গল্প

ভূতের নাম ইমলি

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

দিলরুবা নীলা
চিক চিক চিক চিক সুঘ্রাণ চারদিক মন ভরে খেতে চাই একখানা যদি পাই নাকা নাকা কণ্ঠে ছড়া কাটতে শুনে চমকে ওঠে মিতু আর ওর মা। কে? মিতু জোরে বলে ওঠে। কে আবার, বুঝতে পারছিস না। ওটা ভূত। কত করে বললাম, রাতের বেলা তেলে ভাজা পিঠা বানাতে নেই। তাও আবার উঠানে বসে। মেয়ের জেদ কত। এক্ষুনি পিঠা খেতে হবে। মিতুর মা রাগে গজগজ করতে থাকে। ভূত! কী বলো মা। ভূত আবার কোথায়। কিছুই তো দেখতে পারছি না। মিতু বড় বড় চোখ করে আশপাশে তাকায়। কিন্তু কিছুই দেখতে পায় না। মিতুর মা পিঠা ভাজা শেষ করে হাঁড়ি-পাতিল সব গুছিয়ে মিতুকে নিয়ে ঘরে চলে আসে। মিতু তার ঘরের জানালা খুলে বসে। পিঠা খেতে খেতে অংক বইটা খুলে বসে। মিতু ক্লাস ফোরে পড়ে। কিন্তু লেখাপড়ায় একদম আগ্রহ নেই তার। ওর প্রজাপতি হতে ইচ্ছে করে। প্রজাপতিরা কী সুন্দর উড়ে উড়ে বেড়ায়। ওদের নিশ্চয়ই কোনো লেখাপড়া নামক বিশ্রি ব্যাপারটা নেই। আহা যদি প্রজাপতি হতে পারতাম! মিতু বইয়ে মাথা রেখে কল্পনা করে সে যেন এক নীল প্রজাপতি তার পাখায় লাল লাল ছোপ। সে উড়ছে আর উড়ছে। আবার নাকা নাকা কণ্ঠে ভূত ছড়া কাটতে থাকে। চিক চিক চিক চিক সুঘ্রাণ চারদিক মন ভরে খেতে চাই একখানা যদি পাই মিতু বই থেকে মাথা তোলে। কে? আমি। আমাকে তুমি চিনবে না। আমার নাম ইমলি ভূত। আমাকে একটা পিঠা দেবে? আহা! ইমলিভূত আমার সামনে এসো। সামনে না এলে পিঠা দেব কীভাবে? আমাদের তো মানুষের সামনে যাওয়া নিষেধ। আমাদের দেখে মানুষরা ভয় পায় কিনা- তাই! আমি মোটেও ভয় পাব না। তুমি এসেই দেখ। ইমলি মিতুর সামনে এসে দাঁড়ায়। মিতু জানালা দিয়ে ইমলির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। ইমলির বয়স মিতুর মতোই ৯ কিংবা ১০ হবে। লম্বা-লম্বা চুল। গায়ের রং মিতুর চেয়েও ফর্সা, কিন্তু ইমলির একটা অদ্ভুত জিনিস আছে। তার কপালে বিশাল একটা চোখ। মিতু মনে মনে ভাবে হয়তো এই চোখ দেখেই ভূতদের মানুষ ভয় পায় কিন্তু মিতুর মোটেও ভয় লাগছে না বরং চোখটা দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। মিতুর মনে হচ্ছে, ইমলির চোখ যেন এক বিশাল সাগর। মিতু সামনে রাখা বাটি থেকে পিঠা ইমলিকে দেয়। ইমলি মনের আনন্দে পর পর তিনটা পিঠা খেয়ে ফেলে। ধন্যবাদ মিতু! তুমি একটু ভালো মেয়ে। একটু ভালো মেয়ে মানে? মিতু অবাক চোখে তাকায় ইমলির দিকে। একটু মানে হচ্ছে, তুমি খুব ভালো মেয়ে না, অল্প ভালো মেয়ে। অল্প ভালো কেন? অল্প ভালো এজন্য যে, তুমি লেখাপড়া করতে চাও না। লেখাপড়া করলেই তুমি ভীষণ ভালো মেয়ে হতে পারবে। তুমি ঠিকই বলেছ ইমলি, আমার মোটেও পড়তে ইচ্ছে করে না। আমার প্রজাপতি হতে ইচ্ছে করে। তোমার কি পড়তে ইচ্ছে হয়? মিতু জানতে চায়। আরে আমার আবার লেখাপড়া কী? পড়তে চাইনি বলেই তো ভূত হয়ে গেছি। এখন বুঝতে পারছি ভূত হওয়ার যন্ত্রণা। তোমার লেখাপড়া নেই? মিতু অবাক! না কোনো লেখা পড়া নেই। আসলে মানুষকে ভয় দেখানো ছাড়া তেমন কোনো কাজেও নেই। না পারি তোমাদের মতো মজার মজার পিঠা খেতে, না পারি খেলাধুলা করতে। দিনভর ঘুমিয়ে থাকি। রাত হলে মানুষকে ভয় দেখাই এটাই কাজ। এ কাজ করতে আমার একটুও ভালো লাগে না। আমার লেখাপড়া করতে ইচ্ছে করে। লেখাপড়া করলে কত নতুন নতুন তথ্য জানা যায়। সবার ভালোবাসা পাওয়া যায়। কত ভালো ভালো উপহার পাওয়া যায়। হুম! তা ঠিক। তিন বছর আগে আমি তখন ক্লাস ওয়ানে পড়ি। পরীক্ষায় ফাস্ট হওয়ায় আমাকে মা, বাবা, চাচা, নানু সবাই অনেক উপহার দিয়েছিল। সে সব এখন স্বপ্ন। পড়তেই মন চায় না, ফাস্ট হতে পারি না। উপহারও পাই না। বাদ দাও আমার কথা এখন বল তুমি ভূত হলে কী করে? সে এক করুণ কাহিনী। আমিও ছিলাম তোমার মতো। একটুও পড়তে চাইতাম না। বই দেখলেই মেজাজ বিগড়ে যেত। বার বার পরীক্ষায় ফেল করতে করতে হঠাৎ একদিন দেখলাম, আমার দুটো চোখের জায়গায় একটা চোখ, আর আমি হয়ে গেছি ভূত। আমি সবাইকে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কেউ আমাকে দেখতে পাচ্ছে না। ভূত রানী আমাকে ডেকে বলল আজ থেকে তুমি ভূত। ইমলির বুক- চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। আমি এখন যাই- মিতু, তুমি মন দিয়ে লেখাপড়া কর। আমি চাই তুমি মানুষ হও। ভূত হওয়ার মতো যন্ত্রণা আর নেই। এই মিতু- কী হচ্ছে এসব? বই খুলে না পড়ে বইয়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিস। জানালাটাও খোলা। ভূতে ধরবে তো। মায়ের ডাক শুনে লাফ দিয়ে ওঠে মিতু। চারিদিক তাকিয়ে কোথাও ইমলিকে দেখতে পায় না। মনে পড়ে যায় সব কথা। মিতু পড়ায় মন দেয়। সে ভূত হতে চায় না। হঠাৎ তার মনে হয় আচ্ছা ইমলি কি সত্যিই এসেছিল? না এসে থাকলে পিঠার বাটিতে পিঠা কই? বাটিতে সে খাওয়ার পরও তিনটা পিঠা ছিল।