স্বপ্নার স্বপ্ন

প্রকাশ | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

জসীম আল ফাহিম
স্বপ্নার কোনো কিছু ভালো লাগে না। কাজকমর্, বইপড়া, নাওয়া-খাওয়া কোনোটাই নয়। স্বপ্নার শুধু ঘুমোতে ভালো লাগে। খেতে বসলে সে ঘুমায়। পড়তে বসলে পড়ার টেবিলে ঝিমায়। ¯œান করতে গেলে বাথরুমে পড়ে ঘুমায়। এমন মেয়েকে নিয়ে মা-বাবা বড় মুশকিলে পড়লেন। মা-বাবার ধারণা, স্বপ্না হয়তো শারীরিকভাবে খুব দুবর্ল হয়ে পড়েছে। তাই সে সারাক্ষণ শুধু ঘুমাতে চায়। শেষে তারা একদিন স্বপ্নাকে একজন বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। ডাক্তার সাহেব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললেন, সমস্যা তেমন কিছু নয়। ওর শরীরে একটি বিশেষ ভিটামিনের ঘাটতি রয়েছে। বড় হলে ওর এই সমস্যাটা এমনিতেই দূর হয়ে যাবে। স্বপ্না ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নানান উদ্ভট স্বপ্ন দেখে। আনন্দের স্বপ্ন। ভয়ের স্বপ্ন। স্বপ্নগুলো অনেকটা এমনÑ ঘুমিয়ে আছে স্বপ্না। হঠাৎ তার মনে হতে থাকে, সে যেন অনেক দূরের আশ্চযর্ এক ফুলবাগানে বিচরণ করছে। বাগান ভরা ফুল আর ফুল। গাছে গাছে ফুটে আছে নানান বণের্র নানান গন্ধের ফুল। ফুলে ফুলে রঙিন পাখা মেলে উড়ছে প্রজাপতি। ভোমর-অলি গুনগুনিয়ে গান গেয়ে ফুলে ফুলে ঘুরছে। বাগানের গাছে গাছে বসে আছে নানান জাতের নানান রঙের পাখি। পাখিরা কিচিরমিচির গান করছে। হঠাৎ একটি পাখি উড়ে এসে ওর কঁাধে বসল। পাখিটি কিচিরমিচির করে বলল, খুকি তোমাকে অভিবাদন! তুমি এখন আনন্দভুবনে বিচরণ করছ। আরও সামনে যাও তুমি। তাহলে আরও আনন্দ পাবে। পাখিটির কথামতো স্বপ্না আরও সামনে গেল। হঠাৎ সে দেখতে পেল, চমৎকার একটি ঝরনা। স্বচ্ছ জলের ঝরনা। উঁচু পাহাড় থেকে ঝরনাটি ছল্ ছল্ শব্দে ছন্দ তোলে ধেয়ে চলেছে। ঝরনার দুপাশে নানান রকম বুনো অকির্ড আর লতানো গাছগাছালি। সুন্দর অকির্ড ফুল ফুটে রয়েছে গাছে। আপন মনে সুর তোলে গান করছে বুনো পাখি। কাছেই বসে রয়েছে একটি ছোট পাখি। পাখিটি স্বপ্নার খুব পছন্দ হলো। ভাবলো সে, পাখিটি ধরে নিয়ে গেলে কেমন হয়! পাখিটি বাড়ি নিয়ে গিয়ে পুষলে খুব মজা হবে। ভেবে সে হাত বাড়িয়ে পাখিকে ধরতে চাইল। ঠিক তখনি তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম থেকে জেগে সে বিষয়টি নিয়ে অবাক হয়ে ভাবতে লাগল। ভেবে যখন কোনো ক‚ল-কিনার পেল না, তখন মৃদু হেসে বলল, ভারি আশ্চযর্ স্বপ্ন তো! এটা আর এমন কী স্বপ্ন। স্বপ্না আরও আজব-নাজব স্বপ্ন দেখে। ঘুমিয়ে আছে সে। হঠাৎ তার মনে হতে লাগল, সে যেন উঁচু কোনো পাহাড়ের চ‚ড়ায় দঁাড়িয়ে আছে। অবাক হয়ে স্বপ্না আকাশ দেখতে লাগল। নীল রঙের আকাশ। আকাশে বিচিত্র রঙের ছড়াছড়ি। নানান রঙের মেঘ। হঠাৎ তার কী যেন মনে হলো। পাহাড়ের চ‚ড়া থেকে সে হাত দুটো দুপাশে মেলে দিয়ে পাখির মতো নিচে নামতে শুরু করল। আপন মনে স্বপ্না পাখির মতো নামছে। এভাবে কিছু সময় নিচে নামার পর হঠাৎ তার মনে হলো, আশ্চযর্ তো! আমার তো কোনো পাখা নেই। তাহলে আমি উড়ছি কেমন করে? কথাটা ভাবার সঙ্গে সঙ্গে কেন জানি তার ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম থেকে জেগে স্বপ্না অবাক হয়ে কিছু সময় তাকিয়ে রইল। ভাবলো, আচানক স্বপ্ন! মাঝেমধ্যে স্বপ্না স্বপ্ন দেখতÑ পরীক্ষা হলে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে সে। তার প্রিয় মিস তৃণলতা পরীক্ষা হলে গাডর্ দিচ্ছেন। প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে স্বপ্না দেখল, প্রশ্নগুলো খুবই কমন। একশোতে সে একশোই আন্সার করতে পারবে। প্রশ্নপত্র সহজ হওয়াটা আসলে তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনল না। বরং তার জন্য খারাপই হলো। সে অনেকক্ষণ ধরে পরীক্ষা দিল। কিন্তু কেন জানি সে খাতায় পাস করার মতো উত্তর লিখতে পারল না। এদিকে পরীক্ষার সময় প্রায় শেষ হয়ে এলো। এখনি হয়তো বা স্কুল দপ্তরি ঘণ্টা বাজাতে শুরু করবেন। ঢং ঢং ঢং। কিন্তু ওর তো পরীক্ষার খাতায় কিছুই লেখা হয়নি। তাহলে সে পাস করবে কেমন করে? নিশ্চিত ফেল এবার। এখন কী করা যায়? কিছুই ভেবে পেল না স্বপ্না। পরীক্ষা নিয়ে তার খুব টেনশন হতে লাগল। টেনশনের কারণেই কিনা কে জানে, আচমকা তার ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম থেকে জেগে সে কিছু সময় স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। মনে মনে ভাবতে লাগল, আহ্! যদি অলুক্ষণে স্বপ্নটা কোনোভাবে সত্যি হয়ে যেত, তাহলে আমার কী সবর্নাশটাই হতো! স্বপ্নার এরূপ স্বপ্ন দেখার যেন শেষ নেই। পথ ধরে আনমনে কোথায় যেন হেঁটে চলেছে সে। হঠাৎ দেখলো কীÑ পথের মাঝখানে চকচকে একটি একশ টাকার নোট পড়ে আছে। কী মনে করে যেন সে টাকাটা উঠাতে গেল। অমনি তার মনটা আপনা থেকে বলে ওঠল, করছ কী স্বপ্না! করছ কী? এটা তো অন্যের টাকা। অন্যের জিনিস। অন্যের জিনিস তুমি কুড়িয়ে নিতে পার না। এটা ভারি অন্যায়। কিন্তু তারপরও কী মনে করে যেন সে হাত বাড়িয়ে টাকাটা উঠাল। টাকাটা হাতে নেয়ার পর সে দেখল কীÑ রাস্তা ভরে আরও অনেক চকচকে একশ টাকার নোট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। স্বপ্না একটি একটি করে সব টাকা উঠাতে শুরু করল। টাকায় তার ‘কোচড়’ একেবারে ভরে ওঠল। পর মুহূতের্ সে তার কোচড়ে হাত দিয়ে দেখল, কোচড় একেবারে খালি। কোচড়ে কোনো টাকা-পয়সা নেই। অবাক হয়ে স্বপ্না ভাবতে লাগল, আশ্চযর্ তো! এতগুলো টাকা কুড়ালাম। আর টাকাগুলো কেমন করে যেন উধাও হয়ে গেল। কেমন যেন নেই হয়ে গেল। এমনটি কেন হলো? ভাবতে না ভাবতেই সহসা তার ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম থেকে জেগে স্বপ্না ফ্যাল্ ফ্যাল্ করে কিছু সময় তাকিয়ে থাকল। অবাক হয়ে সে ভাবতে লাগল, মানুষের স্বপ্ন কত বিচিত্রই না হতে পারে! স্বপ্না খাবার খেতে বসল। হঠাৎ তার মনে হতে লাগল, ডিশের মধ্যে যেন রান্না করা কয়েকটি সোনাব্যাঙ রয়েছে। কিছু আরশোলাও আছে। রয়েছে ঘাসফড়িং আর পোকামাকড়। আশ্চযর্ ব্যাপার! ওসব আবার মানুষের খাবার নাকি? ভাবতে লাগল স্বপ্না। পাশেই একটি চীনা মাটির বাটিতে সে দেখতে পেল হাতে পাকানো সেমাইয়ের মতো রান্না করা একবাটি কেঁচো। কেঁচোকে এমনিতেই স্বপ্না খুব ভয় পেত। কেঁচো এক প্রকার নিরীহ প্রাণী। তবু এই প্রাণীকে কেন যে সে এত ভয় পায়, ঠিক জানে না। রান্না করা কেঁচো দেখে একলাফে সে শোয়া থেকে উঠে একেবারে বসে পড়ল। অমনি তার সাধের ঘুমটিও টুটে গেল। ঘুম থেকে জেগে স্বপ্না ‘ওয়াক থু’ ‘ওয়াক থু’ বলে বারবার থুথু ফেলতে লাগল। পরে যখন সে বুঝতে পারল যে, ব্যাপারটি আসলে বাস্তবে ঘটেনি, ঘটেছে স্বপ্নে। কেবল তখনি সে শান্ত হলো।