এরপর অভির বাবা মানা করল ওই ওষুধ যেন আর খাওয়ানো না হয়। বন্ধ হলো ওষুধ। কিন্তু অভির অত্যাচার কমলো না। সে এখন চতুথর্ শ্রেণির ছাত্র। সবার পিছনে তার রোল নং। কোচিং, বাসার টিচার দিয়েও কোনো কাজ হলো না। অভি নেট দেখে বিভিন্ন রকম কাগজের জিনিস তৈরি করে। বন্ধুকটাই বেশি তৈরি করে। তার কিছু প্রতিভা আছে যেমন আটর্ করা। কারও মুখের দিকে তাকিয়ে হুবুহু তার চেহারাই অঁাকতে পারে। কিছু জাদুও শিখেছে। বাসার টিচার বলে এসব প্রতিভা দিয়ে কোনো কাজ হবে না। যদি পড়াশোনা না করে। কিন্তু অভির মাথায় পড়াশোনা একেবারেই যায় না। টিচার অভির মাকে ডেকে বলে ওকে গেম খেলতে দেবেন না। অভির মা বলে ও কখনো গেম খেলে না। ও শুধু জিনিস তৈরি করে নেট দেখে। টিচার বলে ওটাও দেবেন না। এই কারণে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না। অভির মা কী আর বলবে মন খারাপ করেই থাকে। অভি কোনো রকম পাস করে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠল। এবার তো সমাপনী পরীক্ষা দিতে হবে। কেমন রেজাল্ট করবে। স্কুলে যেতে চায় না। কোচিংয়েও না। বাসায়ও পড়ে না। অভির মায়ের হাতে এখন লাঠি। আর মেজাজ খুব খারাপ। অল্পতেই রেগে যায়। কিছু হলেই অভিকে মারে। এ নিয়ে অভির বাবা-মায়ের ঝগড়া লেগেই থাকে। অভির বাবা বলে অল্প পড়লেই হবে। এদিকে অভির বড় ভাই অনিক ভালো রেজাল্ট নিয়ে ইউনিভাসিির্টতে পড়ছে। অভির সঙ্গে অনিকের খুব কম দেখা হয়। অভি সবচেয়ে বেশি খুশি হয় যখন তার ভাই অনিক তার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলে গল্প করে। অভি সেদিন মনোযোগ দিয়ে অল্প হলেও পড়ে। অভির মা অনিককে সব সময় বলে বাবা অনিক তুমি একটু অভিকে পড়াও। ওকে সময় দাও। দেখবে ও ভালো করবে। অনিক বলে ওটাকে পড়ালে আমার রাগ লাগে। নানান প্রশ্ন করে। আমি পারব না। অভির মা অনিককে সব সময় অনুরোধ করেই চলছে। ফাইনাল পরীক্ষার আর মাত্র চার মাস আছে। অভি তো ফেল করবে। অভির মা অনিককে ভালো করে বুঝালো। একটু দেখিয়ে দিতে। অবশেষে পরীক্ষার চার মাস মাত্র অভির মা অনিক দুজনে মিলে অভিকে পড়ালো। অভির মনোযোগও হলো। মডেল টেস্ট হলো। অভি সিরিয়ালে দশের ভিতর চলে এলো। স্কুলের টিচাররা অনেক আদর করল। ফাইনালেও অভি এ প্লাস পেল। অনেক ভালো নাম্বার নিয়ে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠলো অভি। দু’মাস পরে জানা গেল অভি বৃত্তিও পেয়েছে। অভির মা খুশিতে কঁাদে। অভিকে পড়ার জন্য আর বলতে হয় না। নিজে নিজেই পড়ে। ভালো রেজাল্টও করছে। আজ অভিই শ্রেষ্ঠ। তবে তার রাগ জিদ এখনো আছে। কিছু হলেই ঘরের জিনিস নষ্ট করে ফেলে তবে মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। সামনে হয়তো অভি আরও ভালো রেজাল্ট করবে ওর রাগও কমে যাবে, অভির মায়ের এটাই আশা।