তুলির হাতে নতুন শাড়ি

প্রকাশ | ১০ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

জাহিদ হাসান রানা
অতি দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় তুলির। তার বাবা অন্যের জমিতে কাজ করে টানাটানি করে সংসার চালায়। আর তার মা লোকের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে। তুলিদের পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। তবুও তুলির বাবা-মা তাকে খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করায়। তুলি এবার দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠল। তুলি লেখাপড়ায় ভালোই। তার বাবা-মা সারাদিন বাড়িতে থাকে না। তুলিকে সকালে বিদ্যালয়ে দিয়ে যে যার কাজে যায়। তুলি সারাদিন বিদ্যালয়ে থেকে ৪টায় বাড়িতে চলে আসে। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তার বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যায়। আবার সন্ধ্যায় তার বাবা-মা বাড়িতে এলে তাকে খেলার মাঠ থেকে নিয়ে আসে। তুলি হাত-মুখ ধুয়ে বিদ্যালয়ের বাড়ির কাজ শেষ করে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে। এভাবে দিন যাচ্ছে তুলির। চৈত্র মাস শেষের দিকে। তুলির বিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে অনুষ্ঠান হবে। তার বন্ধুরা বৈশাখের নতুন নতুন পোশাক কিনেছে। কেউ কেউ আবার রং কিনেছে। বন্ধুরা মিলে রং খেলবে। তুলি বাড়িতে গিয়ে তার বাবাকে বলল, 'বাবা, পহেলা বৈশাখে আমাদের স্কুলে অনুষ্ঠান। আমাকে শাড়ি আর রং কিনে দাও।' তার বাবা বলল, 'মা, এখন আমার হাতে টাকা নেই। আর তোকে রং আর শাড়ি কিনে দেয়ার সামর্থ্য আমার নেই। তোকে রং কিনে দেবো।' তুলি মন খারাপ করে বলল, 'বাবা, তাহলে থাক লাগবে না।' তার বাবা বলল, 'মারে তোকে পরের বার সুন্দর শাড়ি কিনে দেবো। মন খারাপ করিস না।' তুলি কোনো কথা না বলে তার ঘরে চলে গেল। রাতে তুলির বাবা-মা ঘুমোতে গিয়ে একে অন্যকে বলতে লাগল, কেন যে সৃষ্টিকর্তা আমাদের এত গরিব করলেন কে জানে। তুলির মা বলল, 'হঁ্যা গো, আমার কাছে কিছু জমানো টাকা আছে। তুমি কারও কাছে কিছু টাকা ধার নিয়ে তুলির জন্য শাড়ি নিয়ে এসো কাল। তুলির বাবা মাথা নেড়ে হঁ্যা সূচক উত্তর দিল। সকালে তুলি মন খারাপ করে আগেই একা একা বিদ্যালয়ে গেল। বিদ্যালয়ে ছুটি হলে বাড়িতে গিয়ে শুয়ে পড়ল। সেদিন খেলতেও গেল না সে। সন্ধ্যায় তুলির বাবা বাড়িতে এলো। সঙ্গে লাল টুকটুকে একটি শাড়ি, কিছু রং আর মিঠাই। তুলিকে ডেকে তার বাবা শাড়ি, রং আর মিঠাই তার হাতে দিল। তুলি তো মহাখুশি। তার আনন্দ মনে হয় আর ধরে না। সে তার বাবাকে বলল, 'বাবা তুমি খুব ভালো।' বৈশাখের পহেলা দিনে তুলি শাড়ি পরে বাড়িতে শুঁটকি মাছের ভর্তা দিয়ে পান্তা খেয়ে স্কুলে গেল। সেখানে সে তার বন্ধুদের সঙ্গে অনেক মজা করল। অনুষ্ঠান শেষে বিদ্যালয়ে ইলিশ দিয়ে পান্তা খেয়ে বাড়ি চলে এলো।