সবুজ গঁায়ের গল্প

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

রুহুল আমিন রাকিব
নয়ন জুড়ানো ছবির মতো সুন্দর। ছোট্ট একটি গ্রাম, কামাল খামার আমবাড়ি। গায়ের মেঠোপথ জুড়ে সারি সারি সবুজ গাছ। গাছে গাছে পাখির মেলা। পাখির কলোতানে মুখরিত থাকে চারপাশ। সূযের্র আলো ভেদ করে যত দূরে চোখ যায়। মাঠের পানে তাকিয়ে দেখি শীতল হাওয়ায় ঢেউ খেলছে সবুজ ক্ষেতগুলো! মাঝে মাঝে সবুজ ক্ষেতে ঝঁাকে ঝঁাকে উড়ে পড়ছে চড়ুই পাখির ঝঁাক। মাঠজুড়ে কৃষকরা ব্যস্ত। সবুজক্ষেতের পরিচযার্ করতে। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে, পশ্চিমে রক্তিম সূযর্ ডুবলে তবেই ফিরে আসে আপন নীড়ে। সন্ধ্যায় মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে আজানের সুমধুর সুর শুনে ঘরে ফিরে গঁায়ের দুষ্ট ছেলের দল। সারা বিকেল, নানা রকম খেলা শেষে বই নিয়ে পড়তে বসে। কুপির আলোয় এগিয়ে চলে আগামীর রঙিন সোনালি সময়ের জন্য স্বপ্ন বোনা। গঁায়ের বধূরা ছোট্ট ছোট্ট ছেলে মেয়েকে কোলে নিয়ে। রাতের আকাশে উঁকি মারা এক ফালি দুধের বাটি চঁাদকে দেখিয়ে ঘুম পাড়ানি গান শোনায়! ছোট্ট শিশুটাও এক সময় মায়ের আদুরে হাতের ছেঁায়া পেয়ে নিশ্চিন্ত মন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। দেখতে দেখতে এক সময় রাতের আকাশে খেলা করে শত তারাদের দল! পুকুরপাড়ে ঝোপের আড়ালে আসর সাজায় দিন চোরা, জোনাক পোকারা। গঁায়ের প্রতিটি ঘরে-ঘরে এক সময় কুপির আলো নিভে যায়। ঘুম ঘুম চোখগুলো নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগে, প্রতিটা মানুষ পরের দিনের কমর্ পরিকল্পনা করে। মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় পাখির গান শুনে। কখনও বা দূরের কোথাও থেকে ভেসে আসে, মাদা কুকুরটাকে হারিয়ে ফেলার কষ্টে, মাদি কুকুরটার কান্নার করুণ সুর। কালে ভদ্রে দেখা মেলে হুতুম-প্যঁাচা নামের বড় বড় চোখওলা সেই পাখিটারও। ভোরে ঘুম ভাঙে বাড়ির পাশে বঁাশ ঝারের ঝোপের আড়ালে বসে ডাকা দোয়েল পাখির মিষ্টি সুর শুনে! নয়তো বাড়ির পোষা প্রাণী মুরগির ডাক শুনে। আহা! কত সুমধুর কণ্ঠে ভেসে আসে মসজিদ থেকে ফজরের আজান। খুব সকালে গঁায়ের প্রতি বাড়ি থেকে ভেসে আসে কোরআন পড়ার সুমধুর সুর! রবির আলো একটু একটু করে বাড়তে থাকে। গঁায়ের কৃষক পান্তা খেয়ে ছুটে চলে মাঠের পানে। রোদের উজ্জ্বল আলোও হার মানে, কৃষকের ফসলের হাসি দেখে। গঁায়ের উত্তরে বয়ে গেছে ভেলা খোয়া নদী নামের ধরলা নদীর একটি শাখা। বষার্ মৌসুম এলে, এই নদী যেন তার যৌবন ফিরে পায়। থৈ থৈ পানিতে ভরে যায় নদীর দুই ক‚ল। হাসি ফুটে! গঁায়ের খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষগুলোর মুখে। নানা প্রকারের জাল নিয়ে ভিড় করে নদীর বুক জুড়ে। নানা রকম ছোট্ট বড় মাছ ধরা পড়ে ওদের জালে। নদীর তীরে ভিড় করে, সাদা বকের দল। পানির ওপর খেলা করে বেড়ায় নানা রঙের হঁাস। এই গঁায়ের সবাই-সবাই কে খুবই আপন ভাবে। এক জনের দুঃখ কষ্ট দেখলে গঁায়ের সবাই এগিয়ে আসে। গঁায়ের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী ও রাস্তার মাঝখানে একটি ব্রিজ আছে। গঁায়ের ছেলে বুড়ো সবাই ওই ব্রিজে বসে আড্ডা জমায়। কখনও কখনও দাদুরা বলে এই সোনার বাংলা বিজয়ের রক্তিম সেই দিনগুলোর কথা। দাদুর মুখের কথা শুনে, দঁাড়িয়ে যায় শুভ, শান্ত, তুহিন, রাফিদের গায়ের লোমগুলো। টপ টপ করে চোখের অশ্রæ বেয়ে পড়ে গাল দিয়ে। জোছনা রাতে, মাঝে মাঝে পুঁতির আসর জমে, রাকিবদের কাচারি ঘরে। ঘুমে ডুবা চোখ নিয়ে সবাই মন দিয়ে শুনে, ইমাম হাসান, হোসেনের শহীদ কারবালার ইতিহাসের সেই কাহিনী। এভাবেই আনন্দময় পরিবেশে গঁায়ের আলো-বাতাস গায়ে মেখে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে শুভ। শুভ স্বপ্ন দেখে, পড়ালেখা শিখে অনেক বড় মানুষ হবে। একদিন শহরে গিয়ে অনেক বড় চাকরি করবে,গঁায়ের অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াবে। সবাই কে বুঝিয়ে বলবে, এই সমাজে এগিয়ে যেতে হলে,অবশ্যই পড়া লেখা করতে হবে। ছেলে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। কোনোভাবেই, এই সবুজ বন, ফসলের মাঠ, যৌবনা নদী। এগুলো কখনই দখল করে, বাড়িঘর ওঠানো যাবে না। এই গঁায়ের চিরসবুজ সৌজন্য কে ধরে রাখতে, অবশ্যই, সবাইকে এক হয়ে হাতে-হাত রেখে এগিয়ে আসতে হবে। কামাল খামার আমবাড়ির মতো করে, বাংলাদেশের প্রতিটা গঁায়ে ছেয়ে যাক সবুজ সোনালি ফসল। সবুজ সোনার বাংলা গড়তে এগিয়ে আসুক দেশের প্রতিটা নাগরিক। শুভ কামনা রইলো আমার প্রিয় চিরো সবুজ গঁায়ের জন্য। সফিপুর, গাজীপুর