গল্প

পাখির ছানা ধরতে মানা

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

গাজী আরিফ মান্নান
তপু বিকাল হলেই বন্ধুদের সঙ্গে টইটই করে ঘুরে বেড়ায়। তার দুষ্ট বন্ধুর সংখ্যাও কম নয়! বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াবে পাখির ছানার খোঁজে। স্কুল ছুটির পর একদিন ঘুরতে ঘুরতে পাশের গ্রামের জঙ্গলের ভেতর চলে যায়। সেখানে ঢুকে দেখতে পেল বিভিন্ন প্রজাতির পাখির অভয়ারণ্য। তপুরা এদিক ওদিক তাকিয়ে সাবধানে পা ফেলে যাতে পাখিরা উড়ে না যায়। হঠাৎ তপুদের নজরে পড়লো একটি লাল সবুজ টিয়াপাখির উপর, তারা দেখতে পেল টিয়াপাখিটি উড়ে এসে একটি ডালে বসছে। তপুর বন্ধুরা সাবধান হয়ে টিয়াপাখিটির গতিবিধি লক্ষ্য করে, কিছুক্ষণ পরে দেখতে পেল পাখিটি একটি গাছের গর্তে ঢুকে পড়ছে। তপুরা অনেকক্ষণ তাকিয়ে দেখল পাখিটি বের হয় কিনা, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েও পাখিটি বের হচ্ছে না দেখে হতাশ হয়ে পড়ল। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে দেখে তারা ফেরার তাড়া অনুভব করে। বন্ধুদের পরামর্শ মতে সিদ্ধান্ত নিল আগামীকাল আবার আসবে পাখির বাসায় বাচ্চা আছে কিনা দেখতে। তারপর সবাই একসঙ্গে বাড়ি ফিরে এলো। তপু বাড়ি ফিরেও টিয়াপাখির কথা মনে মনে ভাবছে। সে চিন্তা করে বাসায় যদি পাখির ছানা থাকে, তা ধরে বাড়িতে নিয়ে এসে খাঁচায় লালনপালন করবে। পরদিন স্কুল ছুটির পরপরই তারা বাড়িতে না গিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সোজা পাশের গ্রামের বনটিতে চলে গেল। বনের ভেতর ঢুকে তারা কালকের গাছটির আশপাশে দাঁড়িয়ে সতর্ক অবস্থানে দাঁড়িয়ে রইল। একটু পরেই টিয়াপাখিটি উড়ে এসে বাসার সামনে একটি ডালে বসে। টিয়াপাখির ঠোঁটে কিছু একটা খাবার রয়েছে বুঝা যাচ্ছে, তার মানে ভেতরে পাখির বাচ্চা রয়েছে। বন্ধুরা এ ওর দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই আনন্দিত হয়! পাখিটি বাসার ভেতরে ঢুকতেই কিচিরমিচির শোনা গেল, বাচ্চাগুলো খাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে এতক্ষণ। একটু পরে দুটো টিয়াপাখি উড়াল দিয়ে চলে গেল, তার মানে এখন বাসায় বাচ্চারা ছাড়া আর কেউ নেই! এবার তপু গাছে উঠার জন্য তোড়জোড় শুরু করে, তখন বন্ধুরা তাকে ধীরেসুস্থে উপরে উঠতে বলে। তপু কাঁধের ব্যাগ নিচে রেখে উপরের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে গাছ বেয়ে উঠতে থাকে। গাছে উঠে পাখির বাসা থেকে সামান্য দূরে একটি ডালের উপর বসে থাকে। পরে উঁকি দিয়ে বাসার ভেতর পাখির ছানাদের দেখার চেষ্টা করে। আরেকটু সামনে এগিয়ে বাসার কাছে গেল, ভেতরে হাত দিয়ে দেখল ৩টি ছানা রয়েছে। এবার গাছের গর্তের ভেতর থেকে একটি ছানা বের করে হাতে নিয়ে একেবারেই হতাশ! এখনো পাখির ছানাদের পালক গজায়নি! ছানাগুলো অনেক ছোট তাই এগুলো বাড়িতে নিয়ে আসা যাবে না। তপু উপর থেকে বন্ধুদের বললে তারাও হতাশ হয়ে যায়। এরপর তপু গাছ থেকে আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসে। বন্ধুরা মিলে পরামর্শ করল আর কয়েকদিন পর ছানাগুলোর আরেকটু পালক গজাবে, তখন না হয় ছানাগুলো নিতে আবার আসবে। এই বলে সবাই একসঙ্গে বাড়ি ফিরার জন্য পা বাড়ায়। আরেকটু হাঁটলে বন থেকে বেরিয়ে আসবে- তখনই ঘটলো বিপত্তি! সামনে দাঁড়িয়ে এক বিশাল দৈত্য হুঙ্কার দিয়ে বলল, তোরা কেন এখানে এসেছিস? তখন তপুরা আমতা আমতা করে বলল- আমরা এখানে ঘুরতে এসেছি। এবার দৈত্য বলল মিথ্যা কথা বলছিস কেন? আমি এতক্ষণ তোদের গতিবিধি খেয়াল করছি, তোরা পাখির ছানা ধরতে এসেছিস। তখন তপু বলল, বনে ঘুরতে এসে পাখিদের দেখে মায়ায় পড়ে গেছি, তাই ভাবছিলাম আমাদের যদি একটা ছানা থাকতো তাহলে বাড়িতে নিয়ে পুষতে পারতাম। দৈত্য আবার হুঙ্কার দিয়ে বলল, আমার রাজ্য থেকে একটা ছানাও ধরা যাবে না! ধরতে এলে তোদের সবাইকে আমি মেরে ফেলব! দৈত্যের কথা শুনে তপুরা তখন ভয়ে কাঁপতে থাকে। সবাই এখন জানপ্রাণ নিয়ে কীভাবে বাঁচতে পারে সে চিন্তাই করছে! সবাই দৈত্যের কাছে এসে এবারের মতো ক্ষমা চাইল। দৈত্য বলল, সবাই মিলে ওয়াদা কর, আর কোনো দিন বনবাদাড়ে ঘুরবি না, পাখি ধরবি না! তখন তপুরা সবাই ওয়াদা করল। এবার দৈত্য তখন বলল, ঠিক আছে- তবে যা, এবারের মতো মাফ করে দিলাম; আর কখনো আমার রাজ্যের তথা বনের মধ্যে থেকে একটা পাখিও ধরতে আসবি না। তপুরা হাঁপ ছেড়ে সবাই একসঙ্গে দ্রম্নত বন থেকে বেরিয়ে এলো।