গল্প

একজন রাজার দুঃস্বপ্ন

প্রকাশ | ১০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

দিলরুবা নীলা
ভয়ানক এক দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙে রাজা হারুন-অর-রশীদের। তিনি বিছানায় ওঠে বসেন। এই ভয়ানক দুঃস্বপ্নের কারণ তিনি বুঝতে পারেন না। স্বপ্নের ব্যাখ্যার জন্য তিনি ডেকে পাঠান রাজ জ্যোতিষী খলিল উলস্নাহকে। জ্যোতিষী খলিল উলস্নাহ হন্ততন্ত হয়ে রাজ দরবারে প্রবেশ করেন। মহারাজ আমাকে তলব করেছেন? তলব না করলে আপনি আসতেন? বলুন মহারাজ আপনার স্বপ্নের কথা। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে। মহারাজ হারুন-অর-রশীদ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলতে লাগলেন। ঠিক ভোর রাতের দিকে আমি স্বপ্নে দেখলাম- আমি পেছন দিকে ফিরে আমার প্রিয় ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। স্বপ্নের মধ্যেই আমি বুঝতে পারছিলাম এ ভীষণ দুঃস্বপ্ন। আপনিই বলুন, পেছন দিকে ফিরে কেউ ঘোড়ায় চড়ে? না মহারাজ পেছন দিকে মুখ দিয়ে কেউ-ই ঘোড়ায় চড়ে না। বাস্তবে আপনিও চড়তেন না। শুধু স্বপ্ন বলেই এ কাজ সম্ভব হয়েছে। এখন বলুন রাজ জ্যোতিষী এ স্বপ্নের মানে কী? রাজ জ্যোতিষী মৃদু হেসে বললেন, আপনি চিন্তিত হবেন না এ তেমন কঠিন দুঃস্বপ্ন নয়- যতটা আপনি ভাবছেন। তবে এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা আপনাকে একা বলতে হবে। সভায় বলা সমীচীন হবে না। ঠিক আছে, রাজ জ্যোতিষী। আপনি আমার শয়নকক্ষে চলুন। ওখানে গিয়েই শুনব আমার স্বপ্নের মানে। রাজ জ্যোতিষী মহারাজের শয়ন কক্ষে ঢুকলেন এবং বলতে লাগলেন। মহারাজ, আপনার স্বপ্নের মানে হলো- আপনার রাজসভায় আপনি ছাড়া সবাই মূর্খ। একদল বুদ্ধিহীন মন্ত্রী দিয়েই আপনি রাজ্য শাসন করছেন। আপনার স্বপ্নের এটাই ব্যাখ্যা। এক্ষুনি বেরিয়ে যান রাজ জ্যোতিষী। আজ থেকে আপনাকে রাজ জ্যোতিষীর পদ থেকে নিষ্কৃৃতি দেওয়া হলো। জ্যোতিষীর কথা শুনে মহারাজ চিৎকার করে উঠলেন। রাজজ্যোতিষী বললেন, আমি কিছু ভুল বলিনি মহারাজ। আপনার স্বপ্নের এটাই ব্যাখ্যা। আপনি ছাড়া এ রাজ্যের সব মন্ত্রীই মহামূর্খ। এ কথা শোনে রাজা রেগে গিয়ে বললেন, কে আছ, এই অপদার্থ জ্যোতিষীকে এক্ষুনি রাজ্য থেকে বের করে দাও। আমাকে বের করে দিতে হবে না মহারাজ আমি এমনিতেই চলে যাচ্ছি। ভীষণ মন খারাপ করে রাজ জ্যোতিষী চলে যান রাজ্য ছেড়ে। রাজা রাজ্যে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করে দিলেন তার স্বপ্নের মানে যদি কেউ বের করে দিতে পারে তাকে রাজ জ্যোতিষীর পদ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে নানারকম উপঢৌকনও। রাজার ঘোষণা কানে গেল জ্যোতিষী হীরালালের। তিনি এ সুযোগ হাতছাড়া করলেন না। ঝটপট করে পৌঁছে গেলেন রাজ দরবারে। মহারাজ আমি জানি, আপনার স্বপ্নের মানে। মহারাজের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে বলেন জ্যোতিষী হীরালাল। সত্যি আপনি বলতে পারবেন, আমার স্বপ্নের মানে? মহারাজ উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন জি জনাব, বলতে পারব। বলুন তাহলে। এ স্বপ্নের মানে হলো আপনার রাজ দরবারে যতজন মন্ত্রী আছে তাদের চেয়ে আপনি অধিকতর বুদ্ধিমান। আপনার মন্ত্রীরা যদি আপনার মতো বুদ্ধিমান হতো তাহলে আপনার রাজ্যের আরও উন্নতি হতো আপনার রাজ্যের সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ত। বাহ্‌, খুব সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন আপনি। আজ থেকে আপনিই হবেন আমার রাজ জ্যোতিষী। জ্যোতিষীর ব্যাখ্যা মতো রাজা তার রাজ্যের সব মন্ত্রীকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দিলেন এবং রাজ্যের বুদ্ধিমান এবং অধিকতর শিক্ষিত লোকদের মন্ত্রী বানালেন। সুযোগ্য মন্ত্রীরা তার রাজ্যের উন্নতি করতে লাগলেন। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ল রাজা হারুন-অর-রশিদের সুনাম। একদিন জ্যোতিষী খলিলুলস্নাহ গোপনে দেখা করলেন রাজ জ্যোতিষী হীরালালের সঙ্গে। রাজ জ্যোতিষী, আমি কি মহারাজের স্বপ্নের ভুল ব্যাখ্যা করেছিলাম? রাজ জ্যোতিষী বললেন, একদমই না। আপনার ব্যাখ্যাটাই আমি একটু ঘুরিয়ে বলেছি মাত্র। একই কথা শুধু বলার ভঙ্গিতে খারাপ কিংবা সুন্দর হয়ে যায়।