গল্প

এক যে ছিল কোকিলরাজ্য

প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

এস আই সানী
সে এক সময়ের কথা। গ্রাম থেকে বেশ দূরে ছিল গভীর এক বন। বনটা ছিল নানান জাতের বড় বড় বৃক্ষ আর লতাপাতায় ছাওয়া। গাছগাছালির পরিমাণ ছিল অধিক। যেন ঠাসাঠাসি করে বেড়ে উঠেছে গাছেরা। দূর থেকে অন্ধকারের মত লাগত বনটাকে। সেই বনে বাস করত কিছু কাক আর কিছু কোকিল। কাক আর কোকিল আলাদা জাতের হলেও তারা ছিল একই বর্ণের। তাই মিলেমিশে তারা একসঙ্গে থাকত। অবশ্য ফিঙেপাখির বর্ণও একই। তবে ফিঙেরা পাখিদের রাজা হওয়ায় তারা কাক-কোকিলদের সঙ্গে থাকত না। তারা থাকত আরও দূরে, আরেক বনে। কাক-কোকিলদের বনে একটা অদ্ভুত নিয়ম ছিল। আর তা হচ্ছে, সেখানে অন্যকোনো পাখি বাস করতে পারত না। বনটা আগে শকুনদের দখলে ছিল। শকুনরা ছিল খুবই বাজে স্বভাবের। তারা শুধু শুধু অনাসৃষ্টি করত সে বনে। বনের আশপাশে অন্যকোনো পাখি ঘুরতে এলে তারা তাদের ওপর হামলে পড়ত। একদিন একটি কাকের ছানা আরেকটি কোকিলের ছানা উড়তে বেরিয়েছিল। নতুন উড়তে শিখেছিল তারা। তাই মনের আনন্দে উড়তে উড়তে বনটির পাশে চলে গিয়েছিল। তখন দুষ্ট শকুনরা তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঠুকরে ঠুকরে তাদের রক্তাক্ত করে। সে খবর কাক-কোকিলদের কানে পৌঁছালে তারা একজোট হয়ে উড়ে যায় বনের পাশে। চারদিক থেকে ঘেরাও করে বন। তারপর শকুনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। শুরু হয় যুদ্ধ। তুমুল যুদ্ধে পরাজিত হয় শকুনরা। তাদের তাড়িয়ে কাক-কোকিলরা বন দখল করে নেয়। যুদ্ধে যাওয়ার সময় কাক-কোকিলরা অন্য পাখিদেরও তাদের সঙ্গী হওয়ার আহ্বান করে। কিন্তু কোনো পাখিই শকুনদের ভয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়নি। আর এ জন্যই তারা তাদের বনে অন্য পাখিদের বাস করতে দিত না। তবে সবার বেড়িয়ে যাওয়ার অধিকার ছিল। অন্য পাখিরা তাই দু-একদিনের অতিথি হয়ে এখানে বেড়াতে আসত। বনে ছিল দুটি অংশ। একটি পূর্বে, অন্যটি পশ্চিমে। পূর্বাংশ ছিল কোকিলদের রাজ্য, আর পশ্চিমবনে বাস করত কাকেরা। পূর্ববনে নানাজাতের ফুল ফুটত। ফুলের সুরভিতে সদা ম-ম করত বাগান। দূর-দূরান্ত থেকে দলে দলে ভ্রমর আর রংবেরঙের প্রজাপতি উড়ে আসত। উড়ে উড়ে মনের আনন্দে ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াত তারা। ফুলের সঙ্গে দোস্তি গড়ত, সখাসখীর ভাব জমাত। ফুলেরাও প্রজাপতি আর ভ্রমরাদের ভালোবেসে বুকে টেনে নিত, সৌরভে মোহিত করে রাখত সবসময়। মৌমাছিরাও অনেক দূর থেকে পালা করে ঝাঁকবেঁধে আসত এই ফুলের বনে। পরম আদরে ফুলেরা তাদেরও স্বাগত জানাত। তারপর নিজেদের সবটুকু মধু উতলে দিত তাদের মুখে। ফুলে ফুলে উড়ে মধু নিয়ে মৌমাছিরা ফিরে যেত মৌচাকে। শুধু কি তাই? দখিন হাওয়া আছড়ে পড়ত ফুলের বনে। তারপর সে হাওয়া ফুলের সুরভি নিয়ে বয়ে যেত পাশের গাঁয়ে। ঘ্রাণে ভরিয়ে দিত গাঁয়ের পরিবেশ। ফুলের গন্ধে বিভোর হতো গাঁয়ের মানুষ। পথিকরা বনের পাশে এসে থমকে দাঁড়াত। মনোহারী ফুলের বিচিত্র সুবাসে প্রাণ জুড়াত। ঠিক তখনই কোকিলরা তাদের সুমিষ্ট কণ্ঠে সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে ভরিয়ে তুলত চারিপাশ। দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ত মোহনীয় সে সুর। কোকিলের সে কুহুগানে হৃদয় ভরাত পথিকজন। কিছুদিন পরে কাকেরা একটা বুদ্ধি বের করল। আর সে বুদ্ধিমাফিক প্রতিদিন তারা পূর্ববন থেকে ফুল আর মধু নিয়ে আসত। এতে কোকিলরা কোনো আপত্তি করত না। কেননা, কাকদের এমন কাজে পূর্ববনের ফুল-মধু একটুও কমত না। বরং আরও বেশি হারে ফুলেরা ফুটে উঠত। আরও বেশি করে মধু তৈরি করত। এর সব কৃতিত্ব ছিল কোকিলদের মধুর কণ্ঠের কুহুতান। কাকেরা যখন পূর্ববনের ফুল-মধু লুটে নিত, তখন কোকিলরা মিষ্টি সুরে গান গাইত। সে গানের সুরে বিমোহিত হয়ে ঘুমন্ত কুঁড়িরা চোখ মেলে তাকাত। ফুল হয়ে ফুটে উঠত। তারপর পাগল করা সুবাসে ভরিয়ে তুলত বনের পরিবেশ। আর সে সুবাসে ব্যাকুল হয়ে ছুটে আসত প্রজাপতি, মৌমাছি আর ভ্রমর। আছড়ে পড়ত দখিন হাওয়া। থমকে দাঁড়াত পথের পথিক। একসময় এ রহস্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয় কাকেরা। মনে মনে তারা বড্ড খুশি। তাদের রাজ্যও ফুলে ফুলে এবার শোভিত হবে। ভ্রমরা আসবে। অলিরা গাইবে। প্রজাপতি নাচবে। স্বপ্নে বিভোর কাকদের চোখে ঘুম নামে না খুশিতে। খুশিখুশি মনে একদিন তারা সভা ডাকে। সমস্ত কাক সভাস্থলে এসে পৌঁছালে জানিয়ে দেয়া হয়, তারাও এখন থেকে কোকিলদের মতো ডেকে বেড়াবে। তাদের মতো গান গাইবে। গান গেয়ে ফুল ফোটাবে। প্রজাপতি-মৌমাছি আনবে। সমৃদ্ধ করবে তাদের পশ্চিমবন। যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ। কোকিলের মতো কাকেরাও গান গাওয়া শুরু করে। গান গাইতে গাইতে সারাবন ঘুরতে থাকে। কিন্তু ঘটে তার হিতে বিপরীত। কাকেরা কোকিলদের মতো গাইতে তো পারেই না, বরঞ্চ তাদের কর্কশ 'কা-কা' ধ্বনিতে পশ্চিমবনে যে ফুলগুলো ছিল, তার সবই ঝরে যায়। যে কটা প্রজাপতি উড়ে বেড়াত, ভয় পেয়ে তারাও পালিয়ে যায়। যে মৌমাছিগুলো তাদের বাগানজুড়ে গুনগুন করে গান গাইত, ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তারাও উধাও হয়ে যায়। আর এদিকে পথিকরাও তাদের কর্কশ স্বরে মহাবিরক্ত হয়ে তাদের ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। নির্বোধ কাকদের এমন বোকামি দেখে কোকিলরা মুখটিপে হাসে। অন্যদিকে ফুল, প্রজাপতি আর মৌমাছিদের হারিয়ে, সেই সঙ্গে পথিকের ছোড়া পাটকেলে আহত হয়ে কাকেরা ভীষণ অসহায় বোধ করতে থাকে। তার ওপর আবার কোকিলদের এমন উপহাসের হাসি। কাটাঘায়ে এ যেন নুনের ছিঁটা। তাদের সব রাগ গিয়ে পড়ে কোকিলদের ওপর। ভীষণ ক্ষেপে যায় তারা। মনে মনে ভাবে, তারা এর উত্তম প্রতিশোধ নিয়ে ছাড়বে। এমনটা ভেবে মনটাতে সান্ত্বনার পরশ বুলিয়ে স্ব-স্ব বাসায় চলে যায় তারা। এভাবে কেটে যায় দিন কয়েক। আহত কাকেরা আস্তে আস্তে সুস্থ হয়। কিন্তু তাদের মনের অসুখ সারে না। অপমানবোধের ক্ষত রয়ে যায় মনে। কোকিলদের ওপর প্রতিশোধের নেশায় তখনও টগবগ করে জ্বলতে থাকে তারা। এর ক'দিন পর কাকেরা জরুরি সভা ডাকে তাদের রাজ্যে। কী উপায়ে প্রতিশোধ নেয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে। সভায় উপস্থিত সব কাক এক এক করে তাদের মতামত ব্যক্ত করে। কিন্তু কারোটা মনঃপুত হয় না। সবশেষে শক্ত-সামর্থ্য এক যুবক কাক উঠে দাঁড়ায়। সে বলে, তারা পূর্ববনের সব ফুল ঝরিয়ে দেবে। প্রজাপতি আর মৌ পোকাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেবে। সবুজ লতাপাতা সব বিনষ্ট করে দিয়ে পূর্ববনের সৌন্দর্য ধুলোর সঙ্গে মিশিয়ে দেবে। যুবক কাকটির এমন পরামর্শে সবাই বাহ্বা দিয়ে ওঠে। ডানা ঝাপটে তাকে সাধুবাদ জানায়। সবার সমর্থন পেয়ে যুবক কাকটি খুশিতে কয়েকবার 'কা-কা' করে ডেকে ওঠে। কিন্তু সবাইকে থামিয়ে দিয়ে ওপাশ থেকে একটা বৃদ্ধকাক টলতে টলতে উঠে দাঁড়িয়ে খুক-খুক করে বারকয়েক কেশে শ্লেষ্মাজড়ানো কণ্ঠে বলে, 'কিন্তু কোকিলের কণ্ঠ রোধ করবে কে? তারা তো গান গেয়ে আবারও ফুল ফোটাবে। ভ্রমর আনবে। প্রজাপতি আনবে। আবার ভরে উঠবে তাদের রাজ্য।' বৃদ্ধ কাকের এমন যুক্তিতে সভাজুড়ে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। কারও মুখে কোনো রা থাকে না। সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ বৃদ্ধ কাকের দিকে। এভাবে অনেকক্ষণ কেটে যায়। কেউ কথা বলে না। সবাই চিন্তিত। শেষে সভাপ্রধান দাঁড়কাক সেদিনের মতো সভা মুলতবি ঘোষণা করে। আর এ বিষয়ে সবাইকে বেশি বেশি ভাবনা-চিন্তা করে একটা সমাধান বের করতে বলে। দু'দিন কেটে যায়। পরদিন আবারও সভা বসে কাকদের। এক এক করে সবাই হাজির হয় সভাস্থলে। সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করে সভাপ্রধান দাঁড়কাক কে কী উপায় খুঁজে পেয়েছে তা পেশ করতে আহ্বান করে। দাঁড়কাকের আহ্বানে ধূসর রঙের মাঝবয়সী একটি কাক উঠে দাঁড়ায়। পায়ের আঙুল দিয়ে দু'বার মাথা চুলকে বলে ওঠে, 'মহামান্য! আমার কাছে একটি উত্তম প্রস্তাব আছে। যদি অভয় দেন, তাহলে আমি তা সবার সামনে পেশ করতে আগ্রহী।' দাঁড়কাক অভয় দিলে সে বলতে শুরু করে, 'মহামান্য! যেহেতু আমরাই এ বনের অধিপতি, আমরাই পরিচালনা করি এ বনকে, সেহেতু আমরা যা ইচ্ছা তা করতে পারি। আমরা চাইলেই যখন-তখন যে কোনো নিয়ম-নীতির পরিবর্তন ঘটাতে পারি। আমরা চাইলে নতুন নিয়মও সৃষ্টি করতে পারি।' এ পর্যন্ত বলে একটু দম নেয় ধূসরকাক। অন্যান্য কাকেরা একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। তারা ঠাহর করতে পারে না ধূসরকাক কী বলতে চাচ্ছে। শেষমেশ আগ্রহ নিয়ে ধূসরকাকের প্রতি দৃষ্টিপাত করে তারা। ধূসরকাক আবার বলতে শুরু করে, 'মহামান্য! এই মুহূর্তে আমার মাথায় যে বুদ্ধিটা লাফালাফি করছে, তা হচ্ছে- একটি নতুন রুল জারি করা। আর সেই রুলটি হচ্ছে, এ বনের ভাষা হবে একটিই। আর তা হলো- আমাদের ভাষা 'কা-কা'। কোকিলদের এখন থেকে আর তাদের ভাষায় কথা বলতে দেয়া হবে না। তাদের কথা বলতে হবে আমাদের ভাষায় কা-কা করে। তাহলে অল্পদিনেই তাদের পতন হবে। তাদের রাজ্যের সৌন্দর্য বিলীন হবে।' অবশেষে সব কাকের প্রাণে প্রশান্তি আসে। তারা কোকিলদের ছোটো করার একটি উপায় পেয়েছে। মনের এ প্রশান্তি নিয়ে সেদিনের মতো বাসায় ফেরে তারা। পরদিন বনজুড়ে ঘোষণা করা হয়, এ বনের ভাষা হবে একটিই, এবং তা হচ্ছে কা-কা। বনে বসবাসকারী সবাইকে কা-কা ভাষায় কথা বলতে হবে। এর বাইরে অন্যকোনো ভাষা এ বনে চলবে না, চলতে দেয়া হবে না। দাঁড়কাক পূর্ববনে উপস্থিত হয়ে কোকিলদের মধ্যে ঘোষণা করে, 'কা-কা, একমাত্র কা-কা'ই হবে এ বনের রাজ্যভাষা।' দাঁড়কাকের এমন নীতিহীন সিদ্ধান্তে কোকিলরা তৎক্ষণাৎ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা এমন অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়। তাদের মাতৃভাষা কেড়ে নেয়ার অধিকার কাকদের নেই। ক্ষোভ আর প্রতিবাদের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে পুরো কোকিলসমাজে। তারা এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। তারা এর প্রতিবাদে পথে নামার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন বনজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। বনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কাকসৈন্যদের মোতায়েন করা হয়, যাতে কোকিলরা কোনো ধরনের প্রতিবাদ-সমাবেশ করতে না পারে। কিন্তু রাগে-ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা কোকিলরা তাদের মুখের ভাষা ফিরে পাওয়ার দাবিতে জরুরি অবস্থা ভেঙে প্রতিবাদমিছিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা রংবেরঙের ফুলের রেণু দিয়ে বুকে, পিঠে, কেউবা ডানায় লিখে নেয় বিভিন্ন শ্লোগান। 'রাজ্যভাষা কুহু চাই', 'মায়ের ভাষা ফেরত চাই', 'কোকিলের ভাষা কুহুকুহু', 'কাকের ভাষা মানি না' এমন নানান শ্লোগানে তারা তাদের বুক-পিঠ সাজিয়ে মিছিল নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কপাল তাদের বড়ই খারাপ। তাদের মিছিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্র্ধর্ষ কাকেরা। হামলা চালায়। তাদের হামলায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে পাঁচ-পাঁচটি তাজা কোকিল। রক্তে ভেসে যায় বনের নরম মাটি। নিহত হয় বেড়াতে আসা আরও একটি নিরীহ বাচ্চাপাখি। আহত হয় আরও অনেকে। নিষ্ঠুর কাকরা তবুও ক্ষান্ত হয় না? তারা ছত্রভঙ্গ মিছিল থেকে ধরে নিয়ে যায় কয়েকটি কোকিলকে। মুহূর্তের মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। পূর্ববনের সমস্ত কোকিল বেরিয়ে আসে একযোগে। তাদের চোখে বন্যহিংস্রতা, দৃষ্টিতে যেন গোলাবারুদ। শান্তিপ্রিয় কোকিলরা হয়ে ওঠে হিংস্র শ্বাপদ। সমস্ত কোকিলের একজোট এবং এমন হিংস্রতা মনোভাব দেখে কাকেরা ভয়ে পূর্ববন ছেড়ে পালিয়ে যায় তাদের পশ্চিমবনে। কিন্তু থেমে থাকে না পূর্ববনের কোকিলরা। তারা তাদের নিরপরাধ ভাইদের অন্যায়ভাবে হত্যার বিচার আর গ্রেপ্তারকৃত কোকিলদের মুক্তি এবং মাতৃভাষা ফিরে পাওয়ার দাবিতে মুহুর্মুহু মিছিল করে। একটানা কুহুকুহু স্বরে কাঁপিয়ে তোলে পুরো বন। ঘেরাও করে কাকরাজ্য। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় বনের সমস্ত প্রজাপতি, ভ্রমর আর মৌমাছি। অন্যজাতের পাখিরাও আসে দলে দলে। এই অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যায় কাকেরা। তাদের মনোবল ভেঙে যায়। ভীষণভাবে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে তারা। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার আশঙ্কাও জাগে মনে। শেষে কোকিলদের দাবি মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। পরদিন কাকেরা বন্দি কোকিলদের মুক্তি দেয়। নিহত কোকিলদের হত্যার সুষ্ঠুবিচারের আশ্বাস দেয়। আর সেই সঙ্গে 'কুহু'কে পূর্ববনের মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আরও ঘোষণা করে যে, আজীবন কোকিলরা তাদের কুহুকুহু ভাষায় গান করুক, কথা বলুক, তাতে কাকেরা আর কখনোই হস্তক্ষেপ করবে না। কাকদের এমন ঘোষণায় নিমেষেই বিজয়ের পুলক বয়ে যায় কোকিলদের মনে। বিজয়ের আনন্দে মধুর কলতানে মুখর করে তোলে চারিপাশ। মাতৃভাষায় ডাকতে পারার স্বাধীনতা পেয়ে একটানা কুহুকুহু কলতানে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে ডানা ঝাপটে তারা ফিরে চলে তাদের কোকিলরাজ্যে, তাদের আপন ঠিকানায়।