বৃক্ষের জীবন

প্রকাশ | ০৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

ঝুমা আক্তার
মা-বাবার আদরের একমাত্র ছেলে ইরাত। ইরাত নামটাও খুব আদর করেই রাখা হলো মা-বাবার নামের সঙ্গে মিলিয়ে তার নামকরণ করা হয় ইরাত। মায়ের নাম ইরা আর বাবার নাম তন্ময়। ইরাত এবার ক্লাস টুতে ভর্তি হলো। লেখাপড়ায় বড্ড পাকা। পরীক্ষার খাতায় নাম্বার কত পাবে এটাও অগ্রিম হিসেব করে বলে দেয়, বাবা আমি এই বিষয়ে এত পাব ঠিক যত বলে ততই হয়ে যায় তার রেজাল্টে নাম্বার। কী ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রই না ইরাত! ইরাতের অজানা বিষয়ে জানার আগ্রহ প্রবল। বাবাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে এটা কীভাবে হলো? ওটা কীভাবে হলো? ইরাতের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে তন্ময় বাবু মাঝেমধ্যে বিরক্ত হয়ে যান। একদিন বিকাল বেলা তন্ময় বাবু আর ইরাত বাড়ির পাশে হাঁটাহাঁটি করছেন। গাছ-গাছালিতে সেজে আছে প্রকৃতি। ইরাত অবাক দৃষ্টিতে দেখতে লাগল বাংলার সুন্দর দৃশ্য! গাছে গাছে ফুটেছে নানান রকম ফুল। হঠাৎ ইরাতের চোখে একটা বড় আমগাছ পড়ল। আমগাছটি আমে পরিপূর্ণ হয়ে মাটির দিকে ঝুলে আছে। যেন গাছটি লজ্জিত হয়ে মাটির দিকে নুয়ে পড়ছে। আমগাছের এমন দৃশ্যটি দেখে ইরাত তার বাবাকে বলে বাবা আমগাছটি ফলে পূর্ণ অথচ তার কোনো অহংকার নেই, সে নিজেকে বড় না করে বরং মাটির দিকে নত করে রেখেছে। কিন্তু মানুষের টাকা বাড়ি, গাড়ি হলে মানুষ সমাজে নিজেকে বড় করে উপস্থাপন করে গরিবকে হেয় চোখে দেখে নিজেকে সবার থেকে শক্তিশালী মনে করে। ইরাতের মুখে এমন গভীর ভাবনার কথা শুনে বাবা বললেন, বৃক্ষ অন্যের উপকার করেই তার জীবন ধন্য ফুল দিয়ে, ফল দিয়ে, শাখা ও ছায়া দিয়ে মানুষের সেবা করে যায় এতেই বৃক্ষের জীবন ধন্য,গাছ সর্বদা মানুষের কল্যাণে কাজ করে যায় এমনকি গাছ নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে আমাদের সাহায্য করে। আর মানুষ তো মানুষই বৃক্ষের সঙ্গে মানুষের তুলনা করা যায় না। মানুষ খোঁজে নিজের স্বার্থ আর বৃক্ষ সর্বদা অন্যের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়। ইরাত বাবাকে বলে বাবা আমিও বৃক্ষের মতো জীবন গড়ব পরের উপকারে নিজেকে বিলিয়ে দেবো এতেই আমার জীবন সার্থকতা পাবে। তন্ময় বাবু ইরাতকে বলেন বাবা তোর মতো যদি সবার এমন চিন্তা-ভাবনা থাকত! তাহলে বদলে যেত আমাদের সমাজ। গরিব ধনীর পার্থক্য থাকত না অসহায় মানুষ না খেয়ে মরতো না। একেবারেই বদলে যেত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি। শিক্ষার্থী বানিয়াচং, হবিগঞ্জ