গল্প

ভূতের ভয়!

প্রকাশ | ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

মিজান আকন্দ
ঘরের সামনের বাগানে গোলাপ, জবা, বেলি, গাঁদা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনাসহ আরো অনেক ফুলের গাছ। দক্ষিণা বাতাস ফুলের সৌরভ ভেসে আসে ঘরে। দক্ষিণের জানালার পাশে আয়ানের পড়ার টেবিল। ফুলের ঘ্রাণ নিতে নিতে পড়তে তার ভীষণ ভালো লাগে। পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী আয়ান। সন্ধ্যা হলেই পড়ার টেবিলে বসে যায়। রাতের খাবার শেষেও চলে তার পড়াশোনা। প্রায়ই তার পড়া শেষ হওয়ার আগে ঘরের অন্য সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। আজও রাত ১০টা বাজতেই গ্রামের প্রায় সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। খোলা জানালা দিয়ে বাগান থেকে ভেসে আসছে হাসনাহেনার ঘ্রাণ। এ সময় আয়ানের অংক কষতে ভীষণ ভালো লাগে। আয়ান যখন গণিত বইয়ে ডুবে আছে তখন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সামি বলে, কিরে আয়ান এখনো ঘুমাসনি? আয়ান বলে, আরও কিছু অংক বাকি আছে, ওগুলো শেষ করে ঘুমাব। সামি বলে, মা ডাকছে, আমি চলে যাচ্ছি দোস্ত। আয়ান আবার অংকে মনযোগ দেয়। দুষ্ট ছেলে সামি পাশের বাড়িতেই থাকে। মাঝেমধ্যে এভাবেই সে রাতের বেলা বাইরে ঘুরে বেড়ায়। প্রায়ই তার মা তাকে খুঁজে ঘরে নিয়ে যান। অংক করা শেষ হলে আনমনে আয়ান বাইরের দিকে তাকায়। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ফুল গাছগুলো ঠিকমতো দেখা যায় না। ফুল দেখা না গেলেও দক্ষিণা বাতাসে ফুলের ঘ্রাণ ঠিকই পাওয়া যায়। একটু পর বাগানের শেষ মাথায় সাদা কিছু একটা দেখতে পায়। আয়ান জানালার কাছে গিয়ে ভালো করে সেদিকে তাকায়। সাদা কাপড় পড়া কেউ যেন দাঁড়িয়ে আছে! ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করে সে। সাদা কাপড় মোড়ানো মানুষ মনে হয়! ভূত নয় তো! আয়ান একটু ভয় পেয়ে যায়! সাদা কাপড়ের ভেতর থেকে ভূতুড়ে গলায় ডাকে, আয়ান বাইরে আয়, তোকে নিয়ে দূরের জঙ্গলে ঘুরতে যাব। আয় বাইরে আয়, আয় আয় আয়......। আয়ান চিৎকার করে খাটের ওপর লাফিয়ে পড়ে। চিৎকারের শব্দে আয়ানের মায়ের ঘুম ভেঙে যায়। তিনি ছুটে এসে বলেন, কি হয়েছে বাবা, কি হয়েছে? আয়ান বলে, ভূত, ভূত! মা বলেন, কোথায় ভূত? আয়ান বলে, বাগানে, বাগানের ভেতর! জানালার পাশে গিয়ে মা বাগানের ভেতর কিছুই দেখতে পায় না। ছেলের কাছে এসে অভয় দিয়ে বলেন, বাগানে কোনো ভূত নেই বাবা, তুই এমনিই ভয় পেয়েছিস। জানালাটা বন্ধ করে দিয়ে আয়ানকে ঘুম পাড়াতে নিয়ে যায়। পরদিন আয়ান জানালা বন্ধ করে পড়তে বসে। মা ও জেগে আছে ছেলের সঙ্গে। রাত ১০টা বাজতেই চারিদিক নিস্তব্ধ হয়ে যায়। বন্ধ জানালার ওপাশ থেকে ভূতুড়ে গলার আওয়াজ আসে, আয়ান বাইরে আয়, তোকে নিয়ে দূরের জঙ্গলে ঘুরতে যাব। আয়, আয়, আয়......। একটু পর আবার সেই ভূতুড়ে গলার আওয়াজ আসে, আয়ান বাইরে আয়, তোকে নিয়ে দূরের জঙ্গলে ঘুরতে যাব। আয়, আয়, আয়....। আয়ান বলে, মা ভূতের ডাক শুনেছ? মা বলেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই, তোকে ভয় দেখানোর জন্য কেউ দুষ্টুমি করছে। মায়ের কথা শুনে ভূত কি পালিয়ে গেল? ভূতুড়ে গলার আওয়াজ আর আসছে না। কিছুক্ষণ পর জানালার ওপাশে সামির মায়ের কথা শোনা যায়। সামি এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? সামি বলে, আয়ানের কাছে পড়া জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম। জানালা খুলে আয়ানের মা জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে ভাবি? সামির মা বলেন, আর বলবেন না ভাবি, দুষ্ট ছেলেটার যন্ত্রণায় পাগল হয়ে গেলাম। দু'দিন ধরে আমার সাদা শাড়ি গায়ে পেঁচিয়ে রাতের বেলা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কি করি বলেন তো! সামির মা ছেলেকে নিয়ে বাড়ি চলে যায়। এরপর আর বুঝতে বাকি নেই- ভূতটা আসলে কে? আয়ান বলে, সামি আস্ত একটা শয়তান, আবার যদি ভূত সেজে আসে, ধরে এনে বেঁধে রাখব। এরপর থেকে আয়ান আবার জানালা খুলে পড়তে বসে। হাসনাহেনার গন্ধ ভেসে আসে, সেই ভূত আর আসে না।