গল্প

বিজয়ের হাসি

প্রকাশ | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

মোনোয়ার হোসেন
টিকলুর জন্মদিনে ছোটো মামা তাকে একটা সোয়েটারের উপহার দিলেন। লাল সোয়েটার। সোয়েটারের সামনে একটা ছবি আছে। বিড়ালের ছবি। সাদা ধপধপে। একেবারে টুনটুনের মতো। টুনটুন টিকলুর বিড়ালের নাম। নরম নরম হাত। নরম নরম পা। তুলতুলে শরীর। সোয়েটারটা খুব পছন্দ হয়েছে টিকলুর। সে সোয়েটারটা পরে দৌড়ে দাদুর কাছে যায়। ফিক করে হেসে বলে, দাদু! হুমম। দ্যাখো তো সোয়েটারটা কেমন হয়েছে? দাদু বললেন, খুব সুন্দর হয়েছে দাদুভাই। শুনে হি হি করে হেসে ওঠে টিকলু। তারপর দৌড়ে যায় বাবার কাছে। বাবাকে নতুন সোয়েটার দেখায়। তারপর দৌড়ে যায় মায়ের কাছে। মাকে নতুন সোয়েটার দেখায়। তারপর দৌড়ে যায় তুতুন বুর কাছে। তুতুনবুকেও নতুন সোয়েটার দেখায়। সবাই বলেন, খুব সুন্দর সোয়েটারটা! তোমাকে খুব সুন্দর মানিয়েছে। শুনে কী যে খুশি হয় টিকলু! হি হি হি করে হেসে ওঠে। আজ ষোলোই ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। টিকলু খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠল। মামার দেয়া সুন্দর লাল সোয়েটারটা পরল। তারপর তুতুনবুর হাত ধরে বড় মাঠে গেল। বড় মাঠে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান হচ্ছে। কী সুন্দর করে সাজানো হয়েছে মাঠটা! মাঠের পাশে সরকারি অফিস-আদালত। প্রতিটি ইটে ইটে যেন আলোকসজ্জা করা হয়েছে। মাঠে কত্ত কত্ত দোকান এসেছে! খেলনার দোকান। খাওয়ার দোকান। রঙ-বেরঙের বেলুনের দোকান। মাঠের এক কোণে একটা দোকানের দিকে তাকিয়ে চোখ আটকে যায় টিকলুর। তার সমবয়সী একটা ছেলে লাঠিতে ঝুলিয়ে জাতীয় পতাকা আর বিজয় দিবসের স্টিকার বিক্রি করছে। ছেলেটির গায়ে পাতলা ফিনফিনে জামা। ঠাÐায় কঁাপছে ঠকঠক করে। টিকলু ছেলেটির কাছে গেল। বলল, তোমার নাম কি? বিজয়। বাহ! খুব সুন্দর নাম তো! শুনে খুব লজ্জা পায় ছেলেটি। মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসে। টিকলু বলল, তুমি তো ঠাÐায় কঁাপছ। সোয়েটার পরনি কেন? ছেলেটি ঠেঁাট উল্টে বলল, কোনহানে পামু সুইটার? তোমার বাবার কাছে কিনে নেবে। আমার বাবা নাই। বাবা নেই মানে? মরে গ্যাছে। বলো কি? হুমম। দুই বছর হইল বাবা একটা অসুখে মরে গ্যাছে। দাদু বীর মুক্তিযোদ্ধা। খুব অসুস্থ। বিছানায় পড়ে আছে। আমি এই পতাকা বেইচে দাদুর চিকিৎসা করি। পতাকা বেচে যেই টাহা পাই তা দিয়ে তো দাদুর ওষুধের টাহা হয় না, সুইটার কিমনু ক্যামনে? ছেলেটির কথা শুনে টিকলুর চোখে পানি চলে এলো। সে আর কালবিলম্ব না করে নিজের পরনের সুন্দর লাল সোয়েটারটা খুলে ছেলেটির হাতে দিল। বলল, এই সোয়েটারটা পরো বন্ধু। এটা তোমার। ছেলেটি যেন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিল না। অবাক বিস্ময়ে একবার সোয়েটারটারের দিকে তাকালো তারপর তাকালো তুতুনবুর দিকে। টিকলুকে ভালো কাজ করতে দেখে তুতুনবুও খুব খুশি। মিষ্টি হেসে বলল, নাও বিজয়, এই সোয়েটার তোমার জন্য। সোয়েটার পেয়ে বিজয় খুব খুশি হলো। খুশিতে তার চোখ চকচক করে উঠল। লাঠি থেকে একটা পতাকা খুলে টিকলুর হাতে দিল। টিকলু পতাকাটা নিয়ে টাকা দিতে চাইল। বিজয় বলল, না। টাহা লাগব না। আমিও এইডা তুমারে উপহার দিলাম। টিকলু তাকাল তুতুনবুর দিকে। তুতুনবু হেসে ইশারা করল, নাও। টিকলু হাতে পতাকাটা নিল। তারপর একটু উঁচু করে ধরতেই পতপত করে উড়তে লাগল পতাকা। তা দেখে হেসে উঠল টিকলু। তুতুনবু। বিজয়।