গল্প

ছাত্র

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

শওকত নূর
পিপলু একজন ছাত্র। বয়স বেশি নয়, মাত্র সাড়ে ছয়। সে নিয়মিত স্কুলে যায়। তবে সব দিন নিজের ইচ্ছায় নয়, প্রায়ই যায় বাবা-মায়ের বকুনি খেয়ে। ক্লাসের পড়া বাসা থেকে সে শিখে যায় খুব ভালো মতো। কিন্তু শিক্ষক পড়া ধরলে কিংবা লিখতে দিলে ইচ্ছে হলে সে পড়া বলে কিংবা লেখে। ইচ্ছে না হলে মাথা নিচু করে বসে থাকে। শিক্ষক ধমক দেন না কিংবা বকাঝকা করেন না। খুব বিরক্ত হলে পিপলুর বাবা-মাকে তারা সে বিষয়ে ডেকে বলেন কিংবা ডায়েরিতে মন্তব্য লিখে দেন। এতে বিশেষ কোনো কাজ হয় না। কারণ পিপলুর বাবা পিপলুর পড়া না পারা নিয়ে মোটেও ভাবেন না। এই বয়সে পিপলু যে একজন ছাত্র, রীতিমতো ইউনিফরম পরে স্কুলে যায় আসে-এতেই তিনি খুব খুশি ও গবির্ত। কিন্তু তার এই খুশি ও গবের্র ফল হলো খুব খারাপ। অধর্বাষির্ক পরীক্ষায় পিপলু অধিকাংশ বিষয়ে ফেল করেছে। কারণ বাসা থেকে রীতিমতো প্রস্তুতি নিয়ে গেলেও পরীক্ষার খাতায় তার ইচ্ছে হলে সে লিখেছে : ইচ্ছে না হলে মাথা নিচু করে শুধু বসে থেকেছে। পরিদশর্ক-শিক্ষকের কথায় কোনো কাজ হয়নি। সে সাদা খাতাই জমা দিয়েছে। পরীক্ষায় ফেল করা নিয়ে পিপলুর কোনো মাথাব্যথা নেই। মায়ের হালকা বকুনি খেয়ে কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে থাকলেও এখন সে দিব্যি খাচ্ছে দাচ্ছে, হৈ-হুল্লোড়-নাচানাচি করছে। অনেকদিন পর পিপলুর বড় মামা এসেছেন ওদের বাসায় বেড়াতে। তিনি ওর মাথা হাতড়ে বললেন, তা বাবা, পড়ালেখা ঠিকমতো করো? হুম, পিপলু মাথা ঝেঁকে বলল। পরীক্ষা হয়ে গেছে বুঝি? হুম। কেমন রেজাল্ট? পিপলু কথা না বলে মাথা নিচু করে রইল। ওর মা এসে বললেন, কীরে, তুই মাথা নিচু করে আছিস কেন? পিপলু জবাব দিল না। ওর মামা বললেন, পরীক্ষার রেজাল্ট জানতে চাইলাম, কিন্তু কথাই বলছে না। কথা কী বলবে? পরীক্ষায় ভালো করলে তো? কী করেছে পরীক্ষায়? ফেল। ফেল করেছে? অলস, পড়ালেখা করে না বুঝি? পড়লেখা যথেষ্টই করে। তবে কী? নিবোর্ধ, মাথায় ধরে না বুঝি কিছু? তা-ও না, ভাইয়া। ওর বুদ্ধিও বেশ, তবে...। তবে কী? পরীক্ষার খাতায় মন চাইলে লেখে, মন না চাইলে সাদা খাতা জমা দিয়ে আসে। যেন পরীক্ষা কোনো ব্যাপারই নয়। ও বুঝতে পেরেছি। এভাবে চললে ও বড় হতে পারবে না। যদি পরীক্ষার খাতায় ঠিকঠাক মতো লেখে তো বড় হতে পারবে, নচেৎ নয়। মামার কথায় পিপলু যেন নড়ে উঠল। ফ্যালফ্যাল করে চাইল ওর মামার আপাদমস্তকে। এ সময় মোবাইল ফোনে কল এলে হেঁটে বারান্দায় চলে যান ওর মামা। পিপলু গোমড়া মুখে পড়ার ঘরে চলে যায়। মোবাইলে কথা শেষ হলে পিপলুর মা পিপলুর মামাকে বলল, জানিস ভাইয়া, পিপলুটার বড় হওয়ার খুব শখ। ভালো কথা। তা কী হতে চায় ও, ডাক্তার- ইঞ্জিনিয়ার, না অন্য কিছু? সে রকম বড় না। মানে? তোকে ক’দিন আগে টিভিতে সাক্ষাৎকার দিতে দেখে বায়না ধরেছে তোর মতো বড় হবে। ওর বাবা সেদিনই বাধ্য হয়ে মাকের্ট থেকে তোর মতো টাই আর ব্যাগ কিনে এনেছে। টাই পরিয়ে, তোর মতো করে কঁাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে সাক্ষাৎকারও নিতে হয়েছে। তবেই ক্ষান্ত হয়েছে। বুঝলি তো কী রকম বড় হতে চায় ও? বয়স্ক মানুষের মতো বড়। পিপলুর মাযের কথা শেষে পিপলুর মামা হো হো করে হেসে ওঠেন। শব্দ শুনে পিপলু পড়ার ঘর থেকে দরজায় এসে দঁাড়ায়। কিছু না বুঝে দরজা লাগিয়ে দেয়। মাস তিনেক পর পিপলুর বাষির্ক পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। পিপলু পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। খবর শুনে পিপলুর মামা খুশি হয়ে পিপলুর জন্য একটা টাই ও একটা ব্যাগ পাঠিয়েছেন। সেসব নিয়ে পিপলু বড় মানুষ সেজে দিন ভর আনন্দ করছে। ওর বাবা এখন অন্য রকম গবির্ত। তিনি সারাক্ষণ ভাবছেন পিপলু একজন ছাত্র।