একাত্তরের স্মৃতি

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

সাদিয়া আফরোজ নাবিলা
স্কুল ছুটির দিনগুলো খুব ভালোই কেটে যায় ফারুকের। সপ্তাহে কয়েকদিন ছুটি পাওয়া গেলে কি মজাটাই না হতো! ও আনমনে ভেবেই চলে। ততক্ষণে সাদ্দাম এসে ওর পাশে বসে, ও সম্বিত ফিরে পায়। -আগামীকাল তো স্কুল ছুটি। কি করবি? পস্ন্যান করেছিস? -হঁ্যা। একটা ফুটবল ম্যাচে নাম দিয়েছি আগামীকাল। সারাদিন খেলাতেই কাটবে। সাদ্দাম খানিকটা রাগ দেখিয়ে বলল, -আমার নামটাও দিতে পারতি। -দিয়েছি তো রে বাবা! রাগ করার কি আছে? এখন চল, একটু ঘুরে আসি। সাদ্দামের মুখে আনন্দের প্রভা ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তেই। - আচ্ছা, চল। ওরা দুজন পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে ওরা পৌঁছে যায় শান্তাদের বাড়িতে। উঠোনজুড়ে মানুষের ভিড় দেখতে পেয়ে থমকে যায় দুজনই। শান্তার দাদা বিরতিহীনভাবে চিৎকার করছে। শান্তাসহ ওর মা দাদাকে চাইলেও সান্ত্বনা দিতে পারছে না কোনোক্রমেই। -আমার রাইফেলটা দে। জলদি দে। ওই যে পাকিরা চইলা আসছে। আমার এখন যাইতে হইব। আমারে ছাইড়া দে। তার এহেন কথায় অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে পড়লেও ফারুক-সাদ্দাম ভুলে যায়নি একাত্তরে শান্তার দাদার সেই বীরত্বগাথা লড়াইয়ের কথা। প্রতিদিন সন্ধ্যার আজানের পর ওরা মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে আসতো শান্তাদের উঠোনে। যুদ্ধের সেই সব রোমাঞ্চকর গল্প শোনার লোভে ওরা দাদার চারদিকে ঘিরে বসতো। তবে আজ হঠাৎ কি হলো দাদার? শান্তা করতে দ্বিধা করলো না ফারুক, -দাদার কি হয়েছে চাচি? -মাথায় ভূত চাপছে। মুক্তিযোদ্ধা ছিল তো, মার্চ এলেই তার মাথা এলোমেলো হয়ে যায়। হাতে যা পায় তা নিয়াই বাগানের দিকে ছুটতে থাকে। এইগুলা তো ভ্রম। এখন তো আমরা স্বাধীন দেশেই আছি, তাই না? এটা যেন তোমাগো দাদা ভুলেই যায়। ভাবে এখনো বুঝি পাক হানাদারটা এ দেশেই আছে। তার দিকেই আসতেছে! এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে অতঃপর থামলেন শান্তার মা। যেন অনেকটা হালকাবোধ করছেন। সাদ্দাম ও ফারুকের মন খারাপ হয়ে গেল মুহূর্তেই। যুদ্ধের কথা বলতে বলতে প্রায়ই দাদা উদ্ভ্রান্তের মতো তাকিয়ে থাকতেন বাগানটার দিকে। এ বাগানেই নাকি তার বাবাকে গুলি করে মেরেছিল পাক বাহিনীরা। যে স্মৃতি দাদা আজও ভুলতে পারেন না। দুজনে গিয়ে দাদার পাশে কিছুক্ষণ বসে থাকে চুপটি করেই। তারপর মুখ খোলে ফারুক। -আমাদের যুদ্ধের গল্প শোনাবে না, দাদা? কালই তো ২৬ মার্চ। তাকাও আমাদের দিকে! আকস্মিক শান্ত হয়ে উঠে বসেন দাদা। জানতে চাইলেন, কাল ২৬ মার্চ? সেই উদ্ভ্রান্ত চাহনি তার মধ্যে তখনো বিদ্যমান।